ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

আগামী অর্থবছরে এডিপিতে সহায়তা ৭২ হাজার কোটি টাকা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৮ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার

দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি আনতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বৈদেশিক সহায়তা খাত থেকে বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে চায় সরকার। তাই আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে উন্নয়ন।

এ লক্ষে আগামী অর্থবছরে এডিপির বৈদেশিক সহায়তা থেকে ব্যয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপির মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা।

তবে সম্প্রতি সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা খাতে বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয় ৫১ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে আসন্ন অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ২০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে- ১২ হাজার কোটি টাকা, দ্বিতীয় বিদ্যুৎ বিভাগে- ১১ হাজার ৭৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং তৃতীয় স্থানীয় সরকার বিভাগে- ৯ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।

গত ১৫ এপ্রিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে নতুন এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের খসড়া চূড়ান্ত করে পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ নিশ্চিত হলে দুই অংশ মিলে মোট এডিপি উপস্থাপন করা হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। ইআরডি ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে ইআরডির ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. শহিদুল ইসলাম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, গত ২৭ ও ২৮ মার্চ বৈঠক হয়েছে। সেখানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদার প্রেক্ষিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বৈদেশিক সহায়তা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বর্তমানে মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি ভালো। বেশ কিছু নতুন প্রকল্পও আছে। সব মিলিয়ে এ অর্থ লাগবে। চলতি অর্থবছরে ৯ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তা কাটছাঁট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে সব অর্থবছরে একরকম খরচ হয় না। কোনো অর্থবছরে কম হলে অন্য অর্থবছরে দ্বিগুণ খরচ হতে পারে। তাই এভাবে বিচার করে বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

ইআরডি থেকে পাঠানো বরাদ্দে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুকূলে ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৬১২ কোটি টাকা।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ৪১৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগে ৫১৯ কোটি টাকা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ৩৯৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৫০ কোটি টাকা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৫৫ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগে ৯৯৭ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৮৬৫ কোটি টাকা, সেতু বিভাগে ৯৫৫ কোটি টাকা।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে ৪৩৫ কোটি টাকা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে সাড়ে ৩ কোটি টাকা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ৪০৭ কোটি টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ৭০০ কোটি টাকা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ২৭৩ কোটি টাকা। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ৭০ কোটি টাকা, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ১১৭ কোটি টাকা, আইন ও বিচার বিভাগে সাড়ে ৩ কোটি টাকা।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সাড়ে ৪৭ কোটি টাকা, অর্থ বিভাগে ৪১৯ কোটি টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ১২১ কোটি টাকা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে সাড়ে ৩৬ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ২৯৩ কোটি টাকা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ৮১২ কোটি টাকা, তথ্য মন্ত্রণালয়ে ২২ কোটি টাকা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ২১৪ কোটি টাকা, পরিকল্পনা বিভাগে সাড়ে ২৪ কোটি টাকা, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে সাড়ে ৬৮ কোটি টাকা,আইএমইডিতে সাড়ে ৮৬ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৯০ কোটি টাকা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৭৬২ কোটি টাকা,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১১৬ কোটি টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ৫৯ কোটি টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৭৮ কোটি টাকা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৫৫ কোটি টাকা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ৩৩৫ কোটি টাকা, জননিরাপত্তা বিভাগ ১২৪ কোটি টাকা, নিরাপত্তা ও সেবা বিভাগে ৮৩ কোটি টাকা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে ৪ কোটি টাকা।

বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডিপির আওতায় বৈদেশিক সহায়তা থেকে ব্যয় করেছে ২৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ২৫ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা বা ৪১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছিল ১২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা বা ৩৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছিল ১০ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বা ৩০ দশমিক ০১ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ৮ মাসে ব্যয় হয়েছিল ৯ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা বা ৩৬ শতাংশ।