ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

ইস্টার সানডে

যিশুর আত্মত্যাগ স্মরণে যেসব আয়োজন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৫ এএম, ২১ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ইস্টার সানডে আজ রোববার। এটি খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্টের পুনরুত্থান দিবস।

বাইবেল অনুযায়ী, কালভেরি পর্বতে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যান যিশু। মৃত্যুর ঠিক তিনদিন পর ছিল রোববার, আর সেই পবিত্র দিনে পুনরুত্থান হয় যিশুর। মৃত্যু থেকে পুনরায় জীবিত হয়ে স্বর্গে ফিরে যান তিনি।

বলা হয়, যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান কিংবা নবজন্মকে স্মরণ করার জন্য এই বিশেষ দিনটির নামকরণ করা হয়েছে দেবী ‘ইয়োস্ত্রে’র নাম অনুসারে। জার্মান প্যাগান ধর্মের এই দেবী ইয়োস্ত্রের নাম থেকে এসেছে ইস্টার শব্দটি। তিনি ছিলেন নবজন্ম এবং উর্বরতার দেবী। ছোট খরগোশ এবং ডিম ছিল তার প্রতীক।

যিশুর আত্মত্যাগ স্মরণ করতে ইস্টারের ৪৫ দিন আগে থেকে শুরু হয় বিশেষ কর্মসূচি প্রায়শ্চিত্তকাল। প্রায় ছয় সপ্তাহের এই সময়ে রোববার দিন বাদে প্রতিদিন নানাভাবে নিজের পাপের জন্য অনুতাপ প্রার্থনা করে খ্রিস্টানরা। উপবাস থাকা, নিয়মিত প্রার্থনা আর পাপস্বীকারের মাধ্যমে পালিত হয় প্রায়শ্চিত্তকাল।

রোববার বাদে উপবাস থাকার এই কর্মসূচি চলে ৪০ দিন। এছাড়া প্রায়শ্চিত্তকালে প্রতি শুক্রবার বিশেষভাবে প্রায়শ্চিত্ত করে খ্রিস্টানরা। কারণ বাইবেলের মতে, যিশুর মৃত্যু হয়েছিল শুক্রবারে ঠিক দুপুর তিনটায়।

ইস্টার সানডের আগের শুক্রবার তাই বেশ ঘটা করে পালিত হয় গুড ফ্রাইডে। অনেকে এই দিনকে ব্ল্যাক ফ্রাইডে বা গ্রেট ফ্রাইডে বলেন। কালো পোশাক পরে সেদিন যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুর শোক অনুভব করতে খ্রিস্টানরা সমবেত হন গির্জায়, চলে বিশেষ প্রার্থনা।

তবে বড়দিনের মতো ইস্টার সানডে কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তারিখে পালিত হয় না। বলা হয়, ২১ মার্চের পর যখন আকাশে প্রথম দেখা যায় পূর্ণ চাঁদ, তার পরের রোববার পালন করা হয় ইস্টার।

মূলত গ্রেগরিয়ান এবং জুলিয়ান ক্যালেন্ডারসহ বেশ কয়েকটি দিনপঞ্জিকার হিসেব মিলিয়ে বের করা হয় ইস্টারের তারিখ, যা ৪ এপ্রিল থেকে ৮ মের মধ্যে যে কোনো সময় হতে পারে।

ইস্টারের একটি বড় আকর্ষণ হল, ‘ইস্টার এগ’ বা ‘ইস্টারের ডিম’। ডিমকে ধরা হয় নতুন জীবনের প্রতীক হিসেবে, ঠিক যেমন করে নতুন জীবন পেয়েছেন যিশু।

ইস্টার উপলক্ষ্যে মুরগির সেদ্ধ করা ডিমের খোলসের উপর তৈরি করা হয় নানা ধরনের নকশা। পেঁয়াজের খোসা, বাদাম, ফুলের পাঁপড়ি থেকে শুরু করে রংতুলি, সুতা-জরি আরও অনেককিছু দিয়ে সাজানো হয় এই ডিমগুলো। দেশ এবং সংস্কৃতি অনুযায়ী এর ব্যবহার ভিন্ন।

আমেরিকাসহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে ইস্টারের আগের দিন চলে ডিমে নকশা করার কাজ। সারাদিন ডিমে নকশা করার পর রাতের বেলা পরিবারের ছোটরা ঘুমিয়ে পড়লে বড়রা ডিমগুলো লুকিয়ে ফেলেন বাড়ির বিভিন্ন স্থানে। এরপর ইস্টার সানডের সকালে শুরু হয় ডিম খোঁজার প্রতিযোগিতা। সেদ্ধ করা মুরগির ডিম ছাড়াও এখন পাওয়া যায় চকলেট ডিম এবং প্লাস্টিকের ডিম, যেগুলোতে থাকে নানা ধরনের ক্যান্ডি। ডিম নিয়ে করা হয় আরও একটি বিশেষ খেলা, যার নাম এগ রোল। এই খেলায় শিশুরা তাদের নকশা করা ডিমকে লম্বা হাতলওয়ালা একটি চামচ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। যার ডিম যত দ্রুত পৌঁছাতে পারবে সীমানায়, সেই হবে বিজয়ী। আমেরিকার বাইরে ইউরোপের অনেক দেশে এই খেলার প্রচলন রয়েছে। ইস্টার উপলক্ষে ডিম নিয়ে নাচানাচিও করা হয়! মেঝেতে অনেক নকশা করা ডিম ঢালাওভাবে বিছিয়ে তার উপর শুরু হয় নাচ। লক্ষ্য একটাই, ভাঙা যাবে না কোনো ডিম। এই খেলার উৎপত্তি জার্মানিতে। আর বুলগেরিয়া, গ্রিস এবং সাইপ্রাসের অধিবাসীরা ইস্টারের দিন পরিবারের সদস্যদের গায়ে ডিম ছুড়ে মারেন। ডিম না ভাঙাকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। লেবাননে ইস্টারের আগের দিন বাড়িতে সাজিয়ে রাখা হয় নকশা করা ডিমগুলো। ইস্টারের দিন বাড়ির বাচ্চারা সেই ডিম ভেঙে খায় এবং বিশ্বাস করে যিশু পুনরায় জীবন ফিরে পেয়েছেন।

চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়াতে ইস্টারের পরের দিন চলে পানি খেলা। সকালবেলা একটি বিশেষ কঞ্চির সাহায্যে পছন্দের নারীর গায়ে আলতোভাবে আঘাত করেন পুরুষেরা, অনেকে ছুড়ে মারেন ঠাণ্ডা পানি। কথিত আছে, আগামী এক বছরের জন্য নারীদের সৌন্দর্য এবং সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে এই বিশেষ কঞ্চির আঘাত পাওয়া জরুরি! এমনকি কোনো নারীকে যদি আঘাত না করা হয়, তবে তিনি মন খারাপ করেন। রীতি অনুযায়ী নারীরা পুরুষদের একটি করে ডিম উপহার দেন, যেগুলো তারা নিজের হাতে নকশা করে থাকেন। অথবা তার বাড়িতে দাওয়াত করেন। আর যদি কোনো বাচ্চা আসে, তবে তাকে দেওয়া হয় মিষ্টি কিংবা খুচরো পয়সা। সেদিন বিকেলে প্রতিশোধ নিতে পারেন নারীরা, তখন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো পুরুষের গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়া পোল্যান্ডে চলে দিনব্যাপী পানি খেলা।

ইস্টার বানি অর্থাৎ ইস্টারের খরগোশ হল অনেকটা সান্তাক্লজের মতো। বলা হয়, ইস্টারের আগের দিন রাতে ঝুড়িতে করে রঙিন ডিমসহ নানা ক্যান্ডি এবং খেলনা নিয়ে শিশুদের বাড়িতে রেখে যায় ইস্টার বানি। উর্বরতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয় খরগোশকে। চকলেট ইস্টার বানি বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তবে ডিম কিংবা খরগোশ, কোনোটির উল্লেখ নেই বাইবেলে। গুয়াতেমালা এবং ব্রাজিলে ইস্টার উপলক্ষে রাস্তা সাজানো হয় এক ধরনের বিশেষ কার্পেট দিয়ে, যা তৈরি হয় বিভিন্ন রংয়ের ফুলের পাপড়ি এবং কাঠের গুঁড়ি দিয়ে। ইস্টারের ঠিক ৪৯ দিন আগে অনুষ্ঠিত হয় ব্রাজিলিয়ান কার্নিভাল। ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে বিভিন্নভাবে উদযাপন করা হয় চারদিনব্যাপী এই উৎসব।

এসএ/