মানুষকে সচেতন করতে সাঈদ রিমনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:২৯ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার
আমাদের সমাজের বেশির ভাগ মানুষ নিজেকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। কিন্তু কেউ কেউ আছেন এর থেকে ব্যতিক্রম। নিজেকে ছাড়িয়ে আশ-পাশের জগত তাদেরকে ভাবায়। সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদ তারা ভেতর থেকে অনুভব করে। তেমনি একজন সাঈদ রিমন।
ছবিগুলোর দিকে একটু খেয়াল করুন। একটু দেখলে বুঝতে পারবেন প্রতিটি ছবিতে ভিকটিম একজন। তিনি সাঈদ রিমন। পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। রাজধানীতে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরি করেন। কিন্তু এই পরিচয়ের বাইরে তার আরেকটি পরিচয় আছে। সেটা হলো দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিজ উদ্যোগে সমাজের মানুষদের সচেতন করতে নানা ধরনের কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন। তার এই সচেতনতার অন্যতম মাধ্যম হলো স্থিরচিত্র। সেসব স্থিরচিত্রে তিনি মডেল হিসেবে বা অভিনেতা হিসেবে নানা ধরনের অঙ্গ-ভঙ্গিতে ছবি তুলেন। তারপর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন, বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে ক্যাম্পেইন করে থাকেন।
সাঈদ রিমনের ক্যাম্পেইনের বিষয় নানা ধরনের। সড়ক দুর্ঘটনা, মাদক, বাসে ট্রেনে মোবাইল ছিনতাই, চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারা, বাসে বা লেগুনায় উঠার সময় মোবাইল নিয়ে দৌড় দেওয়া, পাবলিক গাড়ীতে মলম পার্টি, অপরিচিত লোকের দেওয়া খাবার খেয়ে জ্ঞান হারানো, পানিতে শিশু ডুবে যাওয়া, বেকারত্ব ইত্যাদি।
বেকার এর অভিনয়ে রিমন
সাঈদ রিমন এসব ঘটনায় অভিনয় করে সেই অভিনয়ের স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, শুধুমাত্র মুখে বললে এসব ঘটনার ভয়াবহতা নিয়ে মানুষের মনে কোন অনুভূতি জাগে না। বা জাগলেও সেটা কম। কিন্তু যদি স্থিরচিত্রের মাধ্যমে সেগুলো প্রকাশ করা যায় তাহলে মানুষের মনে তীব্র অনুভূতি জাগে। যা তাকে এসব ঘটনার পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করবে।
সাঈদ রিমনের জন্ম বরগুনার পিটিআই সড়ক সংলগ্ন এলাকায়। পড়াশুনা করেছেন নিজ এলাকায় বরগুনা জিলা স্কুলে, নটরডেম কলেজে, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাঈদ রিমন- এর বাবা মৃত আবদুল খালেক। তিনি ছিলেন পেশায় ব্যাংকার। মা সুলতানা রাজিয়া। ব্যক্তিজীবনে সাঈদ রিমন বিবাহিত। স্ত্রী সাদিয়া মিমি স্কুল শিক্ষিকা।
পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুকে উদ্ধারের ভূমিকায়
সাঈদ রিমন শুধু নিজের অভিনয়কৃত স্থিরচিত্রের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করেন তাই নন; চলার পথে বাসে ট্রেনে নিজ হাতে লিফলেট বিতরণ করেন। কোন জমায়েত পেলেই সেখানে মানুষকে ছবি ও লিফলেটের মাধ্যমে সচেতন করেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই। তারা হলেন নাজিম আল নবী ও আহমেদ আল নোমান। তার স্থিরচিত্র তোলেন মো. ফয়সাল ও রমিজ জাবেদ টিংকু।
