ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নগর গবেষক নজরুল ইসলামের ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪৪ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১২:৪৫ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার

বাংলাদেশে নগর বা নগরায়ন নিয়ে কথা কথা বলতে চাইলে যে নামটি সবার আগে ভেসে ওঠে তিনি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপকের ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার।

শরীয়তপুরে জন্ম নেওয়া নজরুল ইসলামের জীবনের প্রথম ক’টি বছর কেটেছে গ্রামে। নদী-নালা-পানি-বিল-খালে। লেখাপড়া পুরনো ঢাকার নবাবপুর হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশে। ভালো ছাত্রের তকমাটা তার বরাবরের। 

১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ঢাকার উচ্চবিত্ত মানুষের আবাসন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকতেই। সেই যে ঢাকা দিয়ে শুরু, এর পর একের পর এক গবেষণা। কখনও একা, আবার কখনও পুরো গবেষণা দলকে নেতৃত্ব দিয়ে। দেশে ও বিদেশে নগর নিয়ে গবেষণার পরিধি প্রসারিত করেছেন। একজন নজরুল ইসলাম হয়ে উঠেছেন একজন নগর বিশারদ।

অধ্যাপক নজরুল ইসলামের প্রধান কর্মক্ষেত্র নগরায়ণ ও নগর উন্নয়নবিষয়ক গবেষণা। তার বর্ণাঢ্য ও সুবিশাল কর্মজীবনের বিচিত্র অর্জন ও অভিজ্ঞতা আমাদের সবাইকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। তিনি নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও সাম্মানিক চেয়ারম্যান। তবে তার কর্মজীবন শুধু নগর গবেষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ এমন নয়। এর বাইরেও তার বিস্তৃত জগত্ রয়েছে।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সফল শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, পরিবেশবিদ, শিল্পজগতের সক্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং একজন সুলেখক। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমানে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে এই নগর গবেষক বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮-তে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ’- এ কথা উল্লেখ রয়েছে। নিঃসন্দেহে খুবই প্রশংসনীয় অঙ্গীকার।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশের গ্রামগুলো সাধারণ অর্থেই অত্যন্ত সুন্দর। ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’ বাংলাদেশের গ্রাম একদিনে নয়, বরং হাজার হাজার বছর ধরে তৈরি হয়েছে। কোনও বাস্তু পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী বা স্থপতি কিন্তু সেখানে খুব একটা যাননি। আমার ভয়, তারা গেলেই বিপদ হতে পারে; যদি না বাংলার গ্রামকে সঠিকভাবে ধারণ করেন, অনুভব করেন, বোঝেন এমন কেউ সেখানে যান। বাংলার গ্রাম নতুন করে সাজাতে অসাধারণ বুদ্ধিমান ও সৃজনশীল স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদের প্রয়োজন হবে। তাছাড়া সুযোগ-সুবিধা নেয়ার বিষয়েও সাবধান হতে হবে। বৈদ্যুতিক লাইন যাবে, কিন্তু এর তারটি কীভাবে নেওয়া যাবে, পোলটা কোথায় বসবে, কৃষিজমির ক্ষতি হবে কি না, তা ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুত্ বরং সুবিধাজনক।

তিনি বলেন, অনেকে ঢাকা থেকে রাজধানী সরিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন, যার কোনও দরকার নেই। ঢাকায় রাজধানী থাকবে, সচিবালয় থাকবে, কিন্তু সচিবালয়ে লোক থাকবে খুব কম। সবকিছুর বিকেন্দ্রীকরণ হবে। ঢাকা থেকে শুধু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

এই অধ্যাপক মনে করেন, রাজধানী ঢাকার ভৌগোলিক পরিসরে একাধিক সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বাস্তবতাও একটি বড় সমস্যা। সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে একটি মেট্রোপলিটন বা মেগা সিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল হতে পারে। সেখানে একজন জ্যেষ্ঠ­ মন্ত্রীকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। শুধু বয়সে বা পদে সিনিয়র নয়, যিনি একাধারে কর্মতত্পরও; সত্যিকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এই আশিতেও যথেষ্ট কর্মব্যস্ত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন। তার সময় কাটে পড়াশোনা আর গবেষণা নিয়ে। আড্ডা, টেলিভিশন ও খবরের কাগজ তার নিত্যসঙ্গী। রকমারি বাঙালি খাবার তার পছন্দ। তিনি গতিময় এক জীবনযাপন করেন, যাকে কোনও নিয়মে ফেলা যায় না।