ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বর্ষবরণে মুখোশ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে উদীচীর সমাবেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৫৭ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার

পহেলা বৈশাখ বাংলা ও বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় নিয়ন্ত্রণ এবং মুখোশ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে দেশব্যাপী প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। শুক্রবার দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থিত উদীচী’র সাড়ে তিন শতাধিক শাখা সংসদের উদ্যোগে একযোগে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ আয়োজিত হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে শুক্রবার বিকাল ৪টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচি আয়োজিত হয়।

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ-এর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার, সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম ও ইকবালুল হক খান, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত ও আকরামুল হক, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আকমল হোসেন প্রমুখ।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন এবং মীর্জা আতিকুজ্জামান।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় সঙ্কোচনের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে যারা বাঙালি সংস্কৃতিকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চায় তাদের স্বার্থই রক্ষা করা হলো। উদীচী সরকারের এই একতরফা সিদ্ধান্ত মানবে না। অবিলম্বে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে তারা বলেন, বিভিন্ন সময়ে মৌলবাদী অপশক্তির আক্রমণ ও রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে যাত্রাপালাসহ সংস্কৃতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ ধারা চলতে দেওয়া যায় না। উদীচী সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন অভিযোগ করেন, সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে এদেশের চিরায়ত সংস্কৃতির ওপর বর্বর আক্রমণ চালিয়ে আসছে। এর বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক জাগরণ বন্ধ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সরকার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন জামসেদ আনোয়ার তপন। এছাড়া, নিরাপত্তা নিশ্চিতের নামে সবাইকে ঘরে বন্দী করে দেয়ার অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান বক্তারা।

তারা আরও বলেন, বিকাল ৬টার মধ্যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শেষ করা এবং মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ ব্যবহার নিষেধ করা বিষয় সরকারের একতরফা সিদ্ধান্ত নিন্দনীয়। সংস্কৃতি কর্মীসহ সমাজের প্রায় সর্বস্তরের মানুষের প্রবল আপত্তির মুখেও গত কয়েক বছর ধরে বর্ষবরণ উৎসবকে নির্দিষ্ট সময়ের ঘেরাটোপে বেঁধে দেওয়ার একতরফা পদক্ষেপ নিয়ে আসছে সরকার। বারবার আপত্তি জানানোর পরও এবারও রমনা বটমূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত পহেলা বৈশাখের সব উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এধরনের হঠকারি সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর মাধ্যমে উৎসবমুখর বাঙালির প্রাণের উচ্ছ্বাসকে দমন করা হচ্ছে তাই, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বিকাল ৬টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করার এ নির্দেশনা গ্রহণযোগ্য নয়। এধরনের নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে ধর্মীয় মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী প্রশ্রয় পাবে। এছাড়া, বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা বিষয়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা-ও সার্বিকভাবে উৎসবের বৈচিত্র্যকে খর্ব করবে।

নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে কালকের মানববন্ধনে যোগ দেবে উদীচী-

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে আগামীকাল বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত গণভবন থেকে বঙ্গভবন মানববন্ধন কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। কর্মসূচির অংশ হিসেবে কাল সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করবে উদীচীর সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা।

এসএইচ/