ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

আমার প্রথম চাকরি জীবনের বৈচিত্র্যময় অস্থিরতা

আবু এন. এম. ওয়াহিদ

প্রকাশিত : ১১:০২ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ১২:০৩ পিএম, ১৬ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

মাঝে মাঝে বিকেল বেলা আমাদের আস্তানা থেকে দক্ষিণ দিকে একটু দূরে এক হাই স্কুলের মাঠে গিয়ে গ্রামের ছেলেদের ফুটবল খেলা দেখতাম- যতদূর মনে পড়ে, দু’একদিন নিজেও খেলতে নেমেছি। স্কুল চত্বরের মাঠে দৌড়াদৌড়ি, হৈ-হুল্লোড় ও খেলাধুলার আনন্দের চাইতে বড় আরেকটি জিনিস সেখানে আমার চোখে ধরা পড়েছিল যার ছাপ আজো মনে লেগে আছে। এতো বছর পরও সেই স্মৃতি আমি ভুলতে পারিনি! নিজের মাঝে সুখ-দুঃখের সঙ্গে তাকে লালন করে চলেছি!

এই স্মৃতি আর কিছু নয়, নিসর্গের নিষ্পাপ সন্তান, একটি বড় ও বুড়ো গাছকে ভালো লাগার স্মৃতি। বৃক্ষের বিরহ-এতো সুখেরই কথা, এখানে আবার দুঃখের কী হলো? হতে পারে বৈকি, যখনই মনে হয় তখনই ভাবি, ওই ছায়াদানকারী নিরপরাধ গাছটি আজও বেঁচে আছে, নাকি কারো কুড়ালের আঘাতে আঘাতে কাটা পড়ে চুলায় জ্বলে জ্বলে নিঃশেষ হয়ে গেছে! এমন ভাবনা আমাকে ব্যথিত করে, কষ্ট দেয়। আবার আনন্দও পাই, যখন কেবলই ভাবি, স্কুল ঘরের কোণায় বেড়ে ওঠা ঝাঁকড়াওয়ালা সেই বিশাল গাছটি গ্রামবাসীকে নিরন্তর ছায়া দিয়ে যাচ্ছে, মায়া দিয়ে যাচ্ছে, আর পাখিদের দিচ্ছে নিরাপদ নিরিবিলি আশ্রয়।

বৃক্ষটি কী জাতের ছিল, মনে নেই- হয়তো ‘বট’, নয়তোবা ‘করই’, তেঁতুলও হতে পারে। গাছের গোড়া ছিল স্কুল ঘরের পূব-দক্ষিণ কোণে, আর তার ঘন শীতল ছায়া পড়ত গিয়ে খেলার মাঠে। প্রথম দেখাতেই আমি গাছটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে এমন অসংখ্য অজানা মায়াময় ছায়াময় গাছ আছে, যাদের কথা সচরাচর চোখের আড়াল হলেই আমাদের মনের অড়ালে পড়ে যায়। আমার কাছে ‘জাবরা’-র সেই গাছটি একটি ব্যতিক্রম-ই বটে।

গ্রামটির পাড়ায় পাড়ায় বেড়াতে গিয়ে অন্য যে বিষয়টি আমি বিশেষভাবে লক্ষ করেছিলাম সেটা হলো, সেখানে দীঘি, পুকুর কিংবা জলাশয় নেই বললেই চলে। গোসল করতে হলে বসতে হতো হয়  টিউবওয়েলের নিচে অথবা ইঁদারার পাড়ে, আরেকটি বিকল্প ছিল বটে-বাজারে নদীর ঘাটে পানিতে নামা। আমরা নদীতে নেমে রাতের উজান-ভাটি দু’দিকে সাঁতার কেটে গোসল করে আসতাম। গোসল সেরে পানি থেকে উঠে আসার সময় পায়ে লাগত আঠাল মাটির কাঁদা আর ধুলি-ধূসরিত কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসার সময় মিহি ধুলোর পাউডার উঠত গিয়ে প্রায় হাঁটু পর্যন্ত। দেখা যেত, গোসল সেরে ঘরে ফিরে আসতে আসতে আবার গোসলের দরকার পড়ে গেছে। গ্রামে পানি ও পুকুরের  এতো আকাল কেন? সেই প্রশ্ন তখন আমার মনে একটুকুও জাগেনি। জাগলে অবশ্যই আমি ‘জাবরার’র একজন অতি নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত সাক্ষী হিসেবে আমাদের সবার প্রিয় ‘চাচা’কে জিজ্ঞেস করতে পারতাম। চাচাকেতো এ প্রশ্ন করিনি, এমন কি ‘ইয়াকুব’ ভাইকে না। ‘ইয়াকুব’ ভাই ছিলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি না থাকলে আমাদের সেবারের ‘জাবরা’ সফর অর্থহীন হয়ে পড়ত। তাঁর কথায় আবার ফিরে আসব পরে।