সাঈদ রিমন বলেন, এই মানুষগুলো আমাকে এতো বেশি ভালবাসে, কাজের প্রতি তাদের এত বেশি নিষ্ঠা আমার অবর্তমানে তারা এ কাজ চালিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা ও মানসিকতা রাখে।
কেন এমন কাজে সম্পৃক্ত হলেন প্রশ্নে সাঈদ রিমন বলেন, ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া আশপাশের কিছু অনিয়ম আমাকে নাড়া দেয়। যেমন মাদক। আমরা যে মুখে `মা` ডাকি সে মুখে মাদক নেব এটা কেমন কথা। আমি ভাবতাম এর বিরুদ্ধে যদি একজন মানুষকেও সচেতন করতে পারি তবে সেটাই স্বার্থকতা। এরপর আস্তে আস্তে সড়ক দুর্ঘটনা, পাবলিক গাড়ীতে অসতর্কতার কারণে বিপদে পড়া এমন নানা বিষয় নিয়ে আমি ভাবতে শুরু করি।
তিনি বলেন, আমার তোলা বেশির ভাগ ছবিই ঢাকার ফার্মগেট, আবদুল্লাহপুর সহ ব্যস্ত সব এলাকায় অভিনয়ের মাধ্যমে করা হয়েছে। ট্রেনের ছবিগুলো নেওয়া হয়েছে রাজধানীর এয়ারপোর্ট ষ্টেশন থেকে।
মাদক সচেতনতায় সাঈদ রিমন
সাঈদ রিমন- এর আইডি থেকে এসব ছবি ভাইরাল হয় প্রচুর পরিমাণে। তিনি জানান, তার স্ত্রী তাকে একাজে সবসময় অনুপ্রেরণা দেন। সাহস জোগান সহকর্মী এমনকী তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন সে প্রতিষ্ঠানের বস পর্যন্ত। তবে বিব্রতকর হওয়ার অভিজ্ঞতাও কম নয়। তার ছবিগুলো ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর সেগুলোকে সত্য মনে করে কেউ কেউ তার ছবি দিয়ে " একে ধরিয়ে দিন" এমন পোস্ট দিতেও দেখা যায়।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সাঈদ রিমন জানান, একবার ফার্মগেট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার অভিনয় করছিলেন তিনি। আগে থেকে পুলিশ কে জানানো ছিল। কিন্তু মানুষ ধরে নেয় এটা সত্য ঘটনা। ফলে পুরো টিমকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। ঠিক তেমনি ভাবে বাসে বা ট্রেনে মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিনয় করার আগেও সতর্কতামূলকভাবে পুলিশকে জানিয়ে রাখা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিট্রনের উপ পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তিনি বরগুনার পুলিশ সুপার থাকা অবস্থায় আমাকে যথেষ্ঠ উৎসাহ দিতেন। আমাকে একটি প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন। যা বিভিন্ন আইনী প্রক্রিয়ায় যথেষ্ঠ কাজ দেয়।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক - এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, " আমি যখন বরগুনার পুলিশ সুপার ছিলাম তখন সাঈদ রিমনের সাথে আমার পরিচয় হয়। তার ব্যতিক্রমী চিন্তায় আমি মুগ্ধ। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো আজকাল সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু সাঈদ রিমন তাই করে যাচ্ছেন। "
তিনি আরও বলেন, "আমি বরগুনা পুলিশ সুপার থাকা অবস্থায় তার এসব স্থিরচিত্র দিয়ে স্টীকার করিয়েছি। এতে সাড়াও পেয়েছি বেশ। দেশের সব তরুণরা যদি এভাবে এগিয়ে আসে তাহলে সোনার বাংলাদেশ নির্মাণ করা সম্ভব হবে। "
সাঈদ রিমন বলেন, আমি কাজ করে যেতে চাই। আমার দ্বারা যদি একজন মানুষও সচেতন হয় তাহলে সেটাই স্বার্থকতা। যদি একটি প্রাণও বাঁচে তবে সেটাই আমার প্রাপ্তি।
আআ/এসি