ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

নুসরাত হত্যা: ‍রুহুল আমিন আটক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:১৬ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় আটক করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ‍রুহুল আমিনকে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে তাকে সোনাগাজীর তাকিয়া বাজার থেকে আটক করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনেভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই’র এএসপি মনিরুজ্জামান।

রুহুল আমিন নুসরাতের প্রতিষ্ঠান সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি। এই কমিটি অবশ্য শুক্রবারই বাতিল হয়ে গেছে।

গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে তারা চাপ দেয়। ২৭ মার্চ সিরাজের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা হয়েছিল।

দগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান নুসরাত।

এই ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় প্রথম থেকেই আলোচনায় মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনের নাম। হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নুসরাতকে পোড়ানোর বিষয়টি জানতেন। এমনকি নুসরাতকে আগুনে ঝলসে দেওয়ার পর মুখোশধারীরা ফোনে বিষয়টি তাকে জানালে রুহুল আমিন উত্তর দেন, ‘আমি জানি। তোমরা চলে যাও’।

নুসরাত হত্যার পর সোনাগাজী পরিদর্শনে আসা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও পুলিশ সদরদফতরের প্রতিনিধি দলের তরফ থেকেও বলা হয়েছে, ২৭ তারিখ মাদ্রাসার কমিটি ব্যবস্থা নিলে ৬ মার্চ নুসরাতকে আগুনে পোড়ানোর ঘটনাটি হয়তো এড়ানো যেতো।

শ্লীলতাহানির মামলায় আগে থেকেই কারাবন্দি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। হত্যা মামলা হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। সিরাজ উদদৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, শরীফ ও হাফেজ আবদুল কাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই চারজনের স্বীকারোক্তিতেই নুসরাত হত্যার ঘটনায় রুহুল আমিনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। শামীম তার জবানবন্দিতে জানান, নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর তিনি দৌড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যান। বাইরে গিয়ে মোবাইল ফোনে বিষয়টি রুহুল আমিনকে জানান। প্রত্যুত্তরে রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি জানি। তোমরা চলে যাও।

বাকি আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজ উদদৌলাকে ৭ দিন, আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে ৫ দিন, জাবেদ হোসেন ৭ দিন, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, আবছার উদ্দিন, আরিফুল ইসলাম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, শামীম ও যোবায়ের হোসেনকে ৫ দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক হয়েছে নুসরাতের সহপাঠী মো. শামীম ও জান্নাতুল আফরোজ মনি।

এরই মধ্যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করতে থানায় যাওয়ার পর নুসরাতের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ায় ১৫ এপ্রিল সোনাগাজী থানার ওই সময়ের (নুসরাত হত্যার পর প্রত্যাহার) ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করা হয়েছে। এ মামলাও তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।

আরকে//