প্লাস্টিক বর্জ্যের বিকল্প
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৩১ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার
প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের যে ক্ষতি করছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার প্রকৃত কুফল ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা৷ ইন্দোনেশিয়ার এক কোম্পানি প্লাস্টিকের নানা বিকল্প কাজে লাগিয়ে বাস্তবসম্মত সমাধানসূত্র দিচ্ছে৷
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে জঞ্জালের এই স্তূপের আয়তন প্রায় ৩৫ হেক্টর৷ তা সত্ত্বেও সেই পাহাড়ে জায়গা হচ্ছে না৷ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ফলে দুর্গন্ধ অসহনীয় হয়ে উঠেছে৷ অনেক মানুষ সেই জঞ্জাল ঘেঁটে প্লাস্টিকসহ মূল্যবান বস্তুর খোঁজ করে৷
গ্রিনহোপ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সুগিয়ান্তো তান্দিয়ো বলেন, এটা হলো টাংগেরাং শহরের জঞ্জালের স্তূপ৷ প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার টন শক্ত বা নিরেট বর্জ্য এখানে আসে, প্রায় ১৫ থেকে ৩০ শতাংশই প্লাস্টিক৷
প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
সুগিয়ান্তো তান্দিয়ো প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন৷ তার কাছে জঞ্জালের এই পাহাড় কমানোরও পরিকল্পনা রয়েছে৷ প্লাস্টিক বর্জ্য পুরোপুরি পঁচে যেতে কমপক্ষে ৫০০ বছর সময় লাগে, যা পরিবেশের জন্য বিপর্যয় বয়ে আনে৷ তান্দিয়ো নিজে একজন ইঞ্জিনিয়ার৷ তিনি প্রচলিত প্লাস্টিকের এমন বায়োডিগ্রেডেবল বিকল্প সৃষ্টি করছেন, যা সহজেই পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে পারে৷
সুগিয়ান্তো তান্দিয়ো বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের গড় হার মাত্র ৮ শতাংশ৷ এমনকি ১০ শতাংশও নয়৷ বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক রিসাইক্লিং-এর হার ১৫ শতাংশের মতো৷ তাই সেই হার বাড়াতে এখনও অনেক কাজ বাকি৷ তবে আমরা যাই করি না কেন, তা যথেষ্ট হবে না৷
একটি প্লাস্টিক ব্যাগ যতবারই পুনর্ব্যবহার করা হোক না কেন, সেটি শেষ পর্যন্ত এমন কোনও বিশাল জঞ্জালের স্তূপে গিয়ে পড়বে৷ প্লাস্টিকের পাহাড় প্রতিদিন বেড়ে চলেছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরও ফল বটে৷
দারিদ্র্য ও পরিবেশ
কিন্তু দারিদ্র্যও এই সমস্যায় ইন্ধন জোগাচ্ছে৷ ইন্দোনেশিয়ার অনেক মানুষ পথের ধারে ছোট স্টল থেকে মোড়কসহ পণ্য কেনেন, কারণ সেটা তাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে৷ প্যাকেজিং-এর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি চূড়ান্ত অপচয় বটে৷
সুগিয়ান্তো বলেন, প্রতিদিন তারা এটাই কিনতে পারে৷ একবার ব্যবহারের জন্য মোড়কের এই সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়? সব মোড়ক ডিগ্রেডেবল করে তোলাই আমাদের সমাধানসূত্র৷
সুগিয়ান্তো তান্দিয়ো বহু বছর ধরে বিকল্প মোড়ক নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তার গ্রিনহোপ কোম্পানি সহজলভ্য কাসাভা বা ম্যানিয়োক গাছের শিকড় থেকে নিঃসৃত ট্যাপিওকা নামের মাড় জাতীয় পদার্থ দিয়ে বায়োডিগ্রেডেবল পলিমার তৈরি করে৷ সেটি প্রক্রিয়াজাত করে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে কাজে লাগানো যায়৷
সুগিয়ান্তো তান্দিয়ো বলেন, ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম প্রধান খুচরা বিপণির জন্য কাসাভা-ভিত্তিক বাজারের থলে তৈরি করা হয়েছে৷
প্লাস্টিকের বিকল্প
গ্রিনহোপ প্লাস্টিকের বেশ কয়েকটি কার্যকর বিকল্প সৃষ্টি করেছে৷ এমনকি কুকুরের মলের জন্যও সম্পূর্ণ বায়োডিগ্রেডেবেল কৌটা তৈরি করেছে এই কোম্পানি৷
এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে কাসাভা চাষ হয়৷ সুগিয়ান্তো তান্দিয়ো বলেন, এই হলো কাসাভা গাছ, এটি মাটির নিচে বড় হয়৷ শুধু বের করে নিলেই চলে৷ লোকে শুধু কন্দ বের করে নেয়, যা স্টার্চের উৎস৷ গাছের কাণ্ড প্রায় ২-৩ মিটার দীর্ঘ হতে পারে৷ গাছের পাতা সালাদের মধ্যে খাওয়া যায়৷
কাসাভা সস্তা ও সুলভ৷ তার পুষ্টির মাত্রাও বেশি নয়৷ তাই অনায়াসেই অন্য কাজে ব্যবহার করা চলে৷ ইন্দোনেশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশে প্লাস্টিকের বিকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সেটাই গ্রিনহোপ সংস্থার অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ৷ পরিবেশবান্ধব সমাধানসূত্রের মূল্য সাধারণত একটু বেশি হয়৷
সুগিয়ান্তো তান্দিয়ো ও তার সহযোগী টমি চিপ্তাজায়া পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্বার্থের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে চান৷ টমি বলেন, আমরা যে টন টন প্লাস্টিক সৃষ্টি করেছি, তা আসলে বাস্তবে দূর হয় নি৷ চোখের সামনে থেকে সরে গেলেও তা উধাও হয়ে যায়নি৷ মহাসাগরের নিচে তা ভেসে বেড়াচ্ছে, অথবা কোনও আবর্জনার স্তূপের মধ্যে রয়েছে৷ উৎপাদনের সময় এই মূল্য ধরা হয়নি৷ আমরা অর্থনীতি ও কার্যকারিতা নিয়ে মশগুল হয়ে থাকি বটে, কিন্তু এ সব বস্তূর আসল পরিবেশগত মূল্য আমাদের দিতে হয় না৷
অপরিশোধিত তেল দিয়েই প্রায় ৯০ শতাংশ প্লাস্টিক তৈরি হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ প্লাস্টিক বর্জ্য কমাতে কিছু না করা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার কুফল ভোগ করতে হবে৷ শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, গোটা বিশ্বের জন্য প্লাস্টিকের বিকল্প খোঁজা প্রয়োজন৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
একে//