যেসব কারণে নটরডাম এতো গুরুত্বপূর্ণ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:২৮ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার
ভয়াবহ আগুনে প্যারিসের নটরডামের ছাদ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ভবনটির পুরো কাঠামোর জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। জরুরি বিভাগ আগুন নেভানোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম এবং অমূল্য সম্পদগুলো ক্যাথেড্রাল থেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন। তবে ভবনটির কাঠের চমৎকার কাজগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু ৮৫০ বছর পুরনো এই গোথিক ভবনটির আর কি বৈশিষ্ট্য রয়েছে?
তেরশো শতকের পুরনো এই ক্যাথেড্রালে তিনটি রোজ উইন্ডো রয়েছে. যেটি এই ভবনটির সবচেয়ে বিখ্যাত বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি। আগুনের পর এর কোনটি এখন আর টিকে আছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়। প্রথমটি স্থাপন করা হয় ১২২৫ সালে এবং সেখানে যেভাবে নানা রঙের কাচ বসানো হয়, তা সবার নজর কাড়ে।
তবে কোন জানালাতেই আর প্রাচীন সেই রঙিন কাচগুলো নেই, কারণ আগের আগুনে সেসব নষ্ট হয়ে গেছে। নটরডাম দেখতে আসা বেশিরভাগ দর্শনার্থী ভবনের সামনের দুইটি গোথিক গম্বুজের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেন।
দুই গম্বুজ-
নটরডাম দেখতে আসা বেশিরভাগ দর্শনার্থী ভবনের সামনের দুইটি গোথিক গম্বুজের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে থাকেন যেটি ক্যাথেড্রালের পশ্চিম ফটকে অবস্থিত।
১২০০ সালের দিকে পশ্চিম ফটকের কাজ শুরু হয়। তবে প্রথম টাওয়ারটি, উত্তর পাশে যেটি রয়েছে, সেটি বানাতে সময় লাগে ৪০ বছর।
আর দক্ষিণ পাশের টাওয়ারটির কাজ শেষ হয় আরও ১০ বছর পরে, ১২৫০ সালে।
দুইটি টাওয়ারই ৬৮মিটার উঁচু, যেখানে উঠতে ৩৮৭ পদক্ষেপ লাগে। এখান থেকে পুরো প্যারিস শহরটিকে চমৎকারভাবে দেখা যায়।
সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ভবনের ছাদের ওপর বসে থাকা একটি মূর্তি, যে শহরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
গার্গোয়েলস-
যারা ক্যাথেড্রালের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে প্যারিস শহর দেখার জন্য উপরে উঠেছেন, তাদের এই ক্যাথেড্রালের আরেকটি আকর্ষণীয় উপাদান পার হয়ে যেতে হয়েছে, সেটা হলো গার্গোয়েলস। অনেক পশুর আকৃতি মিলিয়ে পৌরাণিক এই ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ভবনের ছাদের ওপর বসে থাকা একটি মূর্তি, যে শহরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
ঘণ্টা-
এই ক্যাথিড্রালে দশটি ঘণ্টা রয়েছে। সবচেয়ে বড়টির নাম ইমানুয়েল, যার ওজন ২৩ টন এবং সেটি বসানো হয়েছে ১৬৮৫ সালে। ২০১৩ সালে ৮৫০ বছরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করতে গিয়ে উত্তর টাওয়ারে সবচেয়ে ছোট ঘণ্টাটি বসানো হয়।
যদিও ফরাসি বিপ্লবের সময় আসল ঘণ্টাগুলোকে তরল করে কামানের গোলা বানানো হয়েছিল। তবে প্রতিকৃতি বসানোর সময় একেকজন সেইন্টের নামে একেকটি ঘণ্টার নামকরণ করা হয়। ভিক্টর হুগোর উপন্যাসের নায়ক কোয়াসিমোডো এরকম একটি ঘণ্টার বাদক হিসাবে কাজ করতেন।
বামে এক বছর আগে তোলা গির্জার বুরূজের ছবি, আর ডানেরটি তোলা সোমবারে যখন এটি আগুনে পুড়ছিলো
গোথিক স্পিয়ার-
নটরডামের আরেকটি বিখ্যাত স্থাপনা হলো ১২ শত শতকে স্থাপিত গোথিক স্পিয়ার, যা অনেকটা পিরামিডের মতো উপরে উঠে গেছে। তবে সোমবারের আগুনে এটি ভেঙ্গে পড়েছে। ভবনের ইতিহাসে অনেকবার এটিতে পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে ফরাসি বিপ্লবের সময় এটি ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং ১৮৬০ সালে পুনরায় নির্মিত হয়।
পুরো ক্যাথেড্রালের এসব গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে পাওয়াকে ফরাসি গোথিক স্থাপত্যকলার ওপর অপূরণীয় আঘাত বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
শেষ চিহ্ন-
নটরডামকে মনে করা হতো প্যাশন অফ ক্রাইস্টের ভগ্নাবশেষের শেষ ঠিকানা, যার মধ্যে রয়েছে ক্রসের একটি টুকরো, একটি নখ এবং পবিত্র কাঁটার মুকুট। তবে এই মুকুটটি আগুন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
ফরাসিদের কাছে নটরডাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?-
বিবিসির সংবাদদাতা হেনরি আস্টিয়ার বলছেন, নটরডামের মতো আর কোন স্থাপনাই এভাবে ফ্রান্সকে প্রতিনিধিত্ব করে না। জাতীয় প্রতীক হিসাবে এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যেতে পারে প্যারিসের আরেকটি স্থাপনা আইফেল টাওয়ারকে, যেটি মাত্র একশো বছরের কিছু বেশি পুরনো, যদিও নটরডাম প্যারিসে দাঁড়িয়ে রয়েছে দ্বাদশ শতক থেকে।
এই ভবনের নাম উঠে এসেছে ফ্রান্সের অন্যতম সেরা উপন্যাস, ভিক্টর হুগোর হ্যাঞ্চব্যাক অফ নটর-ডামে। ফরাসি বিপ্লবের সময় সর্বশেষ এই ভবনটি বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হয়। তখন ধর্মবিরোধী উগ্রবাদীদের হামলায় বেশ কয়েকজন সেইন্টের ভাস্কর্য কেটে ফেলা হয়।
দুইটি বিশ্বযুদ্ধ সত্ত্বেও টিকে গিয়েছে ভবনটি।
প্যারিসে বসবাসকারী যেসব জিনিস নিয়ে গর্ব করে থাকেন, এই ভবনটি তারই একটি। শুধু পর্যটকদের কাছেই আকর্ষণীয় নয়, বছরে এখানে অন্তত ২০০০ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি।
এসএইচ/