ব্রেক্সিট ইস্যুতে বিকল্প সব প্রস্তাব ভেস্তে গেল
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:০২ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ব্রেক্সিট ইস্যুতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপিদের আটটি প্রস্তাবের কোনটিই নিম্নকক্ষের ভোটে স্পষ্ট সমর্থন আদায় করতে পারেনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি কাস্টমস ইউনিয়নের প্রস্তাব, চুক্তি অনুমোদনের জন্য গণভোটের আহ্বান, নো-ডিল ব্রেক্সিটের প্রস্তাব থেকে শুরু করে ইইউয়ের সঙ্গে শুল্ক কাঠামো রক্ষা করে ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রস্তাব সবই বাতিল হয়ে যায়।
এই ফলাফলের কারণে ব্রিটেনের একদিনের নাটকীয় পরিস্থিতির অবসান হয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে যদি তার চুক্তি পাস হয়ে যায়, তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন।
অর্থাৎ পার্লামেন্টে ইইউ থেকে ব্রিটেনের প্রত্যাহারের চুক্তি পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন থেরেসা মে।
বুধবারের এই ভোটাভুটি ব্রেক্সিট ইস্যুতে পার্লামেন্টের এতদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করলেও কোনও নির্দিষ্ট অবস্থানে পৌঁছাতে না পারার ব্যাপারটিকে সমালোচকরা ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ব্রেক্সিট গণভোটের রায় অনুযায়ী চলতি বছরের ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়নের থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউয়ের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক কেমন হবে তেমন কিছু শর্ত নির্দিষ্ট করে একটি খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থন আদায় করতে পারেনি।
এরপর গত ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এমপিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এমন একটি চুক্তি পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেন। কিন্তু সেটাও পরাজিত হয়।
এখন তিনি তৃতীয়বারের মতো ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে উত্থাপন করতে চাইছেন। তবে তার আগে তিনি যথেষ্ট সংখ্যক এমপির সমর্থন নিশ্চিত করতে চান।
এবার থেরেসা মে নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ায় অনেক টোরি এমপি, তার চুক্তির প্রতি সমর্থন দিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেলেও ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন জানিয়ে দিয়েছে যে তারা এই চুক্তির বিরোধিতা করে যাবে।
থেরেসা মে টোরি দলের সদস্যদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আমাদের দেশ এবং আমাদের দলের জন্য যা সঠিক তা করার উদ্দেশ্যে আমি আমার দায়িত্ব আগে থেকেই ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন যে টোরি সাংসদরা তাকে আর ব্রেক্সিটের পরবর্তী আলোচনার নেতৃত্বে দেখতে চান না এবং তিনিও সেই পথেই দাঁড়াবেন না বলে জানান। তবে তিনি কমিটির সভায় তার পদত্যাগের কোনও দিনক্ষণ উল্লেখ করেননি।
যে আটটি বিকল্প প্রস্তাবে এমপিরা ভোট করছেন-
ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বিকল্পগুলো নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছিলেন ব্রিটিশ আইন প্রণেতারা। এর আগে পার্লামেন্টে ১৬টি বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও স্পিকার আটটি প্রস্তাব বেছে নিয়েছিলেন।
বিতর্কের পর আইন-প্রণেতাদের প্রত্যেকের সামনে আটটি বিকল্প প্রস্তাব সংক্রান্ত কাগজ তুলে দেওয়া হয়।
এরমধ্যে যে প্রস্তাবগুলোতে তাদের সম্মতি থাকবে, সেগুলোকে তারা ‘হ্যাঁ’ হিসেবে, আর যেগুলোতে তাদের আপত্তি থাকবে সেগুলোকে ‘না’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
কাস্টমস ইউনিয়ন - পক্ষে: ২৬৪ বিপক্ষে: ২৭২
নিশ্চিত গণভোট - পক্ষে: ২৬৮ বিপক্ষে: ২৯৫
১২ এপ্রিল চুক্তিহীনভাবে বেক্সিট বাস্তবায়ন - পক্ষে: ১৬০ বিপক্ষে: ৪০০
একক বাজার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব - পক্ষে: ১৮৮ বিপক্ষে: ২৮৩
ইএফটিএ এবং ইইএ সদস্যপদ - পক্ষে: ৬৫ বিপক্ষে: ৩৭৭
চুক্তিহীনতা এড়াতে অনুচ্ছেদ বাতিল করা - পক্ষে: ১৮৪ বিপক্ষে: ২৯৩
লেবার পার্টির প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট পরিকল্পনা - পক্ষে: ২৩৭ বিপক্ষে: ৩০৭
মল্টহাউজ প্ল্যান বি - পক্ষে: ১৩৯ বিপক্ষে: ৪২২
সবচেয়ে বেশি সমর্থন পাওয়া প্রস্তাবটি হল ক্রস পার্টি প্ল্যান, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক রক্ষণশীল দলের চ্যান্সেলর কেন ক্লার্ক। যেখানে ব্রেক্সিটের পরও ব্রিটেনের সাথে ইইউ এর শুল্কমুক্ত বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে।
ব্রেক্সিট সম্পন্ন হওয়ার পর টোরি নেতৃত্বের লড়াই হতে পারে বলে জানা গেছে। সেটা কবে নাগাদ হবে তা নির্ভর করবে রক্ষণশীল দলের ওপর।
টরি সদস্যদের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন।
ক্ষমতাসীন দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী আইন-প্রণেতাদের বিরোধিতার কারণে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দুই দফায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তি।
এই চুক্তি নিয়ে নিজ দল রক্ষণশীল দলের সংসদ সদস্যদেরও বিরোধিতার মুখে পড়ছিলেন তিনি।
তবে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা এবার তার চুক্তির পক্ষে নিজ দলের আইন-প্রণেতাদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এ ব্যাপারে তিনশ জনেরও বেশি টোরি সাংসদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি এই কক্ষের প্রত্যেককে চুক্তিটির প্রতি সমর্থন দেওয়া জন্য বলছি, যাতে আমরা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে পারি - যেন ব্রিটিশ জনগণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা একটি মসৃণ ও সুষ্ঠু উপায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে পারি।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ২৯ মার্চের পরিবর্তে ১২ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে ইউরোপীয় নেতারা।
থেরেসা মে’র চুক্তি অনুমোদন পেলে ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা ২২ মে পর্যন্ত বাড়াতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
তবে কোনও বিকল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলে ১২ এপ্রিলেই কোনও চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট সম্পন্ন করতে হবে।
সূত্র: বিবিসি
একে//