ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

শোকজ হতে পারে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:২৬ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৬:৩৩ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৯ সোমবার

গ্রামীণফোনসহ তিন মোবাইল অপারেটরের কাছে সরকারের পাওনা ১৫ হাজার ১৬০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে কেবল গ্রামীণফোনের কাছেই সরকার পায় ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অডিট হিসাবে গ্রামীণফোনের কাছে পাওয়া এ অর্থ আদায়ে উদ্যোগী হবে বিটিআরসি। এই টাকা না দিলে অপারেটরটির এনওসি বন্ধ, কল ব্লক এমনকি লাইসেন্সের বিষয়ে শোকজ করা হতে পারে।

সোমবার টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এর সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে বিষয়গুলো জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক।

বিটিআরসির সম্মেলন কক্ষে টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার খান শিপুর সঞ্চালনায় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি মুজিব মাসুদ। এসময় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিদ বাপ্পীসহ টিআরএনবির কার্যনির্বাহী কমিটি ও এর সদস্যরা বৈঠকে ছিলেন।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, গ্রামীণফোন বলতে পারবে না যে, তাদের কথা শোনা হয়নি। এখন যদি হেরে যায় তাহলে সবাই বলে আমার কথা শুনলো না। গ্রামীণফোনের এই বক্তব্য ঠিক নয়।

গ্রামীণফোনের বক্তব্য শোনা হয়েছে। না শুনে কখনও কোনো অডিট নিস্পত্তি হয় না উল্লেখ করে তিনি জানান, তাদের যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। এরপর অডিট ফাইনাল হওয়ার পর এক বছর সময় চলে গেছে। তারা বিভিন্ন সময় এই-সেই ব্যাখ্যা দেয় কিন্তু টাকা দিতে চায় না। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে যে আইন অনুয়ায়ী যা হওয়ার তাই হবে।

গ্রামীণফোন কী ভাবলো, কী বললো তাতে কিছু যায়-আসে না। গ্রামীণফোনের কাছে টাকা ক্লেইম করবো। টাকা না দিলে আইনে যা যা স্টেপ নেয়ার কথা বলা আছে তা নেয়া হবে। তাদের যেসব সুবিধা দেয়ার কথা তাও দেয়া হবে। তারপরও যদি না দেয় তাহলে এনওসি বন্ধ করা, প্রয়োজনে কল ব্লক করে দেয়া, লাইসেন্সের বিষয়ে শোকজ করার মতো পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। এগুলো আইনের জিনিস, আইন গোপন কিছু না। আইনে যা যা ক্ষমতা আছে সব প্রয়োগ করা হবে।

তিনি বলেন, টাকা গ্রামীণফোনকে দিতেই হবে তা সে যাই করুক। যত দেরি করবে তত ইন্টারেস্ট বাড়বে । বৈঠকে টিআরএনবির নব নির্বাচিত কমিটির সদস্যবৃন্দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান।

এদিকে মোবাইল অপারেটরের কাছে ১৫ হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে বলে রোববার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নত্তোর পর্বে সংসদকে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি জানান, গ্রামীণফোনসহ তিন মোবাইল অপারেটরের কাছে সরকারের পাওনার পরিমাণ ১৫ হাজার ১৬০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে কেবল গ্রামীণফোনের কাছেই সরকারের পায় ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সম্পন্ন করা এক অডিট রিপোর্টে এই পাওনা দাবি করা হয়েছে।
এই টাকা পরিশোধের জন্যে দশ কার্যদিবস সময় দিয়ে গত ২ এপ্রিল গ্রামীণফোনকে চিঠি পাঠানো হলেও টাকা আদায় হয়নি। ফলে পুরো টাকাটাই সরকারের বাকির খাতায় চলে এসেছে।

সংসদে নিজের নিয়মিত প্রশ্নোত্তরে মোস্তফা জব্বারের কাছে অপারেটরদের বকেয়ার পরিমাণ জানতে চান সরকার দলীয় সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ।

গ্রামীণফোনের পরেই তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব অপারেটর টেলিটক। তাদের কাছে থ্রিজি স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ এক হাজার ৫৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার অডিট আপত্তি রয়েছে সরকারের।
মন্ত্রী জানান, তিন বছর ধরে বন্ধ থাকলেও সিটিসেলের কাছে এখনো সরকারের ১২৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। তাছাড়া গ্রামীণফোনের সঙ্গে রবি’র অডিটও করা হয়েছিল। যেখানে সরকারের আরও ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।
অবশ্য বকেয়ার তালিকায় বাংলালিংকের নাম নেই।

মন্ত্রী জানান, সরকারি রাজস্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটরগুলো নিয়মিত অডিট করা হয়। সেই কার্যক্রম হিসেবেই গ্রামীণফোন ও রবি’র অডিট করা হয়েছে।

জব্বার বলেন, বাংলালিংক এবং এয়ারটেলে অডিট শুরুর লক্ষ্যে অডিটর নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এর আগে ২০১১ সালে বাংলালিংকের অডিট করার জন্যে অডিটর নিয়োগ করা হলেও শেষ পর্যন্ত অডিট সম্পন্ন করতে পারেনি তারা।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, তাদের সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ঘোষণা রয়েছে। এ কাজ বাস্তবায়নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
তাছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড ইতোমধ্যে একটি প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণ করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের উপর কার্যক্রম শুরু করেছে।

আরকে//