যদ্দূর মনে পড়ে, আমি দু’বার ‘জাবরা’-তে গিয়েছি। দ্বিতীয়বার সেখান থেকে ফিরে আসার পথে মানিকগঞ্জ শহরে ঢুকেছিলাম। এক চায়ের দোকানে বসে সবাই মিলে চা-মিষ্টি খেলাম। খেতে খেতে আমার দু’টো কথা মনে পড়ল। প্রথমত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজহার উদ্দিন নামে আমার এক সহপাঠী বন্ধু ছিল, তার বাড়ি মানিকগঞ্জ। মানিকঞ্জে এসেই আজহারের চঞ্চল চাহনী আমার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। সে যুগে সেলফোন থাকলে আজহারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে পারতাম! দ্বিতীয়টি আরও বিশদ বিবরণের দাবি রাখে। মানিকগঞ্জে এর আগে আমি কোনো দিন যাইনি, তথাপি মানিকগঞ্জ নিয়ে আমার শিক্ষাসংক্রান্ত একটি সুন্দর বাল্যস্মৃতি রয়েছে। চা খেতে খেতে সেই স্মৃতি এসে আমার মনকে বার বার নাড়া দিতে লাগল। সেটা আরও অনেক আগের, সেটা আমার হৃদয়ের আরও অনেক গভীরে প্রথিত! ঊনিশ শ’ ষাটের দশকের মাঝামাঝি। আমি তখন ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি। এই মানিকগঞ্জেই ছিল তৎকালীন ‘ইস্ট পাকিস্তান বাইবেল করেসপন্ডেন্স স্কুল’। এই স্কুলের সঙ্গে কিভাবে আমার যোগাযোগ হয়েছিল তা বিলকুল ভুলে গেছি, তবে তাঁদের একটি বই ‘লুকলিখিত সুসমাচার’ আমার হাতে এসে পৌঁছেছিল। এটা পড়ে পড়ে আমি সপ্তাহ দু’এক পর পর ডাকযোগে একসেট প্রশ্নের উত্তর জমা দিতাম। বাইবেল স্কুলের উদ্দেশ্য ছিল তরুণ ছেলেমেয়েদের মধ্যে খৃষ্টধর্মের প্রচার ও প্রসার। আমার আগ্রহ ছিল অন্যখানে।

