জাবি শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুতে বৈশাখী অনুষ্ঠান বাতিল
জাবি সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ১১:২৬ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান নিভৃত হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাংলা নববর্ষের পূর্ব নির্ধারিত মঙ্গল শোভাযাত্রা কর্মসূচি বাতিল করেছেন।
রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবন চত্বরে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম মৃৎ মঞ্চে নূরুজ্জামানের প্রতি শোক প্রকাশ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা কর্মসূচি বাতিল করার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এ সময় উপাচার্য বলেন,‘ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র নূরুজ্জামানের অকালে চলে যাওয়া আমাদের সকলের জন্য একটি কষ্টের বিষয়। নূরুজ্জামানের অকাল প্রয়াণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও তার পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হলো। উপাচার্য নূরুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তার আত্মার শান্তি কামনা করেন।’ এ সময় নূরুজ্জামানের প্রতি শোক ও সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে রোগ শনাক্ত করতে না পারায় সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালে নেয়ার রাস্তায় গত শনিবার রাত ১০টার দিকে ইংরেজি বিভাগের ৪৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান নিভৃত মারা যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসকরা জানান, বুকে ও পেটে ব্যাথা নিয়ে নুরুজ্জামান সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসা কেন্দ্রে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তরিকুল ইসলাম তাকে গ্যাস্ট্রিকের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এতে ব্যথা না কমলে তাকে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পরে রাতে সোয়া নয়টার দিকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. হরনাথ সরকার বলেন, শ্বাসকষ্ট থেকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নুরুজ্জামানের মৃত্যু হয়।
এদিকে পহেলা বৈশাখের উৎসবকে উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নাই দাবি করে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে দুই শিক্ষার্থীর অবস্থান কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে আরও ৩ জন শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে যুক্ত হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধন করে। পরে শিক্ষার্থীরা মৌন মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে গিয়ে সেখানে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবস্থান নেয়।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালন ও আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ, প্রোভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সোহেল আহমেদসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা সেখানে উপস্থিত হয়। এই সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরেন।
তাদের দাবিগুলো হলো ২০ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট করে তদন্ত সাপেক্ষে নুরুজ্জামানের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, আগামি ২৪ এপ্রিলের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নেবুলাইজার, ইসিজি মেশিন, জেনারেটর ক্রয়, ১৩ জুনের মধ্যে ৫টি আধুনিক এম্বুলেন্স মেডিকেলে যুক্ত করা, সপ্তাহে ৭ দিন সর্বক্ষণ অন্তত ৪ জন ডাক্তার রাখা, ঔষধ ক্রয়ের বরাদ্দ বাড়ানো, ঔষদের মান ও পরিমাণ বৃদ্ধি, মেডিকেলের আসন বাড়ানো, পূর্ণাঙ্গ প্যাথলজি বিভাগ চালু করা, এপ্রিলের মধ্যে ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগ দেওয়া, সকল শিক্ষার্থীকে মেডিকেল কার্ড প্রদান করা, অভিযোগের জন্য সার্বক্ষনিক হটলাইন চালু করা এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক নার্স ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিতে হবে।
এসব দাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেনে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূরণ করার আশ্বাস প্রদান করা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা বিকাল ৪টার দিকে মেডিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা ফিরে আসেন। অন্যদিকে এসব আশ্বাসকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে অবস্থান নেওয়া ৫ শিক্ষার্থীও বিকাল ৫টার দিকে তাদের অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন।
কেআই/