ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

নুসরাতই হোক প্রতিবাদের ভাষা

শামসুল হক

প্রকাশিত : ০৬:৪৩ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ১২:০৩ পিএম, ১৬ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

নুসরাতের বাবা : সংগৃহীত

নুসরাতের বাবা : সংগৃহীত

সবাইকে কাঁদিয়ে বুধবার না ফেরার দেশে চলে গেছেন ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। বৃহস্পতিবার তাদের পারিবারিক কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন তিনি। অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেনি তিনি। ফলে অকালেই চলে যেতে হয়েছে। কিন্তু তার এই চলে যাওয়া দেশবাসীকে দিয়েছে নতুন এক প্রতিবাদের ভাষা। সারা দেশের মানুষ তার হত্যার বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে আজ।

দেশের প্রায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নুসরাতের হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনকে আরও বেগবাগ করবেন বলে দাবি করেছেন। অনেকেই বলেছেন, এখানেই প্রতিবাদ শেষ নয়, নুসরাত না থাকলেও লাখো মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চলবে।

ইতোমধ্যে নুসরাত হত্যার প্রধান আসামি সেই সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অন্যতম আসামি ও অভিযুক্ত অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নূর উদ্দিনকে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভালুকার সিডস্টোর থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি বিশেষ টিম। তাদের সহায়তা করে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ।

সিরাজ উদ দৌলার আরেক সহযোগী ও নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, পৌর কাউন্সিলর মোকসুদ আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

উল্লেখ্য, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসাছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদে ছাদে যান। সেখানে বোরকা পরা ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তারা রাফির গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

অগ্নিদগ্ধ রাফিকে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ফেনী সদর হাসপাতালে এবং পরে শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আর বুধবার তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।

এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা।

এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ বুধবার থেকে ৭ দিনের রিমান্ডে আছেন। এছাড়া ৫ দিন করে রিমান্ডে আছেন আরও আট আসামি।

এদিকে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রীকে যারা পুড়িয়ে মেরেছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতে হবে।

তিনি বলেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে ধরা হয়েছে। বাকিদেরও ধরা হবে। কেউ ছাড় পাবে না। এদের কঠোর বিচারের আওতায় আনা হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভার শুরুতে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর কথার ওপর আস্থা রেখে বলতে চাই নুসরাত হত্যার বিচার দ্রুততম সময়ে করতে হবে। এই হত্যার বিচার এখন সময়ের দাবি। শুধু এই হত্যা নয়, যেকোনো ধরনের হত্যার বিচার হওয়া উচিৎ। অন্যায়কারীর শাস্তি নিশ্চিত করা নিশ্চয়ই রাষ্টের দায়িত্ব। রাষ্ট্র এ দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। অন্যায়কারী যত শক্তিশালী বা ক্ষমতাধর হোক না কেনো তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যায়কারী আর অন্যায় সয্যকারী উভই সমান অপরাধে সমান অপরাধী। তাই এই হত্যার বিচার না হলে সবাই অপরাধী হয়ে পড়বেন বলেই ধরে নেওয়া যায়।

আর এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন এখন সারা দেশের মানুষ। সব মানুষের ভাষা হয়েছে এখন নুসরাত হত্যার বিচার চাই। সবার মুখেই একটাই দাবি নুসরাত হত্যার বিচার চাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক জুড়েই এখন শুধু নুসরাত হত্যার বিচার চেয়ে পোস্ট। সবার টাইম লাইনে নুসরাত হত্যার বিচার চাই। এখন সারা দেশে প্রতিবাদের ভাষা নুসরাত হত্যার বিচার। সবাই এখন এক বাক্যে একটি ধ্বনি তোলছে নুসরাত হত্যার বিচার চাই। কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি ইতোমধ্যে নুসরাত হত্যার বিচার চেয়েছেন। আজ প্রধানমন্ত্রী বললেন সবার বিচার করা হবে। এই কথার আলোকে বলতে চাই যত দ্রুত সময়ে সম্ভব নুসরাত হত্যার বিচার করতে হবে। আইনের কোনো ফাঁক দিয়ে যেন কোনোভাবে এরা বেরিয়ে না যেতে পারে সে দিকে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নজর রাখতে হবে। যদিও হাইকোর্ট এক মন্তেব্য ইতোমধ্যে বলেছে, নুসরাত হত্যার মামলার বিষয়ে নজর রাখবে। সেটাই দেখার অপেক্ষায় রয়েছে এখন দেশবাসী।  

এই হত্যাকারীদের ও হত্যায় যারা সহযোগিতা করেছেন তাদেরও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যাতে কেউ বিচারে হাত থেকে পার পেয়ে না যায়। এমন দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে, যাতে এই অন্যায়কারীদের শাস্তি দেখে ভবিষ্যতেও এমন অন্যায় করতে কেউ সাহস না পায়। অনেকেই এখন বলছেন প্রতিবাদের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন নুসরাত হত্যার বিচার। দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের বিচার কার্যকর করা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

 

এসএইচ/