দেহ-মন সুরক্ষার উপায়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৪৫ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার

স্রষ্টার দেয়া শ্রেষ্ঠ দান হলো এই মানব জীবন। জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করার জন্যে প্রথম প্রয়োজন সুস্থতা। সুস্থ দেহ-মন একজন মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এর সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকেই। আর এ দায়িত্ব সম্পর্কে যিনি যত সচেতন তার সুস্থতা তত বাড়ে, অন্যদিকে যিনি যত উদাসীন ও খেয়ালি, দিন দিন বাড়ে তার অসুস্থতা। এ যুগে রূপচর্চার ব্যাপারে আমরা যতটা মনোযোগী, স্বাস্থ্যচর্চার বিষয়ে আমরা অনেকটাই উদাসীন।
আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান পড়ানো হয় কিন্তু স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয় মৌলিক বিষয়গুলো পড়ানো হয় না। যে কারণে স্বাস্থ্যখাতে আমাদের ব্যয় সবচেয়ে বেশি। প্রকাশিত এক সংবাদে দেখা যায়, প্রায় ১৬.৫ কোটি মানুষের মধ্যম আয়ের এ দেশে ২০১৮ সালে ওষুধ বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে এ দেশে প্রতিবছর ৫২ লক্ষ মানুষ অর্থাৎ ৫২ লক্ষ পরিবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত বা নিঃস্ব হয়। প্রয়াত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও শিশুবন্ধু জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান স্যার বলতেন, এ যুগে মানুষ সারাজীবন যা রোজগার করে, জীবনের শেষ তৃতীয়াংশে এসে তা সে ব্যয় করে ডাক্তার, ওষুধ ও ক্লিনিকের পেছনে। বাস্তবতাও আসলে তা-ই। মূলত ভ্রান্ত জীবনদৃষ্টি থেকেই আজকের মনোদৈহিক স্বাস্থ্য জটিলতার উৎপত্তি। স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যাপারে আমরা যদি একটু যত্নশীল হতে পারি, তাহলে অনায়াসেই সুস্থতা নামক সেরা নেয়ামতকে আমরা উপভোগ করতে পারব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেকে যে ভালবাসতে পারে না, সে কাউকেই ভালবাসতে পারে না। আসলে নিজেকে ভালবাসা থেকেই শুরু হয় সকল ভালবাসার। নিজের দেহ-মনের প্রতি যত আমরা ভালবাসা অনুভব করব, তত এর যত্ন ও পরিচর্যা করতে উদ্বুদ্ধ হবো। এজন্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকেই। কাজে লাগাতে হবে আমাদের দেহ-মনের সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ছোট ছোট যত্ন, শৃঙ্খলা যেরকম সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলে, ঠিক তেমনি বিন্দু বিন্দু অযত্ন অবহেলা স্বাস্থ্য নষ্ট করে। এ নিয়ে একটি গল্প রয়েছে।
নিজের যত্ন নিজেকেই নিতে হবে’ এ সহজ বিষয়টি যদি কেউ নিয়মিতভাবে অগ্রাহ্য করে যান, তিনি অন্যকে সেবা দেয়ার সুযোগ হারাবেন। সময়ের সাথে সাথে তিনিও হয়ে পড়বেন অন্যের বোঝা বা দায়। কারণ নিজে ভালো না থাকলে অন্যকেও ভালো রাখা যায় না।
আমরা অধিকাংশ মানুষই সুস্থ থাকা অবস্থায় এটা উপলব্ধি করতে পারি না। যখন দেহ-মন অসুস্থ হয়ে আমাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখনই কেবল আমাদের হুঁশ হয়। যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন যত্ন নিই। অথচ অসুস্থ হওয়ার আগে আমরা যদি এর ১০ ভাগের একভাগও যত্ন নিতাম তাহলে হয়তো আমরা এত অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হতাম না। আমাদের অর্জিত কোনো বস্তু বা সম্পদ রক্ষার জন্যে আমরা কত না সচেষ্ট থাকি! কিন্তু এই সম্পদের তুলনায় অনেক মূল্যবান এই দেহের প্রতি আমরা কতটুকু সচেষ্ট? একটি পছন্দের সোনার নেকলেসের যে পরিমাণ যত্ন নেই কিন্তু যে দেহে সেই সোনার নেকলেসটি পরিধান করি তার যথাযথ যত্ন কি নিই?
সুস্থতা প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, দুটি নেয়ামত সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অসচেতন। একটি হচ্ছে সুস্থতা, অন্যটি হলো অবসর সময়। [বোখারী ]
পবিত্র বাইবেলে যীশু বলেন, ‘তোমরা কি জানো না, তোমাদের দেহ পবিত্র আত্মার মন্দির, তিনি তোমাদের মধ্যে বাস করেন, যা তোমরা প্রভুর কাছ থেকে পেয়েছ? তোমরা তো আর নিজেদের নও। “
আসলে একটি বাড়িকে সুরক্ষিত রাখতে যেমন বাড়ির কর্তা বা কর্ত্রীর লক্ষ রাখতে হয় যে, বাড়ির ভেতরে কী প্রবেশ করছে, তেমনি দেহ-মনকে সুরক্ষিত রাখতে গেলে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এই দেহ ও মনের ভেতরে কী প্রবেশ করছে। যখন রেস্টুরেন্টে বেশি করে খাচ্ছি তখন সেই খাবারের ওপর কিন্তু আমার নিয়ন্ত্রণ নেই। দেহের দেখ-ভালের দায় তখন নিজের হাত থেকে অন্যের হাতে ছেড়ে দিচ্ছি। আবার যখন কারো কটু কথায় মনে কষ্ট পাচ্ছি। তখন মনের ভেতরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে আমি অন্যের দেয়া ময়লাকে প্রবেশ করতে দিচ্ছি। মন সুরক্ষার দায়ভার কিন্তু তখন নিজের হাতে থাকছে না। আসলে সুস্থতার দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকেই।
সুস্থ থাকার জন্যে প্রয়োজন সুস্থ জীবনাচার। আমাদের জীবনাচারে কিছু কিছু পরিবর্তন আনতে পারলেই আমাদের সুস্থ থাকার ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। এজন্যে যেসব বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।
সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত দমের চর্চা করতে হবে। নিয়মিত বিজ্ঞান ভিত্তিক খাবার গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিতি ব্যায়াম করতে হবে। ছন্দায়ন পরিশীলন করতে হবে। ভাল মানুষের সাথে মিশতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। পরিবারিক বন্ধনকে আরো মজবুত করতে হবে। পরিবার কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে সবার মতামত গ্রহণ করতে হবে। সুস্থতার জন্যে নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা চালিয়ে যেতে।
টিআর/