ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

জীবন যুদ্ধে হার না মানা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আযাহারুল

তবিবুর রহমান

প্রকাশিত : ০৩:২৯ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৫:১২ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আযাহারুল

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আযাহারুল

কোনো সমস্যাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আযাহারুল ইসলামের সামনে। জন্মের পর থেকেই ভালোভাবে পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ হয়নি তার। নিজের উদ্যম আর ইচ্ছা শক্তি দিয়েই শেষ করেছেন পড়ালেখা। প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলে মানুষ পৃথিবীকে জয় করতে পারে। সেটিই করে দেখিয়েছেন আযাহারুল। অনার্স ও মাস্টার্স-এ প্রথম বিভাগে পাশ করে চমকে দিয়েছেন সবাইকে। 

এই অদ্যম মনোবল নিয়ে আযাহারুল এখন চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন যুদ্ধ। শুধু তাই নয় বর্তমানে রাজধানীর একটি স্কুলে খন্ডকালীন বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। আযাহারুল ইসলামের জন্ম জামালপুর জেলায় এক হতদরিদ্র কৃষক পরিবারে। পরিবারে চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে আযাহারুল দ্বিতীয়। লেখাপড়া শেষ করে ভাল শিক্ষক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেশের সেবা করতে চান তিনি।

নানা-প্রতিবন্ধকতার পরও সে পড়ালেখায় সফল হয়ে সমাজে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সিংহজানী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ভাল ফলাফল করে ভর্তি হন সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে। এইচএসসি ও অনার্স-এ একই কলেজ থেকে পড়াশুনা করে প্রথম বিভাগে পাশ করে সবাইকে চমকে দেন। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজে এসে ২০০৮-২০০৯ সেশনে মাস্টার্সে ভর্তি হন আযাহারুল।

ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়ে তোর চোখে আর ঘুম নেই। ভালো ফলাফলের আশায় দিনরাত পড়াশুনা করতে থাকেন। অবশেষে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আযাহারুল সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথম বিভাগে পাশ করেন।

বর্তমানে টিচার্স ট্রেনিং কলেজে এম এডের শিক্ষার্থী তিনি। থাকেন ঢাকা কলেজের ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রাবাসে ৩০৮ নং রুমে। গতকাল শনিবার ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে আযাহারুলের সঙ্গে কথা হয় একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদকের। এসময় তিনি তার জীবনের সাফল্য ও সংগ্রামের কথা বর্ণনা করেন।

আযাহারুলের মা ছেলে সম্পর্কে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, আযাহারুলের চোখে আলো না থাকলেও ছোটবেলা থেকে নিজের কাজ নিজে করার চেষ্টা করতো। তার প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও অদম্য আগ্রহ তাকে এতো দূর নিয়ে এসেছে। সে অন্যান্য স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতো কলেজে গিয়ে ক্লাস করে। নিজে মোবাইল চালায়। নিজের হাতে খাওয়া দাওয়া করে। ফুটবল-ক্রিকেট খেলাসহ নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করে। আমার ছেলে শিক্ষক হয়ে আলোকিত মানুষ গড়তে চায়।

আযাহারুল ইসলাম বলেন, মা বাবার প্রচন্ড আগ্রহ ও সবার সহযোগিতায় আমি এই পর্যন্ত এসেছি। পড়াশুনা শেষ করে ভাল শিক্ষক হয়ে দেশ সেবা করতে চাই।

650

এই অবস্থানে আসতে গিয়ে কোন প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক বাধা ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে এখানে আসতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হলো যখন স্কুল কলেজে পড়তাম তখন বন্ধুরা আমাকে মেনে নিতে পারেনি। এমনকি অনেক শিক্ষক খারাপভাবে কথা বলতো। তারা বলতো- পড়ালেখা করে তুমি কি করবা, ভালো অংঙ্ক-ইংরেজি জাননা। তুমি পারবা না। এসব কথা আমাকে খুব কষ্ট দিত। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি। আমি চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার। 

আযাহারুল এক বুক কষ্ট নিয়ে বলেন, বিভিন্ন পরীক্ষায় শিক্ষকরা আমাকে নম্বর কম দিতো। তবুও আমি হাল ছাড়েনি। আনেক সংগ্রাম আর কষ্টের পর এই অবস্থানে এসেছি। আমি সবাইকে বলবো- আপনারা আমার মতো এই সমাজে আরও যারা আছে তাদেরকে যদি সহযোগিতা করতে না পারেন, অবহেলা করবেন না।

টিআর/