ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

বিজিএমইএ’র প্রথম নারী সভাপতি রুবানা হক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৫ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ১১:৩৬ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএ’র প্রথম নারী সভাপতি হয়েছেন মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক। শনিবার (৬ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত বিজিএমইএ’র নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে রুবানা হকের নেতৃত্বে সম্মিলিত ফোরাম প্যানেল। সম্মিলিত পরিষদের ও ফোরামের ২৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৬ জনই বিজয়ী হয়েছেন।

এর আগে বিজিএমইএ’র নির্বাচন সামনে রেখে সম্মিলিত পরিষদ এবং ফোরাম সমঝোতার মাধ্যমে যে প্যানেল জমা দেয় তাতে দলনেতা করা হয় ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হককে। ফলে, বিজিএমইএ’তে আগামী দুই বছর নেতৃত্ব দেবেন রুবানা হক।

ফোরাম থেকে ১৯ এবং সম্মিলিত পরিষদ থেকে ১৬ জন দিয়ে সম্মিলিত পরিষদ-ফোরামের সমঝোতার প্যানেল করা হয়।

এদিকে বিজিএমইএ’র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত বছরের জানুয়ারিতে স্বাধীনতা পরিষদ নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে এই পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যায়।

শনিবার সকাল ৮টায় ঢাকার কাওরান বাজারে বিজিএমইএ ভবনের নুরুল কাদের মিলনায়তনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোনও রকম বিরতি ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলে। সংগঠনটির মোট ভোটার এক হাজার ৯৫৬ জন। এর মধ্যে ঢাকায় এক হাজার ৫৯৭।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আজকের নির্বাচনে ঢাকায় ভোট দিয়েছেন এক হাজার ২০৪ জন এবং চট্টগ্রামে দিয়েছেন ২৮৮ জন।

নির্বাচনে সম্মিলিত ফোরাম ও স্বাধীনতা পরিষদ নামে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সংগঠনটিতে পরিচালকদের মোট পদ ৩৫টি। এর মধ্যে ঢাকায় ২৬টি ও ৯টি চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচনে ভোট হচ্ছে না। তারা সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ঢাকার ২৬ পরিচালক পদে দুই প্যানেলের ৪৪ প্রার্থী লড়ছেন। ২৬ পদে পূর্ণ প্যানেল দিয়েছে সম্মিলিত ফোরাম। এসব পদে স্বাধীনতা পরিষদের প্রার্থী ছিল ১৮ জন।

বিজিএমইএ নতুন কমিটির প্রধান হিসাবে রুবানা হক নতুন এ দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার চ্যালেঞ্জটা হবে, কী করে শ্রমিক ও মালিক একসঙ্গে কাজ করবো। অনাস্থার জায়গাগুলো আমরা করে দূর করবো।’

তিনি বলেন, দেশের পোশাক খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে যে ইমেজ সংকট রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো সেটি কাটিয়ে উঠতে। অনেকেই মনে করে, আমরা সবচেয়ে সস্তা। এই সস্তা কোনও ভাবেই ভালো না বলে আমি ও আমার পরিষদ মনে করে। আমরা বলতে চাই, প্রতিযোগিতা হলো সবচেয়ে ভালো। যদিও আমরা সম্মিলিতভাবে দরকষাকষির জায়গায় পৌঁছতে পারিনি। সবাই এ বিষয়ে একমত হতে পারিনি। এখনই সময় এসেছে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ নেওয়ার।

তিনি তৈরি পোশাক খাতের নিরাপত্তা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আপনারা জানেন শেয়ার বিল্ডিং মোটেও অ্যালাউড না। অথচ বহু চার লাইন, ছয় লাইন ফ্যাক্টরির শেয়ার বিল্ডিং রয়েছে। এখন আমাদের উচিত হবে, অন্তত এসব কারখানায় যেন ফায়ার ও ইলেক্ট্রিক সেফটিটা নিশ্চিত করা যায়। গার্মেন্ট সেক্টরে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে পারলে এবং গণমাধ্যম আমাদের সঙ্গে কাজ করলে এ খাতের হারানো ইমেজ অবশ্যই ফিরে আসবে ইনশাল্লাহ।

নবনির্বাচিত প্যানেলের সদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের কাছে বেশ ভালো মানের ফ্যাক্টরি রয়েছে। আমরা মনে করি, সেলফ মনিটরিংয়ের এখনই সময়। এটি দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত। দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ এ খাতের সঙ্গে জড়িত। আমরাই মূলত দেশের অর্থনীতির চালিকা হিসাবে কাজ করছি। সুতরাং আমাদের বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আমার কাছে স্বচ্ছতাও থাকবে। প্রতিশ্রুতি দিতে চাই, আমাদের প্যানেলের কাজের প্রতি নিষ্ঠার একটুও অভাব থাকবে না।

তিনি বলেন, দায়বদ্ধতার কথা যদি বলেন, আমার পুরো পরিষদ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে। আমার প্রয়াত স্বামী আনিসুল হক দুই বছরে দেখিয়ে গেছেন সবাইকে, কীভাবে পরিবর্তন আনতে হয়। তার মানে বদলানো সম্ভব। আমরাও সেটা পারবো। এজন্য আমাদের দায়বদ্ধতার কোনও প্রকার দ্রুটি দেখবেন না। তারপরও কোনও ত্রুটি-বিচ্চুতি থাকলে সেটা ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান থাকলো।

অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা অনেক করেছেন আমাদের জন্য। এজন্য আমরা খুবই কৃতজ্ঞ। কিন্তু এমন একটি সময়ে আমরা দাঁড়িয়েছি যেখানে সব গার্মেন্টগুলো পুণর্সংস্কার হয়েছে। এখন এসব কারখানার সংস্কার কীভাবে টেকসই করা যায়, সেগুলো দেখতে হবে।

‘আমরা মোটামুটিভাবে দরকষাকষি করতে শিখেছি, একটা গৌরবের জায়গায় দাঁড়াতে শিখেছি। আমরা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি, সবাই একসঙ্গে কাজ করি তাহলে ঘুরে দাঁড়াবেই এ শিল্প। যত চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন। কারণ চ্যালেঞ্জ যেমন আছে ঠিক একইভাবে সম্ভবনাও আছে। সবাই যদি একসঙ্গে কাজ করি, দু বছরে আমরা বহু কিছু পাল্টে দিতে পারবো।

আরকে//