‘যাত্রাশিল্পের নবযাত্রা’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী যাত্রা উৎসব শুরু
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:১৯ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৪:৪৯ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার
যাত্রাপালা বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ। ‘যাত্রাশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
যাত্রাশিল্পের নবযাত্রা শীর্ষক ৫টি নতুন যাত্রা প্রযোজনা নিয়ে ২৪-২৬ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী ‘যাত্রা উৎসব ২০১৯’ শুরু হয়েছে। একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬.৩০ থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে তিন দিনব্যাপী যাত্রা উৎসব ও ‘যাত্রাপালার বিবেক’ শীর্ষক গবেষণাধর্মী কর্মশালা, যাত্রাশিল্পী সম্মাননা প্রদান।
২৪ এপ্রিল এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৬.৩০ উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি এবং বিশিষ্ট নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ লিয়াকত আলী লাকী এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক মো: বদরুল আনম ভূঁইয়া।
উদ্বোধনী আয়োজনে একাডেমির কন্ঠশিল্পীরা যাত্রাপালার গান পরিবেশন করেন। যাত্রাপালার গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন একাডেমির নৃত্যশিল্পীবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে যাত্রা শিল্পে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনজন যাত্রাশিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্ত শিল্পীরা হলেন ভিক্টর দানিয়েল, গৌরাঙ্গ আদিত্য, সুলতান সেলিম।
২৪ এপ্রিল উদ্বোধনী আলোচনা শেষে সন্ধ্যা ৭টায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মিলন কান্তি দে’র পালা রচনা ও নির্দেশনায় দেশ অপেরা প্রযোজিত যাত্রাপালা ‘এক যে ছিল মহারানি’ এবং মামুনুর রশীদ এর পালা রচনায়, হাবিব সারোয়ারের নির্দেশনায় জয়যাত্রা প্রযোজিত ‘দ্বীপের নাম আন্ধার মানিক’ যাত্রাপালা পরিবেশিত হয়।
২৫ এপ্রিল ২টি যাত্রাপালা প্রদর্শিত হবে। পালাকার শ্যামল দত্তের যাত্রাপালা ‘দুউ বিঘা জমি’। লোক নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত পালাটি নির্দেশনা দিয়েছেন তাপস সরকার। পালাকার ড. আমিনুল ইসলাম এর ‘সোহরাব রুস্তম’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ প্রযোজিত পালাটি নির্দেশনা দিয়েছেন রেজা আরিফ।
উল্লেখ্য, দেশজ ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির লালন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। নাটক, পাপেট, চলচ্চিত্র, যাত্রা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে বেশকিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ। এর মধ্যে অন্যতম যাত্রাপালা। যাত্রাপালা আমাদের দেশের সুদূর অতীতে গ্রামে সুরুচিপূর্ণ ও আকর্ষনীয় বিনোদন হিসেবে দর্শককে বিপুল আনন্দ প্রদান করতো এবং বিনোদনের অন্যতম শিল্প মাধ্যম ছিলো যাত্রাপালা। যাত্রাপালার পুরনো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষে ও যাত্রা শিল্পেকে দর্শকনন্দিত করার জন্য শিল্পকলা একাডেমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র পরিকল্পনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ২০১২-১৩ অর্থ বছরে দেশের ৬৪টি জেলা শিল্পকলা একাডেমির অংশগ্রহণে ৭৬টি মুক্তযুদ্ধভিত্তিক নাটক নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় নাট্যোৎসব’, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে দেশের ৬৪ জেলার অংশগ্রহণে আয়োজন করে ‘স্বপ্ন ও দ্রোহের নাট্যোৎসব’, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে দেশের ৬৪টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাহিত্য নির্ভর জাতীয় নাট্যোৎসব’ এবং মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতেকে সামনে রেখে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মূল্যবোধের নাট্যউৎসব আয়োজন করে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে জেলাভিত্তিক কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ অবলম্বনে নির্মিত হয় ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৬৪ জেলায় নির্মিত হচ্ছে দেশীয় যাত্রাপালা। এছাড়াও আগামী ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে নির্মিত হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৬৪টি নাটক।
ইতোমধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় সুষ্ঠু যাত্রা শিল্পের প্রসারের জন্য যাত্রা শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২ প্রণিত হয়েছে। এই নীতিমালার আলোকে ২০১৩ থেকে শিল্পকলা একাডেমি যাত্রাশিল্প নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে। কর্মশালা ভিত্তিক ৫টি যাত্রাপালা প্রযোজনা নির্মাণ ও প্রদর্শনী, ৬৪ জেলায় দেশীয় যাত্রাপালা নির্মাণ ও মঞ্চায়ন, সেমিনার আয়োজন, যাত্রা ব্যক্তিত্বদের নিয়ে স্মরণসভা আয়োজন, দেশীয় যাত্রাপালা মূল্যায়ন, প্রত্মযাত্রা ‘ঈশা খাঁ এবং রক্তাক্ত প্রান্তর যাত্রাপালা নির্মাণ ও প্রদর্শনী আয়োজন। এছাড়াও ১০টি যাত্রা উৎসবের মাধ্যমে ১১১টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়েছে।
শিল্প সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ইতিবাচক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যাত্রাশিল্পের হারানো গৌরব ফিরে পাবে বলে প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
এসি