একজন পরোপকারী লুইস ক্যারলিন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৪৯ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:৫২ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার
লুইস ক্যারলিন লিউইস। একজন পরোপকারী মার্কিন নাগরিক। বয়স প্রায় ৮০ ছুঁইছুঁই। সদা হাস্যোজ্জল এই বৃদ্ধা প্রতিদিন শুরু হয় পরোপকারী কাজ দিয়ে। আমেরিকার লস এঞ্জেলেসের কোরিয়া টাউনে, ‘হোবার্ট ভুলবার্ড এলিমেন্টারি` স্কুলে সামনে কাটে দিনের বেশির ভাগ সময়। এই স্কুল সংলগ্ন রাস্তার ক্রসস্ট্রিটে দাঁড়িয়ে স্কুলগামী বাচ্চা ও তাদের প্যারেন্টসদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করে থাকেন তিনি।
প্রতিদিন সকালে ২ ঘন্টা, আবার বিকালে স্কুল ছুটির সময় ২ ঘন্টা তিনি এ কাজ করে থাকেন। এরই মাঝের সময়টা ঘুরে-ফিরে ও পথচারীদের সাথে গল্পগুজব করে সময় কাটান তিনি। জীবিকার্জনের জন্যে এটা কোন মাধ্যম নয়। সেচ্ছাই নিজেই এই দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন যিশুখ্রিস্টের আশীর্বাদ লাভের আশায়।
কৃষ্ণাঙ্গ এই আমেরিকান বৃদ্ধার ধর্মবিশ্বাস ক্যাথলিক। এক সময় ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনে ভালো চাকরিও করেছেন তিনি। এক সময় তিনি খন্ডকালিন শিক্ষকতাও করেছেন। ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনারও। ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনী মিলিয়ে বেশ বড় পরিবার তার। তিনি তাদেরকেও সময় দেন। এরপর অবসর সময়ে বেকার বসে থাকতে ভালো লাগে না তার।
গত নয় বছর ধরে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এভাবেই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। পরকালে ভালো পুরুস্কারের আশায়। বার্ধক্যক্লিষ্ট শরীর নিয়ে ৬ কিলোমিটার দূর থেকে এসে এভাবেই পরার্থে উৎসর্গিত করে যাচ্ছেন জীবনের মহামূল্যবান সময় ও শ্রম। এমনি করেই কাটিয়ে দিতে চান জীবনের বাকিটুক সময়।
পৃথিবীতে যুগে যুগে যারা মহিয়ান হয়েছেন, তাদের জীবন কখনোই ভোগবিলাসী ছিলো না। অন্যের কল্যাণেই নিজ জীবন উৎসর্গ করে গেছেন তাঁরা। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) চলার পথে কাঁটা বিছানো এক বৃদ্ধার গল্প আমরা সকলেই জানি।
এছাড়াও নবীজি কীভাবে অন্যের বোঝা নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতেন। এসব গল্প থেকে আমরা কি কোন শিক্ষা নিতে পেরেছি? আমরা সকলেই যদি পরের কল্যাণে এভাবে ব্রতী হতাম, তাহলে আমাদের সমাজের চিত্র পাল্টে যেত।
মানবহিতেষী কবি কামিনী রায়ের সেই প্রণিধানযোগ্য কবিতা-‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে, এই ভাব-সম্প্রসারণ কি শুধু পরীক্ষায় পাশের জন্যই পড়েছি? সমাজে এখন মানুষের কোনো অভাব নেই, কিন্তু মানবতার বড্ড অভাব। মানুষ হওয়ার শিক্ষাটার পাশাপাশি আমরা যেন মানবিক শিক্ষাটাও অর্জন করতে পারি, মহান সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদের সেই তৌফিক দান করেন,আমীন।
লেখক- আবুল বাশার ভূঁইয়া। আমেরিকান প্রবাসী ।