চীনের অর্থনৈতিক প্রত্যাশা
মোহাম্মদ জমির
প্রকাশিত : ০৯:২৪ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার
কয়েক বছর ধরে চীনের অর্থনীতির ক্রমাগত রুগ্ণ দশা এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের জের ধরে প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবের বিষয়টি খানিকটা নিরপেক্ষভাবেই আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে, চীনের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় অনেক বেশি তীব্রতর হয়ে উঠেছে।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বার্ষিক প্রতিবেদন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও), ২০১৯-তে যা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চলতি বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশেরও বেশি হবে, যদিও প্রতিবেদনের পরবর্তী অংশে চীন সরকারের ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া আরো বলা হয়, ২০২০ সালের দিকে হয়তো প্রবৃদ্ধির মাত্রা ৬ দশমিক ৩ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশ কমে যেতে পারে, যা কিনা সাম্প্রতিক বছরগুলোর শ্লথগতি সত্ত্বেও চীনের শক্তিশালী অর্থনীতিকেই নির্দেশ করে।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুউকি সাওয়াদা তার পর্যবেক্ষণে বলেন, চাহিদাসাপেক্ষে খরচ বা ভোগ ব্যয়ের ৩ দশমিক ৯ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এটি সম্ভব হয়েছে কারণ ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে চীনের সরকার ব্যক্তিগত আয়কর সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে নতুন করবেষ্টনী ও উচ্চমান ভাতা কার্যকরের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে তার সমর্থন জোরদার করে। তাছাড়া ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অতিরিক্ত কর্তনের বিষয়টিও সংযোজিত হয়েছে।
সরবরাহের দিক থেকে এডিও প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ সালে ৭ দশমিক ৯ শতাংশের তুলনায় ২০১৮ সালে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমলেও প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে সেবা খাত। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, জিডিপি বৃদ্ধিতে চীনের সেবা খাতের অবদান ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। তাছাড়া সেবা খাতের কল্যাণে দেশটির জিডিপি ৫১ দশমিক ৯ থেকে ৫২ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
নিবন্ধের এ পর্যায়ে বিষয়টি উল্লেখ করা সমীচীন, চলতি বছরের মার্চে চীনের ১৩তম জাতীয় পিপলস কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে স্টেট কাউন্সিলর যে বক্তব্য প্রদান করেন, তাতে বেশ কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে।
চীনের অর্থনীতির ওপর নিম্নমুখী চাপের বিষয়টি উল্লেখপূর্বক তিনি দেশটির নীতিমালা ও পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থিতিশীল প্রত্যাশা, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং কাঠামোগত সমন্বয়ের বিষয়গুলো নিশ্চিত করার কথা বলেন। এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থনীতির সমন্বয় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। তিনি উল্লেখ করেন, স্থানীয় সরকারের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধের বোঝা কমাতে বকেয়া ঋণ প্রতিস্থাপনে চীনা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকারের বন্ড ইস্যু সম্প্রসারণ করতে পারে। তিনি আরো আশস্ত করেন, অর্থায়ন প্লাটফর্মগুলোয় স্থায়ী ঋণপ্রাপ্তির সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বাজারপন্থা উৎসাহিত করবে এবং নিশ্চিত করবে যে উদ্যোগগুলো মাঝপথে বন্ধ হবে না। কার্যকরভাবে এগুলো অবশ্যই বিচক্ষণ পদক্ষেপ।
লি কেকিয়াং আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপকের প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার বলেছেন। আর তা হলো, স্থিতিশীল ও বৈচিত্র্যময় কর্মসংস্থান সৃষ্টি। চীন সরকার নির্দিষ্ট কিছু পরিমাপকের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যা কিনা বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্যও প্রযোজ্য। দেশটির কলেজ গ্র্যাজুয়েট, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সামরিক কর্মী ও গ্রামীণ অভিবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন সরকার। একই সঙ্গে তারা চাকরির সুরক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি পড়া শহুরে চাকরিজীবীদের সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো, এ বিষয়টিও লি কেকিয়াংয়েরই প্রস্তাবিত। আর তা হলো, যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী কিংবা শহুরে বেকারদের কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেবে, পরবর্তী তিন বছরের জন্য শুধু তাদের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর ও ফি কাটা হবে। সবার সুবিধার কথা ভেবে চীন সরকার নিয়মনীতিগুলোও শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে আইনের বাস্তবায়ন আরো বেশি কার্যকর করে তোলা সম্ভব বলেও তারা জোর দিয়েছে। সব প্রশাসনিক পর্যায়ে আইন ও আইনি বিধানগুলো আরো ঐক্যবদ্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এটি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে যে তা দুর্নীতির সম্ভাবনা হ্রাস কমাবে, নিরপেক্ষ আচরণ করবে এবং বৈষম্য রোধ করবে।
