ঢাকা, বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

গণমাধ্যম কর্মীদের সুরক্ষায় আসছে দুটি আইন: তথ্যমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:০১ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:২৮ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার

গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষায় জাতীয় সংসদের অধিবেশনে দুটি আইন উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বুধবার জাতীয় সংসদের একটি অধিবেশন শুরু হবে। কিন্তু এ অধিবেশনে আমরা আইন দুটি উপস্থাপন করতে পারব না। তবে আশা করছি, এর পরের অধিবেশনে আইন দুটি উপস্থাপন করতে পারব।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক, সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ, বিজেসির ট্রাস্টি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, রাশেদ আহমেদ, নূরসাফা জুলহাস, মানস ঘোষ, সাইফ ইসলাম দিলাল, রাহুল রাহাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তাদের সুরক্ষায় গণমাধ্যমকর্মী আইন ও সম্প্রচার আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, আইন মন্ত্রণালয় দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেটিং দিয়ে দেবে। এরপরই আমরা আইন দুটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করব। তবে আগামীকাল (বুধবার) শুরু হওয়া অধিবেশনে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে না। আশা করছি, এর পরের অধিবেশনে উপস্থাপন করতে পারব।’

এ আইন দুটি পাস হলে যখন তখন চাকরি চলে যাওয়াসহ সাংবাদিকদের যেসব সমস্যা দেখা দেয় সেগুলোর আইন প্রটেকশন দেয়া সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।

 

সাংবাদিকদের জন্য আলাদা তহবিল গঠনের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জন্য ট্রাস্ট গঠন করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক ট্রাস্টের মাধ্যমে কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে সহায়তা করা যায়। অন্য কোনো কারণে সাহায্য করা যায় না। ইতোমধ্যে আমরা আলোচনা করেছি, চাকরি চলে যাওয়াসহ অন্যান্য অসুবিধায় সহায়তার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’

 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হওয়ার কারণে সাংবাদিকদের নানা সমস্যা, প্রতিকূলতা এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সমস্যার সাথে আমি আগে থেকেই পরিচিত। এ কারণে আমি এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর নিজে উদ্যোগী হয়ে এবং গণমাধ্যমের সহায়তায় এসব সমস্যা সমাধানে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন,‘এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আইন ভঙ্গ করে বাংলাদেশে ডাউনলিংকপূর্বক সম্প্রচারিত সব বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করা। পৃথিবীর কোনো দেশেই বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার হয় না। এটি আমরাও বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি’

তিনি বলেন, বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল সেটাকে শৃঙ্খলায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বিশৃঙ্খলার জন্য প্রায় হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিদেশে চলে যাচ্ছে। যেটা বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো পেতে পারতো। এ টাকা দেশি চ্যানেলগুলো পেলে অর্থ সঙ্কট হতো না। অনেক ক্ষেত্রে বার্তা বিভাগ বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, এগুলো হতো না।

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের অভিমত হচ্ছে, ক্যাবল নেটওয়ার্কগুলো যখন ডিজিটালাইজড হবে তখন এটি বাস্তবায়ন সহজ হবে। এ জন্য কোয়াবের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে এ বছরের মধ্যেই ডিজিটালাইজড করতে পারবে। তবে আমি তাদের অনুরোধ জানিয়েছি, ঢাকা-চট্টগ্রামের পাশাপাশি দেশের সব সিটি কর্পোরেশনে যেন এ বছরই ডিজিটালাইজড করা হয়।’

বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, ক্যাবল নেটওয়ার্কের যে সিস্টেমটা, সেটাকে ডিজিটালাইজ করা দরকার। এটি না করার কারণে, অপারেটররা যে টাকাটা গ্রাহকদের থেকে নিচ্ছে, সেটি তারা পুরোটাই নিয়ে যাচ্ছে। তারা এখন বলছে যে, আমাদের যদি ডিজিটালাইজড করা হয়, সব হিসাব আমাদের মধ্যে থাকবে। সেক্ষেত্রে আমাদের এ কাজটা করতে সহজ হবে। পাশাপাশি আরেকটি কথা উঠেছে যে, পে চ্যানেল হওয়া। এটা যখন ক্যাবল নেটওয়ার্ক ডিজিটালাইজড হবে, তখন সম্ভব হবে। অপারেটররা প্রথমে চাইছিলেন না, কিন্তু সরকার কঠোর হওয়ায় একটা টাইম বেঁধে দেওয়ার ফলে অপারেটররা এটা করতে বাধ্য হয়েছে।

বিজেসির ট্রাস্টি, সারাবাংলা ডটনেট, দৈনিক সারাবাংলা ও জিটিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, আমরা আসলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের টেলিভিশন সাংবাদিকরা একটা ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়েছি। কারণ প্রতিদিন আমাদেরকে চাকুরি নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে অফিসে যেতে হচ্ছে। প্রচুর চ্যানেলে বেতন নাই, অনেকে চাকরিচ্যুত হচ্ছে। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রান চাই। আমরা আপনার উদ্যোগ চাই। গণমাধ্যমকর্মী আইনটি দ্রুততার সঙ্গে সংসদে উত্থাপন করা এবং একই সঙ্গে শ্রম আইনেও যেন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিষয়টি থাকে, সেটি আপনি উদ্যোগ নেবেন। তার সঙ্গে সম্প্রচার আইনটিও খুব দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন চাই।

বিজেসির সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ বলেন, আপনি যে দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন, এর পরে আর একদিনও বাংলাদেশে প্রচারিত কোন বিদেশি টেলিভিশনে যেন বিজ্ঞাপন প্রচারিত না হয়, তার জন্য শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

বিজেসির ট্রাস্টি রাহুল রাহা বলেন, আমাদের এখানে বিদেশি চ্যানেলগুলো ডাউনলিংক করা হলে কয়েকটা শর্ত দেয়া দরকার। প্রথমত আমাদেরকে ভালো একটা ফি দিতে বাৎসরিক। দ্বিতীয়ত ক্লিন ফিট পাঠাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে কোনো গণমাধ্যম কর্মী চাকরিচ্যুত হলে তখন তার আর কোনো কিছু করার উপায় থাকে না। উন্নত দেশগুলোতে সেসময়ে তাকে একটা টাকা দিতে থাকে। পরে সে যখন চাকরি পায়, তখন সে এটা শোধ করতে থাকে। এরকম একটা ফরমেট সরকার গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য তৈরি করতে পারে কি-না বা একটা ফান্ড করা যায় কি-না, আমার কাছে মনে হয় আমাদের দেশের জন্য এটা জরুরি।

এসি