ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১

‘বল সব মিথ্যা’ বলে ছাত্রীর গায়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৬ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

ফেনীর সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা ওই শিক্ষার্থীকে বলেন, বল সব মিথ্যা। ২৭ তারিখের যৌন হয়রানি মিথ্যা। এটি বলবি। মামলা তুলে নিবি, তা না হলে তোকে মেরে ফেলব। এ কথা বলেই শরীরে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ওই ছাত্রীকে।

ঢামেক বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগের সামনে কথাগুলো বলছিলেন ওই শিক্ষার্থীর ভাই। তিনি বলেন, পৌরশহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদ্রাসায় পড়ে তার বোন। আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রও একই মাদ্রাসায়। গত মাসের ঘটনার পর থেকে একটু সাবধানেই চলত তারা। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে আমার বোনকে একা ছাড়তাম না। সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দিতাম। পরীক্ষা শেষে আবার সঙ্গে করে নিয়ে আসতাম।

ওই শিক্ষার্থীর ভাই বলেন, আজ আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা ছিল। প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাই। কিন্তু মাদ্রাসার গেটের দারোয়ান মোস্তফা আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয় না। আমার বোনকে একাই পাঠাই। ভেতরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কেউ একজন বলে আমার বোনকে কে বা কারা তিন তলার ছাদে নিয়ে মারধর করেছে।

বোনের গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনা বর্ণনা করে ওই ভাই বলেন, সেখানে গিয়ে বোরখা পরা চারজনকে দেখতে পাই। তাদের হাতে মোজা পরা ছিল। এর মধ্যে একজন মেয়েলি কণ্ঠে বলতে থাকে বল ২৭ তারিখের ঘটনা সব মিথ্যা। হুজুরের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিবি। নইলে তোকে মেরে ফেলব। আমার বোন তাদের কথায় রাজি না হওয়া বোরখা পরা একজন বোতল থেকে গ্লাসে পেট্রোল ঢেলে ছুড়ে মারে। পরে দিয়াশলাই জালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাকি তিনজন মেয়ে ছিল কি না জানি না।

পরে শিক্ষার্থীর চিৎকারে অন্য সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে আসে। প্রথমে অগ্নিদগ্ধকে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, সেখান থেকে ফেনী সদর হাসপাতাল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ভাই জানান, ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল। ২৭ তারিখের ঘটনার পর বহুবার মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি আসে। ওই মাদ্রাসে অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ্দৌলার আত্মীয় তুহিন পড়াশোনা করে। তুহিন ও দারোয়ান মোস্তফা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে বলে তাদের ধারণা।

ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর শরীরের ৭৫ শতাং পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ওই শিক্ষার্থীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে।

এসএইচ/