ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মুসলিমদের ধ্বংস করতে মোদীকে ভোট দিন: বিজেপি নেতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০৬ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৩:১১ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

রঞ্জিত বাহাদুর শ্রীবাস্তব।

রঞ্জিত বাহাদুর শ্রীবাস্তব।

মুসলিমদের ধ্বংস করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের বিজেপি নেতা রঞ্জিত বাহাদুর শ্রীবাস্তব। লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের বারাবাঁকিতে এক নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি ওই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মনোবল ভেঙে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেজন্য আপনারা যদি মুসলিমদের ধ্বংস করতে চান তাহলে নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দিন। দেশভাগের পর থেকে ভারতে মুসলিমদের জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার ভোটদানের মাধ্যমে তারা এই দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাচ্ছে। এখনই না আটকানো গেলে তারা একদিন তাতে সফল হবে।’

বিজেপি’র ওই নেতা বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনের পরে চীন থেকে দাড়ি কাটার মেশিন নিয়ে আসা হবে। সেই মেশিন দিয়ে ১০/১২ হাজার মুসলিমের দাড়ি শেভ করা হবে। এরপর তাদেরকে জোর করে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হবে। নরেন্দ্র মোদী বা বিজেপিকে ভোট না দিলে এর বিপরীতটাও হতে পারে। সেজন্য ওই ধরনের অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এবং মুসলিমদের ধ্বংস করতে মোদী ও বিজেপিকে ভোট দিন।’

বিজেপি নেতার ওই মন্তব্য প্রসঙ্গে আজ (শনিবার) পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মাতিন রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘গোলওয়ালকর, হেডগেওয়ারের বইগুলো পড়লে বোঝা যাবে তাতে স্পষ্ট লেখা আছে যে মুসলিম, কমিউনিস্ট, খ্রিস্টান তারা জাতির অংশ নয় এবং তাদের ধ্বংসের কথা অনেক আগেই বলা হয়েছে।

এটা হয়তো তারা এখন নতুন ভাষায় বলছে। চীন থেকে ব্লেড নিয়ে এসে দাড়ি কাটা হবে, ধর্মান্তরিত করা হবে, এগুলো হচ্ছে নতুন ভাষা। যদি ধর্মান্তরিত করাই হয় তাহলে তাদেরকে হিন্দু ধর্মের কোথায় ঠাই দেওয়া হবে? ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,  বৈশ, শূদ্র না অতি শূদ্র কোন স্তরে তাদেরকে স্থান দেওয়া হবে?’

তিনি বলেন, ‘বিদ্বেষ অনেক আগে থেকেই ছিল। মেনকা গান্ধীও সম্প্রতি বলেছেন। আসলে ভারতের গণতন্ত্র জিউস-ইসরাইলি মডেলের এথনিক ডেমোক্রেসির দিকে ঝুঁকছে। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে গণতন্ত্র থাকবে কিন্তু সেই গণতন্ত্রে একটা বিশেষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে প্রাতিষ্ঠানিক গণতান্ত্রিক কোনও প্রক্রিয়ায় রাখা হবে না।

এখানে নির্বাচন হবে, ভোট হবে, ক্ষমতা হস্তান্তরও হবে কিন্তু ওদেরকে বাদ দিয়ে সব হবে। যার ফলে এটা এক ধরণের নেহাতই ইসরাইলের জিউস মডেল অব ডেমোক্রেসি। এখানে এই মডেলে মুসলিম সম্প্রদায়কে, হয়তো বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে খুব পদ্ধতিগতভাবে জাতি গঠনের প্রক্রিয়া থেকে বাইরে বের করে দেয়া হবে।

মুসলিমদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। বেনাগরিক করার কথা বলা হয়েছে। যার ফলে এটা দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প। বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা এই যেসব কথা বলছেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আমরা অবাক এজন্যই হচ্ছি যে, এসব বিতর্কিত ও আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদের জন্য তথাকথিত সেক্যুলার মূলধারার কোনও রাজনৈতিক দল অন্য ভাষায় কথা বলছে না।

তারাও কিন্তু কমবেশি একই ভাষায় একই ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। বিজেপি এসব কথা বলবে এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু তথাকথিত সেক্যুলার বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বিক্ষিপ্ত দু`একটা প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও সম্মিলিত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে না।’

‘এসব ইস্যুতে সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া পেলে এই দেশটার এভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে এতটা অধঃপতন হতো না’ বলেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মাতিন মন্তব্য করেন।

তথ্যসূত্র: পার্সটুডে

এমএইচ/