ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বিশ্বকাপের ৯ হ্যাট্টিক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:১৯ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার

ক্রিকেটে একজন বোলারের জন্য সবচেয়ে কঠিন অর্জন সম্ভবত হ্যাট্টিক করা। অনেকেই বলে থাকেন একজন বোলারের পাঁচ উইকেট সমান একজন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি। তবে একজন বোলারের হ্যাট্টিকের সমান কিছুই হতে পারে না।

পর পর তিন বলে তিন উইকেট পেতে হলে একজন বোলারের একিউরিসি, ধারাবাহিকতা, দক্ষতা এবং ভাগ্যেরও সহায়তা পেতে হবে। যেহেতু হ্যাট্টিক পাওয়া একটি বড় অর্জন এবং সেটা যদি হয় বিশ্ব আসরে তবে একজন বোলার গর্বের সহিত সেটা তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলতে পারে।

আগামী ৩০মে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে শুরু হতে যাচ্ছে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর। ১৯৭৫-২০১৫ আসর পর্যন্ত ১১টি বিশ্বকাপে ৯টি হ্যাট্টিক দেখেছে ক্রিকেট ভক্তরা।

দেখে নিন বিশ্বকাপের ৯ হ্যাট্টিক-

চেতন শর্মা

ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড (নাগপুর ১৯৮৭)
সারা জীবন কপিল দেবের ছায়া হয়ে থাকা ভারতীয় পেসার চেতন শর্মা বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাট্টিকের কৃতিত্ব অর্জন করেন।

গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে পর পর তিন বলে তিন ব্যাটসম্যান কেন রাদারফোর্ড, ইয়ান স্মিথ এবং এউয়েন চ্যাটফিল্ডকে বোল্ড আউট করে বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম হ্যাট্টিকের কৃতিত্ব অর্জন করেন। ক্রিকেটের সব ফর্মেটেই ভারতের প্রথম হ্যাট্টিক ম্যান চেতন শর্মা।

সাকলাইন মুশতাক

পাকিস্তান বনাম জিম্বাবুয়ে (লন্ডন ১৯৯৯)
এটা হতে পারে কঠিন। তবে টেল এন্ড বিধ্বস্ত করা মূলত একটা শিল্প। সাকলাইন মুশতাক সেটা বলতে পারেন। কেননা হ্যাট্টিকের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের টেল এন্ড ধ্বসিয়ে দিয়েছেন তিনি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে হেনরি ওলোঙ্গা, এ্যাডাম হাকল এবং পমি এমবাঙ্গোয়াকে পরপর তিন বলে আউট করে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন।

প্রথম দুই ব্যাটসম্যাকে উইকেটরক্ষক মঈন খানের দক্ষতায় স্টাম্পড করলেও তৃতীয় জনকে এলবিডব্লু’র ফাঁদে ফেলেন সাকলাইন। আউট হওয়া তিন জনের ব্যাটিং সক্ষমতা বিবেচনা করলে এ হ্যাট্টিক এখনো তার কাছে বিশেষ অনুভূতি।

চামিন্দা ভাস

শ্রীলংকা বনাম বাংলাদেশ (পিটারমারিজবার্গ ২০০৩)
২০০৩ বিশ্বকাপের দশম ম্যাচ। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় শ্রীলংকা। বল হাতে আক্রমণে এসে প্রথম তিন বলেই তিন ব্যাটসম্যান হান্নান সরকার, মোহাম্মদ আশরাফুল এবং এহসানুল হক সিজানকে আউট করে ইতিহাসের খাতায় নাম লেখান চামিন্দা ভাস। ইনিংসের প্রথম তিন বলেই হ্যাট্টিক করা প্রথম খেলোয়াড় ভাস। শেষ পর্যন্ত সহজেই ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় শ্রীলংকা।

ব্রেট লী

অস্ট্রেলিয়া বনাম কেনিয়া (ডারবান ২০০৩)

কেনেডি ওটিয়েনো স্টাম্পড, ব্রিজাল প্যাটেল সেকেন্ড স্লিপে পন্টিংয়ের হাতে ক্যাচ এবং এরপর ডেভিড ওবুয়াকে ইয়র্কারে ঘায়েল করেন ব্রেট লী।

সুপার সিক্স পর্বের ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের এ আসরে দ্বিতীয় হ্যাট্টিক করেন লী। কেনিয়ার ১৭৪ রানের জবাবে ৫ উইকেট হারিয়ে সহজ জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