আরো একটি আকর্ষণীয় পরিমাপক চীনা কর্তৃপক্ষের সমর্থন পেয়েছে। তারা যথাযথভাবে বুঝতে পেরেছে বর্তমানের ডিজিটাল যুগে অগ্রগতি অর্জনের জন্য একটি ক্রেডিট রেটিংভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মানদণ্ডের মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন। চীন উপলব্ধি করে এটি আইন কার্যকর করতে এবং পরিবেশগত সুরক্ষা, অগ্নিপ্রতিরোধ, কর সংগ্রহ ও বাজার তত্ত্বাবধানে সহায়তা করবে। উপরন্তু আইন লঙ্ঘনকারীদের সহজে চিহ্নিত ও শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হবে।
বাণিজ্যযুদ্ধ ও শুল্ক বিতর্কের ফলে চীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা শুধু সরকারের বিভিন্ন বিভাগে আইন প্রণয়নের সমন্বয় এবং সরকারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয় না, বরং শাস্তিমূলক প্রয়োগের নিশ্চয়তা দেয়; যা কিনা এরই মধ্যে চীনের রফতানি শিল্পের জন্য সুফল বয়ে আনছে।
চলতি বছর থেকে চীনের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য গড় ব্রডব্যান্ড সার্ভিসের ব্যয় ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনা হচ্ছে এবং পরবর্তী সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবার গড় খরচও ২০ শতাংশ কমানো হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বিতর্কের পর চীন সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মসূচি এবং নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কিত গবেষণা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণকে গুরুত্ব দিচ্ছে। প্লাটফর্মগুলোর মাধ্যমে তথ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা ভাগ করে উন্নয়নের গতি বাড়ানোর জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। মূলত আইনিভাবে বৌদ্ধিক সম্পত্তি ব্যবহারের অধিকার এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অগ্রিম প্রয়োগের এক উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এছাড়া চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় গতিবেগ অর্জনের নিমিত্তে মৌলিক গবেষণা ও প্রয়োগিক মৌলিক গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা বাড়ানো হচ্ছে, যা কিনা উদ্ভাবনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে। এ লক্ষ্যে চীনের কর্মকর্তারা একমত হয়েছেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগারগুলোয় সংশোধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ গবেষণাগার চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংস্কার করা হবে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামগুলোর ব্যবস্থাপনা উন্নত করা সম্ভব হবে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা যত দ্রুত এ ধরনের কার্যক্রমগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন ততই তা দেশের জন্য মঙ্গলকর।
গত কয়েক বছরে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে চীনের বিপক্ষে উত্থাপিত বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক সত্ত্বেও চীন কীভাবে তার অগ্রগতির ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে, তা যে কেউই অনুমান করতে পারে।
বর্তমানের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচিবিষয়ক ঋণ, স্বচ্ছতা এবং চীনের আন্তর্জাতিক প্রভাবের পাশাপাশি উদ্যোগটি ঘিরে বিভিন্ন দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঘোচাতে এপ্রিলের শেষ নাগাদ গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের পক্ষ থেকে নেতিবাচক সাড়া সত্ত্বেও চীন কিন্তু ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচি ঘিরে ইতালির সমর্থন আদায় করে নিয়েছে। বিশেষ করে গত মার্চে প্রথম কোনো জি৭ তালিকাভুক্ত দেশ হিসেবে ইতালি ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগে স্বাক্ষর করেছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কনতেও চীনের ওই সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন। তার দেশ ইতালি কেন ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচির