ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

বিএনপির আরো ৪ এমপি শপথ নিচ্ছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:২০ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:৫৭ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার

 

খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন যাবে না বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুরু দিকে এমন কথা বলে আসলেও দিন শেষে ড. কামালের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেই দলটি। মাত্র আটটি আসন পায় ঐক্যফ্রন্ট। দলটির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় কেউ শপথ নিবেন না।

তবে দলীয় এমন সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে তিন জন শপথ নিয়েছে। গতকাল দলীয় সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান শপথ নিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

শুরুতে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে ড. কামালের ঘনিষ্ঠজন সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ নেয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের বেঈমান ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর থেকে বিএনপির শক্ত অবস্থান থেকে বলা হয়, অন্তত বিএনপির কেউ শপথ নেবেন না। কিন্তু নির্বাচিত পাঁচজন সমপ্রতি দলের হাইকমান্ডকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন তাদের শপথের জন্য অনুমতি দিতে। এরই মধ্যে সমপ্রতি দলের স্থায়ী কমিটিতে লন্ডন নেতা তারেক রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পৃক্ত হয়ে ঘোষণা দেন, যাতে দলের কেউ শপথ না নেন। কিন্তু দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া দলের নির্বাচিত পাঁচ সংসদ সদস্য আগামী ৩০ এপ্রিলের আগে যে কোনো দিন শপথ নেবেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আটজন নির্বাচিত হন। এর মধ্যে গণফোরামের দুজন নির্বাচিত হন। ছয়জন নির্বাচিত হন বিএনপির টিকিটে। এই আটজনের মধ্যে সাতজনই ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হন। একমাত্র গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান নির্বাচিত হন দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য প্রতীকে। তবে তিনি দলীয় ভোটে নয়, বিএনপির ভোটব্যাংক কাজে লাগিয়েই সিলেট-২ আসন থেকে জয়ী হয়েছেন।

৩০ডিসেম্বরের ভোটের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সর্বোতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে, নির্বাচিত আটজনের কেউ-ই একাদশ সংসদে শপথ নেবে না। শপথ নিলে বহিষ্কার করা হবে।বিএনপি শুরু থেকেই বলে আসছে ৩০ ডিসেম্বর কোনো ভোট-ই হয়নি। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করায় এই সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে যারা সংসদে শপথ নেবেন দল বহিষ্কার করলেও তাদের সংসদ সদস্য পদ যাবে না। বিএনপি থেকে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিচ্ছেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও কোনো প্রভাব পড়বে না। তাদের এমপি পদ টিকে যাবে।

জাতীয় ঐকফ্রন্টের অঙ্গীকার সর্বপ্রথম ভঙ্গ করেন মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। তিনি শপথ নেয়ার পরপরই তাকে গণফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর শপথ নেন মোকাব্বির খান, তাকে এখনও বহিষ্কার করা না হলেও শোকজ করা হয়েছে। আজ গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে তাকে বহিষ্কার করা হতে পারে।

এই দুজন শপথ নেয়ার পর বিএনপি গণফোরামের ওপর বিশেষ করে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছিল। সেই সঙ্গে দলীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠকে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি শপথ না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এসব তোয়াক্কা না করে শপথ নিয়েছেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদ ভবনে তার দফতরে জাহিদকে শপথবাক্য পাঠ করান।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্য দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়া বাকি চারজনই শপথ নিতে পারেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তারসহ চারজন।এ ব্যাপারে তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে স্পিকারের কার্যালয়ে যোগাযোগও করেছেন। যদিও এ বিষয়ে তারা মুখ খুলতে নারাজ।

এদিকে জাহিদ শপথ নেয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে দলটির হাইকমান্ড। শপথের পরপরই নির্বাচিত এমপিদের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে না যাওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ শপথ নিলে তা ‘সাংগঠনিক অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনায় এনে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- শপথগ্রহণ না করা। এই সিদ্ধান্তকে অমান্য করে যদি কেউ শপথগ্রহণ করে থাকেন তা নিঃসন্দেহে সাংগঠনিক অপরাধ। অবশ্যই এ রকম ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুতই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র জানায়, ৩০ এপিলের মধ্যেই বিএনপি থেকে নির্বাচিত আরও কয়েকজন সদস্য শপথ নিতে পারেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে তারা স্পিকারের কার্যালয়ে যোগাযোগও করেছেন। শপথ এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে তারা অনেকের সঙ্গে পরামর্শ করছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বগুড়া-৪ থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি এখনও দলীয় সিদ্ধান্তে অনড় আছি। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেখানেই থাকব। তবে দলের রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। দেখা গেছে ১০ মিনিট আগেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন আসতে পারে। তাকিয়ে আছি, দেখি কী হয়। দলের বাইরে তো কিছু করার নেই।

এদিকে জাহিদ শপথ নেয়ায় নড়েচড়ে বসেছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নেয়ায় তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি উঠেছে। তার নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীরাও জাহিদের কর্মকাণ্ডে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। দ্রুত বসে তার ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে- আমরা সংসদে যাব না। দলের সিদ্ধান্ত যিনি অমান্য করবেন তিনি দলের ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন না। দলের সিদ্ধান্ত, দলের আদর্শ এবং নেত্রীকে জেলখানায় রেখে কেউ যদি শপথ নিয়ে থাকে এবং ভবিষ্যতে নেয় তারা জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে চলার যোগ্যতা রাখে না। তারা হল গণদুশমন। জনগণই তাদের বিচার সময়মতো করবে এবং সেটার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হবে।

এবিষয় জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে যারা সংসদে শপথ নেবেন দল বহিষ্কার করলেও তাদের সংসদ সদস্য পদ যাবে না । বিএনপি থেকে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিচ্ছেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও কোনো প্রভাব পড়বে না। তাদের এমপি পদ টিকে যাবে। সংবিধানের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে- কেউ যদি দলের বিপক্ষে জাতীয় সংসদে ভোট দেন বা দল থেকে যদি তারা পদত্যাগ করেন, তা হলে তাদের সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে। দল বহিষ্কার করলে তাদের সদস্যপদ বাতিল হবে না।

টিআর/