লাসিথ মালিঙ্গা

শ্রীলংকা বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (প্রোভিডেন্স ২০০৭)
সুপার এইট পর্বের ম্যাচে শ্রীলংকার করা ২১০ রানের জবাবে ৫ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০৬ রান তুলে সহজ জয়ের পথে ছিল। এমন অবস্থায় বল হাতে লাসিথ মালিঙ্গা রিভার্স স্যুয়িং কাজে লাগিয়ে চার বলে পর পর চার উইকেট শিকার করেন।

মালিঙ্গার ইয়র্কার ও স্লো বলে একে একে ঘায়েল হন শন পোলক, এন্ড্রু হল, জক ক্যালিস এবং মাখায়া এনটিনি। হঠাৎ করেই প্রোটিয়ারা আরেকটি চোকিং মুহূর্তে চলে আসে। কিন্তু রবিন পিটারসন সে অবস্থা থেকে টেনে তুলে দলের জয় নিশ্চিত করেন। তবে মালিঙ্গার দুর্দান্ত স্পেলটি বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকালের সেরাদের একটি হিসেবে থেকে যাবে।

কেমার রোচ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম নেদারল্যান্ডস (দিল্লি ২০১১)

বি’ গ্রুপের ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩০ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে এক পর্যায়ে ১১৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে নেদারল্যান্ড। এমন অবস্থায় পুনরায় আক্রমনে এসে মুল সর্বনাশটা করে দেন কেমার রোচ।

আক্রমনে এসে পর পর তিন বলে পিটার সিলার, বার্নার্ড লুটস এবং বেরেন্ড ওয়েস্টডিককে আউট করেন। ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ছিল ৮.৩-০-২৭-৬। প্রথম দুই ব্যাটসম্যান এলবিডব্লুর শিকার হন। শেষ বলটি ইয়র্কার মারলে বুঝতেই পারেননি ব্যাটসম্যান।

লাসিথ মালিঙ্গা

শ্রীলংকা বনাম কেনিয়া (কলম্বো- ২০১১)

বিশ্বকাপ ইতিহাসে দু’টি হ্যাট্টিক করা একমাত্র বোলার শ্রীলংকার লাসিথ মালিঙ্গা। ২০১১ বিশ্বকাপে এ’ গ্রুপে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পিটার অনগোন্ডো, শেন এনগোচে এবং এলিনা ওটেইনোকে আউট করে হ্যাট্টিক পূর্ণ করেন মালিঙ্গা। মূলত মালিঙ্গার ইয়র্কার বুঝতেই পারেননি কেনিয়ান ব্যাটসম্যানরা।

অনগোন্ডো এলবিডব্লু এবং এনগোচে ও ওটেয়েনো সরাসরি বোল্ড আউট হওয়া ম্যাচে লংকানরা ১৪২ রানে জয় পায়। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া মালিঙ্গার বোলিং ফিগার ছিল ৭.৪-০-৩৮-৬।

স্টিভেন ফিন

ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া (মেলবোর্ন, ২০১৫)

২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের প্রথম ম্যাচে স্টিভেন ফিনের বোলিং পারফরমেন্স হয়তোবা খুব আহামরি ছিলনা। তবে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের প্রথম এবং একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাট্টিক করেছেন।

টস জিতে ইংল্যান্ড আগে বোলিং বেছে নিলে অস্ট্রেলিয়া নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪২ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করায়। খুব সাদামাটা বোলিং করে প্রথমে ৭১ রানে ২ উইকেট শিকার ফিনের। অসি ব্যাটিংয়ের সামনে হ্যাট্টিক করবেন এটা হয়তোবা স্বপ্নেও ভাবেননি ফিন। কিন্তু নিজের শেষ ওভারে ব্র্যাড হাডিন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং মিচেল জনসনকে আউট করে হ্যাট্টিক পুর্ন করেন।

জেপি ডুমিনি

দ:আফ্রিকা বনাম শ্রীলংকা (সিডনি- ২০১৫)

বিশ্বকাপে নক আউট পর্বে হ্যাট্টিক করা একমাত্র বোলার দক্ষিণ আফ্রিকার জেপি ডুমিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপ কোয়ার্টারফাইনালে শ্রীলংকার বিপক্ষে হ্যাট্টিক করেন দক্ষিণ আফ্রিকার এ অলাউন্ডার।

১১৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ ভাল অবস্থানে ছিল শ্রীলংকা। এ সময় এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ও কুমার সাঙ্গাকারা বেশ ধৈর্য্যশীলভাবে ব্যাটিং করছিলেন। এমন অবস্থায় তিন বলে একে একে ম্যাথুজ, নুয়ান কুলাসেকারা এবং থারিন্ডু কৌশলকে হারিয়ে হ্যাট্টিক পূর্ণ করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবারের মত নক আউট পর্বে জয় এনে দেন ডুমিনি।

এসএ/