অংশ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়টিরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। তার কথামতে, এ উদ্যোগ চীন ও ইতালির মধ্যকার প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করবে। তবে ভিন্ন একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বিষয়টি ইতালির সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আগমনের দিনকয়েক আগে ইতালির ২০১৯ সালের অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে ব্যাপক সংশোধন আনা হয়। গত বছরের অক্টোবরে সরকারের পূর্বাভাস অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধির ১ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে যদি শূন্যও হয়, তা সত্ত্বেও রোম কিন্তু খুশিই হবে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক করপোরেশনের (ওইসিডি) সর্বশেষ অর্থনৈতিক প্রতিবেদনটি আরো হতাশাজনক। যেখানে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির অনুমান করা হয়েছে। এ নিম্নগামী প্রবণতার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো ইতালির বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, যা কিনা তাদের সাবধানী ভোক্তা হতে বাধ্য করছে।
উল্লেখ্য, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, গ্রিস ও পর্তুগালের মতো ইউরোপের দেশগুলো চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে।
যদিও পশ্চিমা অন্য দেশগুলো চীনের উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করতে অনাগ্রহী। তবে ঘটনা কোন দিকে মোড় নেয়, বিষয়টি তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। বিদ্যমান সন্দেহের প্রতিক্রিয়ার জবাবে চীন বলেছে, ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কোনোভাবেই ঋণের ফাঁদ হবে না, এটি বরং সবার জন্য উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ একটি কার্যক্রম।
বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কীভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে, তার সঙ্গেও বিষয়টির একটি যোগসূত্র রয়েছে। ইইউ বর্তমানে ব্রেক্সিটের মতো একটি জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আগামী মে মাসের শেষে অনুষ্ঠেয় ইইউ নির্বাচনের আগে বিষয়টি ঘিরে মতপার্থক্যও রয়েছে, যা বিচ্ছেদ ও একত্রীকরণের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করছে।
সপ্তাহখানেক আগে শি জিনপিং যখন ইউরোপ সফর করেন, তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়, ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় নেতারা চীনের সঙ্গে একটি সুষ্ঠু বাণিজ্যিক সম্পর্ক চান বলে তাকে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচি ঘিরেও তারা তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যদি কিনা এর মাধ্যমে চীনের বাজারে তাদের প্রবেশের পথ সুগম হয়।
যদিও ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচির জনপ্রিয়তাবিষয়ক প্রশ্নে চীন খানিকটা চাপে রয়েছে, বিশেষ করে শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া ও মালদ্বীপ সরকারের শীতলতা সত্ত্বেও নতুন প্রশাসন তাদের পূর্বসূরিদের সঙ্গে চীনের চুক্তিগুলোর বিষয়ে সতর্ক। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ৫৭ ডলার মূল্যের অর্থনৈতিক করিডোর উদ্যোগটি সফলতা অর্জন করেছে, যা কিনা বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প। এটিকে ভারত যদিও সন্দেহের চোখে দেখছে। ওই প্রকল্পের সফলতা প্রসঙ্গে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তহবিলের ২০ শতাংশ ঋণের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া বাকি অর্থের বন্দোবস্ত করা হয়েছে সরাসরি চীনা বিনিয়োগ ও অনুদানের মাধ্যমে।
যাই হোক, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাঠামোর সফলতা এখনো নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বিদ্যমান পার্থক্যগুলো সমাধানের ওপর, যার মধ্যে অন্যতম বৌদ্ধিক সম্পত্তি, বাধ্যতামূলক প্রযুক্তি স্থানান্তর, অশুল্ক বাধা, কৃষি ও সেবাখাত। উভয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চলছে, কোনো পক্ষই সমঝোতায় পৌঁছেনি। একবার যদি চুক্তি সম্পাদন হয়, তাহলে চীন তাদের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে ইইউ নেতৃত্বের সঙ্গে তাদের একটি চুক্তিতে আসতে হবে। প্রস্তাবিত যৌথ সম্মেলনের বিবৃতি অনুসারে চীনে শুরু হতে যাওয়া আসন্ন বৈঠকে চীনা প্রশাসন বিষয়টি সম্পাদনের চেষ্টা করছে। এজন্য চীনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংকে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্কের সঙ্গে একটা সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। আর এটি কিন্তু মোটেও সহজ নয়।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার
muhammadzamir0@gmail.com