আমি কয়েকদিন পর পর যেমন নতুন নতুন প্রশ্নোত্তরের খাতা জমা দিতাম তেমনি আবার লাল কালি দিয়ে পরীক্ষা করা এবং মার্কিং করা খাতাগুলো ফেরতও পেতাম। আর সেখান থেকেই উঠে এসেছিল ছিল আমার মনের যত আনন্দ! আমি সবগুলো হোমওয়ার্ক এসাইনমেন্টে ৯৮% ৯৯% ১০০% নম্বর পেতাম। বাহ! জীবনে কোনো পরীক্ষায়তো অমন করে নম্বর পাইনি। নম্বরের বেলা এই কোর্সগুলোর ফলাফল, ছাত্র হিসেবে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিল। আমি ভাবতে লাগলাম, তা হলে ক্লাসের পরীক্ষায়ও এরকম সফলতা আশা করা যায়। যদিও আমি তখনো এতো ভালো নম্বর কোনো পরীক্ষায় পাইনি, তথাপি ওই আত্মবিশ্বাস আমাকে লেখাপড়ায় অনেক বেশি মনোযোগী করে তুলল এবং আমার ক্লাস পরীক্ষার ফলাফলও দিনে দিনে ভালো হতে লাগল। এ থেকে আমি দ্বিতীয় আরেকটি উপকার পেয়েছিলাম - তা হলো, ওই বাইবেল ভুলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে পোস্ট অফিসের সঙ্গে আমার একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীকালে যার হাত ধরে ধীরে ধীরে সারা বিশ্বের সঙ্গে আমার সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হলো। বড় হয়ে কারণে অকারণে আমি সারা দুনিয়ার অসংখ্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং ছাত্রজীবনের শেষ দিন অবধি তা জারি রেখেছি। এতে আমার পয়সা খরচ হয়েছে বটে, কিন্তু ক্ষতি হয়নি। উপরন্তু নিয়মিত নিজেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করার একটি অনবদ্য সুযোগ পেয়েছিলাম এবং বলতে পারি সে সুযোগের আমি যথাযত সদ্ব্যবহারও করেছিলাম। তারই ধারাহিককতায়, ১৯৭৯ সালে অ্যাসিস্টেন্টশিপ নিয়ে কানাডার মানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি এবং পিএইচডি  করি। আমার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণে আমি সফল হয়েছি কিনা জানি না, তবে মানিকগঞ্জের ‘বাইবেল’ স্কুল যে মাঠ থেকে ‘মানিক’ কুড়োতে পারেনি সেকথা নির্দ্বিধায় বলাই যায়। আমাকে খৃষ্টান বানাতে পারেনি। আমার বড় ভাই এবং মক্তবের হুজুর, বাইবেল স্কুলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছিলেন। তাঁদের ভয়, আমি যদি খৃষ্টান হয়ে যাই! এখন আসি আরও তুচ্ছ একটি প্রশ্নে, যেটা সেই সময়ে আমার কাছে অনেক বড় একটি বিষয় ছিল। যেমন আমি যে বাইবেল স্কুলে নিয়মিত ডাকযোগে চিঠি পাঠাতাম তার ডাক মাশুল যোগাতো কে? পয়সাটা কোথায় পেতাম? উত্তর আমার মনে নেই, জানা নেই, তবে আজ আপনাদের এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, পোস্টাল স্ট্যাম্পের পয়সা যোগাতে কোনো দিন আব্বার পকেটে হাত দেইনি কিংবা আম্মার টিনের কৌটা থেকে সিকি-আধুলিও চুরি করিনি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ওই পয়সার যোগান দিতে আমার কোনো অসুবিধাও হয়নি। আমার জীবনের অনেক রহস্যের মধ্যে এটিও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রহস্য!

মানিকগঞ্জ থেকে সাভার ফিরে আসার পথে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখার জন্য আমরা পথে আরেকবার থেমেছিলাম। দেখলাম লোহালক্কড় ওয়েন্ডিং করে দরজা-জানালার ফ্রেম বানানো হচ্ছে। আমরা যখন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রে তখন সন্ধ্যা হয় হয়। ওই অবেলায় যুবতী মেয়েদের কাজ করতে দেখে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম! সে সময়ের জন্য এটা ছিল অনেক বিপ্লবী একটি উদ্যোগ। ওই দিনের আরেকটি ঘটনা এখন আমার মনে পড়ছে। আমরা যখন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছাই প্রায় ঠিক একই সময়ে দেখলাম, কোথা থেকে  এসে উপস্থিত হয়েছেন সরকারের সচিব আমলা একেএম আহসান। ওই উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে পেয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হর্তাকর্তারা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, তাঁদের কাছে আমাদের আর কোনো গুরুত্বই রইলো না। আমরা তেমন কিছু আর  দেখতেও পারলাম না। আমার জীবনে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখার এটাই ছিল প্রথম এবং শেষ সুযোগ। একজন আমলার অসময়ে আগমনের কারণে সেদিন ড. চৌধুরীর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দেখা হলো না, হলো না-তো হলোই না, জীবনেও না! এখানে অন্য যে বিষয়ের প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি ফেরাতে চাই তা হলো, আমলাদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও দাপট সে যুগেও ছিল। তবে তাঁদের ক্ষমতা প্রশাসন ও সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নেই সীমাবদ্ধ থাকত, দেশের রাজনীতি, নির্বাচন এবং সরকার গঠনে আজকের মতন এতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল না। সেগুলোর দেখভাল করতেন কেবল রাজনীতিবিদরাই।

