ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বার বার হেরে ফোর্বস ম্যাগাজিনে সেরাদের তালিকায় মোরশেদ মিশু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৪৫ পিএম, ৩ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার

স্কুল কলেজে কখনো তার রোল নাম্বার ৩০- এর মধ্যে আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করা তার পক্ষে সম্ভব হয় নি। স্বপ্ন দেখতেন ডিফেন্সে যোগ দিবেন। কিন্তু সেখানেও হেরে যান তিনি। এভাবে বার বার হেরে যাওয়া তরুণটি এবার ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় `থার্টি আন্ডার থার্টি` নির্বাচিত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় যে দু`জন বাংলাদেশী তরুণ ঠাঁই করে নিয়েছেন তাদের একজন মোরশেদ মিশু। তিনি নির্বাচিত হয়েছেন ‘মিডিয়া, মার্কেটিং অ্যান্ড অ্যাডভার্টাজিং’ ক্যাটাগরির সেরা ৩০ তরুণের তালিকায়। ইতোপূর্বে ‘দি গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে ধারাবাহিক কার্টুন একে দেশ-বিদেশে বেশ প্রশংসা পাচ্ছেন।

এই তালিকায় স্থান করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো, মোরশেদ মিশু`র কার্টুনের প্রভাব শুধু দেশে নয় বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃত। বাংলাদেশের অন্যতম স্যাটায়ার ম্যাগাজিন উন্মাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন আবদুল্লাহ আল মোরশেদ। যিনি মোরশেদ মিশু নামে পরিচিত।

মোরশেদ মিশু গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নির্মমতা আর বেদনার ছবিগুলোকে আশা আর আনন্দের বার্তায় পাল্টে দেন। এর ধারাবাহিকতায় শুরু হয় ‘গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ’ সিরিজ। মোরশেদ মিশুর ওই সিরিজ দ্রুত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর নজর কাড়ে। অন্যান্য দেশের কার্টুনিস্টরাও যোগ দেন এই চ্যালেঞ্জে। ফোর্বস ম্যাগাজিন মোরশেদ মিশুকে নিয়ে লিখেছে, যুদ্ধ আর সহিংসতা না থাকলে এই পৃথিবী কতটা সুন্দর হতে পারত, সেটাই কার্টুনের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন মোরশেদ মিশু।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় স্থান করে নেওয়ায় পর মোরশেদ মিশু তার নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, স্কুল জীবন বলেন কিংবা কলেজ জীবন, কোন পরীক্ষাতেই কখনো ১ম হওয়া তো দূরে থাক, রোল ১-৩০ এর মধ্যেও রাখতে পারতাম না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা বাদই দিলাম, সেটা তো শেষই করা হলো না। তা নিয়ে আফসোস নাই, কারণ তার আগে একটা দীর্ঘ সময় স্বপ্ন দেখে আসছি ডিফেন্সে যোগ দেয়ার আর দেশের জন্য গুলি খেয়ে মরে যাবার। ডিফেন্সে চান্স না পাবার মত জীবনে অসংখ্যবার ফেইলের মুখ দেখছি। হাল ছাড়ি নাই, শুরু করলাম কার্টুন আঁকা, সুযোগ পেলাম উন্মাদে আঁকার। আঁকতে আঁকতে টের পেলাম, কার্টুন এঁকেও দেশের জন্য কিছু করা সম্ভব। এই যে দেখেন, কার্টুন এঁকে বাংলাদেশের নাম ফোর্বস ম্যাগাজিনে তুলে এনেছি। Forbes 30 under 30 লিস্ট এর Media, Marketing & Advertising ক্যাটাগরিতে শীর্ষস্থানে নাম চলে এসেছে আপনাদের মোরশেদ মিশু’র।

আবেগঘন এই স্ট্যাটাসে মোরশেদ মিশু আরও লিখেন, "আমার অনুভূতি জানতে চান???
আন্তর্জাতিক মিডিয়া কিংবা প্ল্যাটফর্মে আমার নামের সাথে বাংলাদেশের নাম যতবার আসে, আমার আনন্দ লাগে। নিজের কাজ দিয়ে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারতেছি প্রাপ্তিটা এখানেই। আর সেই সাথে আমার জুনিয়র যেসকল কার্টুনিস্ট বা আর্টিস্ট আছেন, তাদেরকেও সামান্য হইলেও অনুপ্রাণিত করতে পারতেছি। এর চেয়ে ভালো অনুভূতি আর হইতে পারে না।"

প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে মোরশেদ মিশু বলেন, “আমাদের সোসাইটিতে তো আঁকাআঁকি বা কার্টুনকে কিংবা আর্টিস্ট হওয়াটাকে প্রফেশন হিসেবে প্রায়োরিটি দেওয়া হয় না। এই প্রফেশনটাকে তো মূল ধারার প্রফেশন হিসেবে ধরা হয় না। এই ধরনের রিকগনিশনগুলো হয়ত নতুন যারা এই কাজে আগ্রহী হবে, তাদের জন্য ইনসপিরেশন হিসেবে কাজ করবে।” মোরশেদ মিশু আরও বলেন, কার্টুনকে কেবল এক শিল্প মাধ্যম হিসেবে না দেখিয়ে একটি ‘সার্বজনীন ভাষা’ হিসেবে দেখাতে চাই, যে ভাষা বিশ্বের সব ভাষার মানুষই বুঝতে পারে, সমাজের অনেক অবক্ষয়, অনেক সমস্যার কথা অনেক সহজে যেখানে বলা যায়।"

প্রসঙ্গত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় এবার ঠাঁয় পেয়েছে বাংলাদেশী দুই তরুন। এরা হলেন কার্টুনিস্ট আবদুল্লাহ আল মোরশেদ। যিনি মোরশেদ মিশু নামে পরিচিত। অন্যজন হলেন রাইড শেয়ারিং সেবা পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী হুসাইন এম ইলিয়াস। উদ্ভাবন আর উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ত্রিশ বছরের নিচের যে সকল তরুণরা ভূমিকা রাখছে তাদের তালিকায় উঠে এসেছে এই দুই তরুণ বাংলাদেশীর নাম।

আআ/এসি