ইসলামে নারী নির্যাতন নিষিদ্ধ
মাহমুদুল হাসান
প্রকাশিত : ০৪:১৭ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:৩৪ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার
ইসলামে নারী নির্যাতনের স্থান নেই। নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রিয়া নবী (সা) সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। বিদায় হজের ভাষণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে মানুষ! নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করো না। তাদের ওপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের ওপর তাদেরও অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের কল্যাণের দিকে সবসময় খেয়াল রেখো।’
এছাড়াও তিনি ক্রীতদাস-দাসীদের প্রতিও সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাদের দাসদাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমাদের দাসদাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমাদের দাসদাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খেতে দেবে এবং তোমরা যা পরবে তাদেরকে তা পরতে দেবে।’ [মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৬৪০৯, ২১৪৮৩, ২১৫১৫, আত-তাবাকাত আল-কুবরা ২/১৮৫]।
রাস্তায়, কর্মস্থলে ও যত্রতত্র নারীদেরকে হয়রানি করা তো দূরের কথা বরং ইসলাম নারীদের সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজদের লজ্জাস্থান হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতম [সূরা আন-নূর: ৩০]।’
পাশাপাশি ইসলাম ব্যভিচার, দেহব্যবসা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও দেহপ্রদর্শনীকে নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘ আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয় তা অশ্লীলতা ও খারাপ পথ [সূরা আল-ইসরা: ৩২]’।
নারীকে যে কোন অযুহাত তোলে দৈহিকভাবে কিংবা মানসিকভাবে নির্যাতন করা শরীয়তে বৈধ নয়। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের জীবনে তার কোনো স্ত্রী কিংবা কন্যার গায়ে হাত তোলেননি। নারীকে অপবাদ দিয়ে মানসিক নির্যাতন করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
এই পৃথিবীতে নারী ও পুরুষ অখণ্ড মানব সমাজের দু’টি অপরিহার্য অঙ্গ। পুরুষ মানব সমাজের একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করলে আরেকটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করে নারী।
তাই এর কোনোটাকে বাদ দিয়ে মানব সমাজ কোনক্রমেই পূর্ণত্ব অর্জন করতে পারে না। এ কারণেই নারী-পুরুষের সুষম উন্নয়ন সমাজ প্রগতির একটি অনিবার্য পূর্বশর্ত।
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী সমাজে নারীর অবস্থান যখন ছিল অমানবিক এবং অতি করুণ তখন থেকেই ইসলাম নারীর অধিকার ও মর্যাদা উন্নয়নের জন্য নজীরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইসলাম জন্মগতভাবে মানুষকে এ মর্যাদা দিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ আর নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানদেরকে সম্মানিত করেছি [সূরা আল-ইসরা/বনী ইসরাইল: ৭০]। বস্তুত মানুষ সম্পর্কে ইসলামের এ ঘোষণা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই সমানভাবে শাশ্বত ও চিরন্তন।
যে আদর্শ ও মতবাদ নারীকে শুধু নারী হওয়ার কারণে নীচু ও লাঞ্ছনার যোগ্য মনে করে, মানবতার উচ্চ আসন থেকে দূরে নিক্ষেপ করে এবং পুরুষকে শুধু পুরুষ হওয়ার কারণে উচ্চতর আসনের উপযুক্ত মনে করে, ইসলাম তাকে জাহেলিয়াত বলে আখ্যায়িত করেছে।
ইসলাম পরিস্কার ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, মর্যাদা লাঞ্ছনা এবং মহত্ত্ব ও নীচতার মাপকাঠি হলো তাকওয়া-পরহেযগারী এবং চরিত্র ও নৈতিকতা। এ মাপকাঠিতে যে যতটা খাঁটি প্রমাণিত হবে মহান আল্লাহর কাছে সে ততটাই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করতে পারে না, তাকে অপমানিত করতে পারে না, তাকে অন্যের কাছে হেয় করতে পারে না। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘তাকওয়া এখানে’ বলে তিনবার নিজের বুকের দিকে ইঙ্গিত করেন। তারপর রাসুল (সা.) বলেন, একজন মুসলমানের কাছে অন্য মুসলমানের জীবন, সম্মান ও সম্পদ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ।’ (সহিহ মুসলিম)
অনেকে অহেতুক ধারণা বশত নারীদের ওপর হামলা চালায় বা তাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা অধিকাংশ অমূলক ধারণা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখো। নিশ্চয়ই কিছু ধারণা গুনাহের কারণ। আর তোমরা কারো পশ্চাতে তার দোষ সন্ধান কোরো না এবং পশ্চাতে তোমরা একে অন্যের দোষ চর্চা কোরো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করতে পছন্দ করে? বস্তুত তোমরা সবাই তো তা অপছন্দ করো। আল্লাহকে ভয় করো! নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময় (সুরা আল-হুজুরাত : ১২)।
নারী সুদীর্ঘকাল ধরে নানাভাবে নিপীড়িত ও নিষ্পেষিত হয়েছে এবং আজকের সভ্য সমাজেও হচ্ছে। ফেনী জেলার সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানের ওপর যে হামলা চালানো হলো এটি তার একটি উদাহরণ। তাই নারী নির্যাতনের বিপক্ষে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
এমএইচ/