জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪৩ এএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০২:১৪ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার
আজ ২৮ এপ্রিল ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’। সপ্তমবারের মতো দেশে পালিত হবে দিবসটি। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় শেখ হাসিনার অবদান বিনামূল্যে লিগ্যাল এইডে আইনি সেবাদান’।
দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সমাজে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংশ্লিষ্ট সকলে অবদান রাখার আহবান জানিয়েছেন।
‘আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২০১৯’ পালিত হচ্ছে জেনে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সংবিধানে সকল নাগরিকের আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারকে অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অসচ্ছলতা, অজ্ঞতা ও নানাবিধ আর্থ-সামাজিক প্রতিকূলতার কারণে দেশের গরিব-দুঃখী ও সহায় সম্বলহীন জনগণ অনেক ক্ষেত্রে আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। সংবিধানে বর্ণিত ‘আইনের সমান আশ্রয়লাভ’ এর অধিকারকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০’।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করার মাধ্যমে সমাজের হতদরিদ্র ও অসচ্ছল জনগোষ্ঠী বর্তমানে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা পাচ্ছে। সরকারের এ আইনগত সহায়তা কার্যক্রমে সকলের অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
আবদুল হামিদ বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিচারক, আইনজীবী, এনজিও কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগের ওপর নির্ভর করছে আইনি সহায়তা কার্যক্রমের সফলতা। তিনি ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস – ২০১৯’ পালন সাফল্য কামনা করেন।
অপরদিকে, এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজের সকল ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যেই দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে চাই। এজন্য সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের সমৃদ্ধ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সকল ধরনের ভয়ভীতি ও বৈষম্য দূর করে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি’র অন্যতম লক্ষ্য ‘ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার’ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন ও নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে দেশের কোনো নাগরিক যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্যে আমরা ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করেছি।’
অসহায়, দরিদ্র ও নিঃস্ব জনগণকে বিনা খরচে সরকারি আইন সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জেলা লিগ্যাল এইড অফিসসমূহ ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’র কেন্দ্রস্থল হিসেবে মামলার পক্ষসমূহের মধ্যে আপোষ-মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করছে, যা সারাদেশের আদালতসমূহে মামলাজট হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম স্বপ্ন ছিল সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করা। তিনি ১৯৭২ সালে মহান সংবিধানে মানুষের মৌলিক অধিকার এবং সব নাগরিকের আইনের আশ্রয় পাওয়ার সমানাধিকার নিশ্চিত করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশে আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়। ’৭৫ পরবর্তী বিএনপি-জামাত জোট সরকার হত্যা, দমন, নির্যাতন ও নিপীড়নের রাজত্ব কায়েম করে। সুবিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়। দেশের জনগণ আইনগত সহায়তা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
বাণীতে তিনি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দেশব্যাপী ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২০১৯’ পালন করা হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ এবং দিসবটির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার সহকারি পরিচালক (প্রশসান) ও সিনিয়র সহকারি জজ কাজী ইয়াসিন হাবিব বলেন, ২৮ এপ্রিল সকালে বিগত বছরের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জাতীয় আইনগত সুবিধা প্রদান দিবসের’ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছি। জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
তিনি জানান, ‘এবারই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রথম বারের মতো শ্রেষ্ঠ লিগ্যাল এইড অফিস, শ্রেষ্ঠ প্যানেল আইনজীবী ও লিগ্যাল এইডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রেষ্ট বেরসরকারী সংস্থা ক্যাটাগরিতে তিনটি পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সংশ্লিষ্টরা এ পুরস্কার গ্রহণ করবেন।’
তিনি বলেন, ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এবছরও দিবসটি পালনে দেশব্যাপি ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
২০১৩ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসটির প্রথম অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিগ্যাল এইড কল সেন্টার ‘জাতীয় হেল্পলাইন’-এর উদ্বোধন করেন। এ হেল্পলাইনে ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে জনগণ বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন।
সূত্র : বাসস
এসএ/