২৫০ শয্যা হাসপাতাল
বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কারণে কাজে আসছে না ভবনটি
এইচ এম মইনুল ইসলাম, বাগেরহাট
প্রকাশিত : ০২:৪৯ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:১৩ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার
বছর দেড়েক আগে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কারণে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাগেরহাটবাসী। ফলে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৫০ শয্যার ভবনটি কোনও কাজে আসছে না তাদের।
স্বাস্থ্য ও গনপূর্ত বিভাগের মধ্যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলীয় এ জেলার মানুষ। বহুল কাঙ্খিত বাগেরহাট জেলার সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতাল চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। হাসপাতালটি চালু হলে জেলার স্বাস্থ্যসেবায় গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা ।
বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের কোলঘেষা বাগেরহাট জেলার প্রায় ১৭ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার কেন্দ্রস্থল সদর হাসপাতাল। ১৯৯৭ সালে ৫০ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৩ সালে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। একই বছর জুন মাসে ‘হেলথ পপুলেশন এন্ড নিউট্রেশন সেন্টার ডেভলমেন্ট প্রজেক্ট’এর আওতায় আধুনিক চিকিৎসার উপযোগী ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় হাসপাতাল ভবনটি হস্তান্তর প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। দুই বিভাগের মধ্যে কয়েকদফা পত্র আদান প্রদানও হয়েছে ইতোমধ্যে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় ভবনটি বুঝে নিচ্ছেন না বাগেরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ।
এলাকাবাসীরা বলেন, নির্মাণ কাজ শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত রয়েছে ভবনটি। এটি চালু হলে, উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে জেলার বাইরে যেতে হবে না রোগীদের। আমরা দ্রুত এই ভবনে হাসপাতালের কার্যক্রম চালুর দাবি জানাচ্ছি।
ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মতলেব মিয়া বলেন, আমরা চাই দ্রুত হাসপাতালটি চালু হোক। আমরা উন্নত সেবা পাব।
রোগীর স্বজন মহিবুন্নাহার বলেন, ২৫০ শয্যা হাসপাতাল বাগেরহাটবাসীর স্বপ্ন ছিল। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ভবন নির্মাণ হলেও, সেবা পাচ্ছি না আমরা। এ হাসপাতালটি চালু হলে মানুষ উন্নত সেবা পেত।
জামশেদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি মহাদয়ের কাছে আবেদন করছি যাতে দ্রুত এ হাসপাতালটি চালু হয়। তাহলে আমরা উপকৃত হব।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাগেরহাটবাসীর একটু বড় ধরণের কোনও সমস্যা হলে খুলনাসহ বড় শহরে চিকিৎসা সেবা নিতে যেতে হয়। আমাদের ২৫০ শয্যা হাসপাতালটি চালু হলে এখানেই পর্যাপ্ত সেবা পেতাম। আর দূরে যাওয়া লাগত না।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ বলেন, ভবন নির্মাণের সময় যে অস্থায়ী মিটার ছিল, তার বিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দিয়েছে। বর্তমানে বকেয়া বিলের মিটারটি সিভিল সার্জন মহোদয়ের নামে রয়েছে।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. জি কে এম সামসুজ্জামান বলেন, ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে আমরা ভবনটি বুঝে নিতে পারছি না। এ বিষয়টি আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ভবন বুঝে নেওয়ার আগের বিদ্যুৎ বিল স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পরিশোধের কোনও সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন বলেন, ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ কাজ দেড় বছর আগে শেষ হলেও, স্বাস্থ্য বিভাগ ভবনটি বুঝে নিচ্ছে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষে তাদের অস্থায়ী মিটারের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছে। সিভিল সার্জনের নামের মিটারে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার বিষয়টি পরস্পর সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান করে দ্রুত হস্তান্তরের জন্য চেষ্টা চলছে।