মোদী বললেন, আমরা চৌকিদার! ভিড় থেকে সাড়া এল ‘চোর হ্যায়’!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:২৬ এএম, ৬ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার
আমরা সব চৌকিদার…এ পর্যন্ত বলে নরেন্দ্র মোদী যেই না একটু থামলেন, পিছন থেকে বছর বিশেকের এক যুবক বলে উঠলেন, ‘‘চোর হ্যায়।’’ মাথার পিছনে চটাস করে কষিয়ে থাপ্পড় দিলেন পাশের জন। চাপড়টা যিনি দিলেন, তার মাথায় ‘বিজেপি’ লেখা টুপি। জামার উপরে অনলাইনে অর্ডার করা ‘নমো এগেন’ জ্যাকেট।
কাঁচুমাচু মুখে থাপ্পড় খাওয়া যুবকটি বলেন, ‘‘টিভিতেই তো শুনেছি। মারছ কেন?’’ বলেই ভিড়ে মিশে যান। মোদীর সভায় একেবারে পিছনে, ভিড়ে মিশে থেকে কভার করার বাড়তি সুবিধা আছে। মঞ্চের সামনের দিকে ভিড়টার বরাবরের একটিই কাজ: ‘মোদী-মোদী-মোদী’। বাসে-ট্রেনে-ট্রাক্টরে আনা ভিড়। তাদের অনেকের গলায় ঝোলানো ‘ভিআইপি’ পাস। পিছন দিকটায় আমজনতা।
দূর থেকে ‘ছোট্ট’ মোদীকে দেখার একটাই উপায়। পেল্লাই এক-একটি এলইডি স্ক্রিন। জনতা তাতে দেখছেন, আর মাইকে শুনছেন। ভিড় এগোচ্ছে কি এগোচ্ছে না, মোদী নির্ঘাত বলবেন, ‘‘আর এগোনোর চেষ্টা করবেন না। যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন। আমিও আপনাদের দর্শন করতে পারছি না, আপনারাও আমাকে। চলুন, একে অন্যের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই।’’
মোদীকে দেখার উৎসাহে খামতি আছে, এমন নয়। সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা দুই টায়। পনেরো মিনিট আগেই মঞ্চের পিছন থেকে আলো জ্বালিয়ে তিনটি হেলিকপ্টার ধুলো উড়িয়ে ধেয়ে এল। হাতে হাতে মোবাইল উঁচিয়ে উঠল আকাশের দিকে। সকলেই হাত নাড়ালেন মোদীর দিকে। ‘আমিও চৌকিদার’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে লাফাতে শুরু করলেন অনেকে। যদি মোদী দেখেন।
মঞ্চে আসতেই মোদী বোঝাতে চাইলেন, আকাশ থেকেই জনে-জনে সকলকে দিব্য দেখেছেন। এসেই বললেন, ‘‘বিজেপির হয়ে ক্ষমা চাইছি। প্যান্ডেল ছোট হয়ে গিয়েছে। ভিতরের থেকে বাইরে দ্বিগুণ লোক। এই প্রবল রোদেও। শপথ নিচ্ছি, আপনাদের এই কষ্ট সুদ সমেত উন্নয়ন করে ফেরত দেব।’’
পাঁচ বছর আগেও ঠিক এমন কথাই লোকসভার প্রচারে বলতেন মোদী। মোদী রোদের কথা বলেছেন, সাদামাটা গ্রামবাসীরা এতেই খুশি। গত পাঁচ বছরে সুদ সমেত ফেরত দেননি কেন, এমন প্রশ্ন তাদের মনে আসেনি। কিংবা, এসেছে হয়তো।
ঘড়ি ধরে ঠিক পনেরো মিনিট। যে সময়টায় মোদী ব্যস্ত ছিলেন পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গি নিকেশের বাহবা কুড়োতে। আর কংগ্রেসের ইস্তাহারকে ‘ডকোসলা পত্র (ধোঁকা পত্র)’ বলে জঙ্গিদের প্রতি নরম মনোভাব দেখানোর অভিযোগ তুলে। ‘টুকড়ে-টুকড়ে গ্যাং’-এর প্রতি কংগ্রেসের প্রেমের কথা বলে।
তার আসার আগে বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানও ছিলেন অন্য নেতাদের প্রচারের হাতিয়ার। ব্যস! ওইটুকু শুনেই পিছনের ভিড় পাতলা হতে শুরু করে বাড়িমুখো। মোদীর টেলিপ্রম্পটারের পর্দায় তখনও আসল রাজনৈতিক আক্রমণের চিত্রনাট্যের অনেকটাই ভেসে ওঠা বাকি।
গত কালই সহারনপুরের দায়িত্বে থাকা আরএসএসের এক সক্রিয় সদস্য বলছিলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে তিরিশটির মতো আসন খোয়ানোর প্রবল আশঙ্কা। বিশেষ করে বুয়া-বাবুয়ার জোটের পর। জাতির সমীকরণ একমাত্র হিন্দুত্ব আর দেশভক্তির তাসেই মিটতে পারে।’’
সকালেই ‘চৌকিদার’ যোগী আদিত্যনাথ টুইট করেন, ‘‘মুসলিম লিগ একটি ভাইরাস। আর কংগ্রেস তাতে আক্রান্ত।’’ যোগীর নিশানা রাহুল গাঁধীর কেরলের কেন্দ্র হলেও উত্তরপ্রদেশেও তার প্রভাব ফেলতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যখন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ভোটের আর ঠিক ছয় দিন বাকি।
সহারনপুরে কংগ্রেসের প্রার্থী ইমরান মাসুদ গত ভোটে মোদীকে ‘বোটি বোটি’ টুকরো করার মতো কুকথা বলেছিলেন। এ বারেও তিনি প্রার্থী। কিন্তু গত ভোটের ওই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলেই জিভ কেটে বলেন, ‘‘আমি কি তেমন মানুষ?’’
ইমরান ভুলে যেতে চাইছেন। কিন্তু মোদী ভুলতে দিতে রাজি নন। আজও জনসভায় তুললেন ‘বোটি বোটি নেতা’-র কথা। বললেন, ‘‘কংগ্রেসের শাহজাদার এই প্রিয় পাত্র বোটি বোটির কথা বলেন, আর আমরা বেটি-বাঁচাও বলি। কংগ্রেসের ‘ধোঁকাপত্র’-এ মহিলাদের উপর রাক্ষুসে অত্যাচার হলেও জামিনের কথা বলা আছে।’’
মোদী তুললেন দাঙ্গার কথা, কৈরানায় হিন্দু পলায়নের কথা। অম্বেডকরকে অবহেলার কথা। আর নিশানা করলেন ‘বহেনজি’-কেও। গুঁজলেন আখচাষিদের বকেয়ার প্রসঙ্গ। যে চাষিরা কাল থেকেই ভিড় জমাচ্ছিলেন মোদীর সভাস্থলে। যোগীর আমলে এখন যাঁরা ‘গরুরও চৌকিদার’। যেতে যেতে মোদী ভরসা দিলেন, বকেয়া যাতে না হয়, তার পাকা ব্যবস্থা হচ্ছে। আপাতত ভোটের আগে সকলকে শপথ নিতে হবে চৌকিদার হওয়ার।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার
এমএইচ/