ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জাবির বটতলায় কি খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা?

নিলয় মামুন

প্রকাশিত : ০৯:০০ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ১০:০৬ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার

প্লেটে প্লেটে সাজানো বাহারি রকমের ভর্তা। মাছ থেকে শুরু করে ডাল, সীম কিংবা বাদাম দিয়ে বানানো হয়েছে এসব ভর্তা। দোকানে ডুকতেই যে কারো চোখে পড়বে এসব খাবার। এমন আকর্ষনীয়ভাবে সাজিয়ে রাখা হয়, দেখলে জিভে জল না এসে উপায় নেই। এটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার খাবারের দোকানের চিত্র। কিন্তু এমন মুখরোচক খাবার কতটা স্বাস্থ্য সম্মত ও কিভাবে তৈরী হয় তা বিন্দু মাত্র যাচাই করেন না, এখানকার ক্রেতা শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা।

যে কারণে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন বিভিন্ন পেটের পীড়া ও গ্যাষ্টিক এর মত রোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে।

অনেকে আবার এসব খাবারের কারণে দীর্ঘমেয়াদী লিভারের সমস্যায়ও ভুগছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা.তৌহিদুর রহমান জানান, ‘প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ রুগীই আসে খাদ্য জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে।’

তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে নূন্যতম পেটের পীড়া ও গ্যাষ্টিকের প্রাথমিক চিকিৎসার পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকার কারণে মেডিকেলে এসেও সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার জানান, ‘বটতলার খাবারের মধ্যে সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর হলো ভর্তা। হরেক রকমের এসব সুস্বাদু ভর্তার মধ্যে রয়েছে নিম্নমানের তেলের আধিক্য। বেশিরভাগ ভর্তাই দেখা যায় প্রতিদিন সম্পূর্ণ বিক্রি হয়না। তাই পরের দিন এসব ভর্তা নতুন কিছু ভর্তার সঙ্গে মিশিয়ে অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভাজা হয়। আর এগুলো তখন দেখতে নতুন ভর্তার মত মনে হয়।’ এছাড়া প্রতিদিন নতুন ভর্তা বানাতেও অতিরিক্ত তেল তারা ব্যবহার করেন বলে জানান তিনি।

তার দাবি, ‘কিছু খাবারে হয়তো আমরা অতিরিক্ত মশলা ও তেল ব্যবহার করি। কিন্তু সবচেয়ে বেশি তেল ব্যাবহার হয় এই ভর্তায়। ৭০-৮০ টাকার ভর্তায় দেখা যায় প্রায় ১৫০-২০০ গ্রাম তেল দিয়ে তা ভাজা হয়। কেন এসব বিক্রি করেন বা এমন অতিরিক্ত তেল ব্যাবহার করেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সবাই বিক্রি করে তাই আমরাও করি। একবার স্যাররা এসব বন্ধ করে দিয়েছিলেন,পরে আবার বিক্রি শুরু করেছে সবাই’।

শুধু মাত্র ভর্তায়ই নয়, অন্যান্য খাবারের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, পুরনো খাবার ফ্রিজে রেখে পরের দিন গরম করে তা বিক্রি করতে। প্রত্যেকটি খাবারে অতিরিক্ত মশলাও ব্যাবহার করতে দেখা যায় দোকানদারদের।

এছাড়া কিছু নির্ধারিত আইটেম বিক্রি করতে দোকানদারদের বলা হলেও তারা হরেক রকম খাবার তৈরী করছেন। তাই প্রায়ই বাহিরের দর্শনার্থী না আসলে এসব বেশির ভাগই অবিক্রিত থেকে যায়। যা পরের দিন তারা বিক্রি করেন। অনেক দোকানদারকে দেখা যায় কবুতরের মাংসও বিক্রি করতে। আর এসব বিক্রি না হলে পরের দিন মুরগীর মাংস,কয়েলের মাংস মিশিয়ে তা বিক্রি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার জানান, ‘কোন দোকানেই কবুতরের মাংস বলতে কিছু নেই। কয়েলের মাংস তারা ছোট ছোট করে তা কবুতর বলে চালিয়ে দেন।’ অনেক দোকানের পেছনে গিয়েও দেখা যায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে এসব খাবার। আর প্রত্যেক দোকানের খাবারই খোলা রাখা হয়। এতে দেখা যায় প্রায়ই মাছি বসে খাবারে।

অন্যদিকে খাবারের মান ভালো না করার পিছনে কিছু শিক্ষার্থী খেয়ে টাকা না দেওয়ার কারণকেও দায়ী করছেন দোকানদাররা। তাদের দাবি, ছাত্র রাজনীতি করেন এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের কাছে আমরা হাজার হাজার টাকা পাই। যার কারনেও খাবারের মান ভালো করা সম্ভব হচ্ছে না।

পূর্বে হল প্রশাসন এসব বিষয়ে মাঝে মাঝে তদারকি করলেও বর্তমানে বেশিরভাগ হলই এ বিষয়ে উদাসীন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোষ্ট অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগেও আমি বটতলার কিছু দোকানের ভর্তা ফেলে দিয়েছি। কিন্তু এদের প্রায়ই সতর্ক করার পরও তারা এসব করছে। দোকানের বরাদ্ধ বাতিলসহ কঠোর পদক্ষেপ না নিলে তারা কোন ভাবেই থামছে না। এছাড়া হল প্রশাসনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও যদি একটি মনিটরিং সেল গঠন করে তা প্রতিদিন তদারকি করে, তাহলে এ সমস্যা কিছুটা কমে বলে মনে করছি।’

এসি