ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

জট খুলছে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৭:৪১ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

ফেনীর সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যু ঘটনায় জট খুলতে শুরু করেছে। শুক্রবার মামলার এজহার ভুক্ত আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমের আটকের পর তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। গতকাল রাজধানীতে প্রেসব্রিফিংয়ে পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার নুসরাত হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

এদিকে ফেনীসহ দেশ জুড়ে নুসরাতের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, নারীবাদি সংগঠনসহ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। গতকাল ফেনীতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী নুসরাতের মামলার সব খরচ চালানোর ঘোষণা দেন। এসময় তিনি নুসরাতের নামে একটি সড়ক ও একটি ভবন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিকে মামলার এজহারভূক্ত আসামি জাবেদ হোসেনকে গ্রেফতারে পর তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জাকির হোসাইন ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামীয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ তার অফিসে ঢেকে নিয়ে নুসরাতকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২৮ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে কারাগারে প্রেরণ করে আদালত ।

দগ্ধ হওয়ার খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে প্রচার করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে নুসরাতের চিকিৎসার যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ ৮ জনের মান উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামালা দায়ের করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। মামলায় ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের চরকৃষ্ণ গ্রামের মৃত কলিম উল্লার ছেলে এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৫), সোনাগাজী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুকছুদ আলম (৪৫), পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের আহসান উল্লার ছেলে নুর উদ্দিন (২০), ছাত্রলীগের মাদরাসা কমিটির সভাপতি ও একই গ্রামের ভূঞাবাজার এলাকার শাহাদাত হোসেন শামিম (২০), রহমত উল্লার ছেলে জাবেদ হোসেন (১৯), ছফরপুর গ্রামের হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), তুলাতলি এলাকার আবুল বশরের ছেলে যোবায়ের আহম্মেদ (২০), মাদরাসার ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিনের (৩৫) নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও হাতমোজা, চশমা ও বোরকাপরা ৪জনসহ অজ্ঞাত আরো অনেককে আসামী করা হয়েছে।

পুলিশ ও পিবিআই এখন পর্যন্ত এ মামলায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃদের মধ্যে ওই মাদরাসা অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুকছুদ আলম, মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন, নুর উদ্দিন, মাদরাসার ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামিম, সহপাঠি আরিফুল ইসলাম, নুর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি, যোবায়ের হোসেন ও জাবেদ হোসেন।

১২ এপ্রিল এ ঘটনায় এজহারভূক্ত আসামি হওয়ায় পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকছুদুল ইসলামকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ফেনীসহ পুরো দেশে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দােবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসছে স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার ওই ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, অধ্যক্ষের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটেছে। ৪ এপ্রিল সিরাজ উদ দৌলার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন আসামি নুর উদ্দীনসহ কয়েকজন। পরে তাঁরা সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে কারাগারে দেখা করেন।
নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলায় ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাঁর মুক্তির দাবিতে ‘সিরাজ উদ দৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে কমিটি গঠন করা হয়। ২০ সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়ক নুর উদ্দিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হন শাহাদাত হোসেন শামীম। তাঁদের নেতৃত্বে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে গত ২৮ ও ৩০ মার্চ উপজেলা সদরে দুই দফা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। তাঁরাই নুসরাতের সমর্থকদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন।

এসএইচ/