সব শেষে ফিরে আসি ইয়াকুব ভাইয়ের কথায়। তিনি ছিলেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা, ‘এসসিএফ’-এ চাকরি করতেন। তখন তাঁর জব টাইট্ল কী ছিল, জানি না। হয়তো তিনি ‘তবলা’ প্রকল্পের সমন্বয়কারী ছিলেন। সদালাপী সদা হাসিমুখ মানুষটি সব সময় আমাদের সঙ্গে থাকতেন। এ-কথা না বলে বরং বলা উচিৎ, আমরা তাঁর সঙ্গে থাকতাম, ছায়ার মতন তাঁকেই সব জায়গায় অনুসরণ করতাম।  ‘জাবরা’ গ্রামে তিনি ছিলেন আমাদের অভিবাক, বুদ্ধিদাতা, তথ্যভাণ্ডার, পথপ্রদর্শক এবং সর্বোপরি সহৃদয় ও বিশ্বস্ত বন্ধু। তিনিই আমাদের এদিক-ওদিক নিয়ে যেতেন, সঙ্গ দিতেন। ইয়াকুব ভাইয়ের সান্নিধ্যে দু’দিনের কথা আজ বিশেষভাবে মনে পড়ছে। একদিন দুপুরের পর কড়া রোদে ‘জাবরা’-র মাঠ-ঘাট যখন খা খা করছে তখন আমরা চালাঘরে বসে আছি, গরমে ঘামছি, হাতপাখা বিরামহীন ঘুরছে, কিন্তু ঠাণ্ডা বাতাস পাওয়া যাচ্ছে না। ওই সময় ইয়াকুব ভাই আমাদের সঙ্গে বসা ছিলেন। সেদিনকার লম্বা আড্ডা খুব জমেছিল, এর মাঝে থেকে থেকে পথচারীরা এসে যোগ দিয়েছেন আবার চলেও গেছেন। ইয়াকুব ভাইয়ের গল্প চলছে, আর আমরা শুনেছি। আবারো দুঃখের কথা, গল্পের বিষয়বস্তু কিছুই আমার মনে নেই।

আরেক দিনের কথা, গ্রাম ঘুরে ঘুরে ইয়াকুব ভাই আমাদের নিয়ে গেলেন ঢাকা-আরিচা হাইওয়ের ওপর। ওখানে বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। জায়গাটির নাম কি ছিল বলতে পারব না। তিনি আমাদের নিয়ে এক দোকানে বসলেন- বেশ কিছুক্ষণ। এটা চায়ের স্টল, না মনোহারী দোকান, তা খেয়াল নেই। দোকানে বসে বসেই আমি দেখছি হাইওয়ে ধরে উভয় দিক থেকে কতক্ষণ পর পর বাস আসছে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে আগত একটি বাস থেকে একজন লোক এক বান্ডিল পেপার নামিয়ে দোকানে দিয়ে গেলেন। আমরা কাড়াকাড়ি করে পেপারখানা পড়লাম। বাসের যাতায়াত দেখতে দেখতে আমি এক সময় অন্য মনস্ক হয়ে গেলাম। মনে হলো, আমি যেন আমার মাঝেই হারিয়ে গেছি! আরও মনে হলো, ঢাকা থেকে যেন আমি অনেক দূরে, দূর পরবাসে কোনো অজপাড়া গাঁয়ে আটকা পড়ে আছি। আমার বাসস্থান থেকে আমি যেন হাজার মাইল দূরে চলে এসেছি। ঢাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য আমার মনটা কেমন যেন আনচান করতে লাগলো, যেভাবে বিয়ের পর মেয়েরা বাপের বাড়ি নাইয়র যাবার জন্য পথ চেয়ে থাকে। এমন অনুভূতি আমার কেন হলো, আজও ভেবে এর কূলকিনারা পাই না। এত কিছু ভুলে গেলাম, অথচ ক্ষণিকের ওই আচানক অনুভূতি আমার ভুলো মনে স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে বসে আছে! এরও কোনো কারণ খোঁজে পাই না!

লেখক: অধ্যাপক- টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র।

 

এসএইচ/