কুড়িয়ে পাওয়া পলিথিনে জ্বালানি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:০৯ পিএম, ১ মে ২০১৯ বুধবার
পাবনার ঈশ্বরদীর হেলাল নামে এক যুবক কুড়িয়ে পাওয়া পুরনো পলিথিন পুড়িয়ে উদ্ভাবন করছেন জ্বালানি তেল পেট্রোল, ডিজেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। উদ্ভাবিত জ্বালানি তেল ও গ্যাস দিয়ে স্থানীয় অনেক পরিবারে রান্নার কাজ চলছে, মোটরসাইকেল-গাড়িও চলছে চমৎকারভাবে।
ঈশ্বরদী পৌরসভার আলহাজ ক্যাম্প (মধ্য অরণকোলা) রিফিউজি কলোনি এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে হেলাল হোসেন পেশায় প্রাইভেটকার চালক। তবে এখন তার একটাই নেশা- পলিথিন দিয়ে পেট্রোল, ডিজেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খোলা মাঠে একটি বড় ড্রামে পলিথিন ভর্তি করে এর নিচে আগুন জ্বালিয়ে পলিথিন গলানো হচ্ছে। ড্রামের উপরিভাগে পাইপলাইন স্থাপন করে একটি পল্গাস্টিকের জারে জমা করা হচ্ছে পলিথিন পোড়ানো জলীয় বাষ্প। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে আরেকটি পল্গাস্টিকের জারে জমা হচ্ছে পেট্রোল, অন্য জারে ডিজেল এবং অন্য একটি স্টিলের বক্সের মাধ্যমে পাইপলাইনে গ্যাস বের হচ্ছে। সেখান থেকে লোহার পাইপের মাধ্যমে গ্যাসে আগুন ধরিয়ে সেই আগুনে জ্বালানো হচ্ছে ড্রামের পলিথিন।
হেলাল হোসেন বলেন, বছর দুয়েক আগে টেলিভিশনে জাপানের একটি প্রতিবেদনে প্রথম দেখতে পাই সেদেশে পুরনো টায়ার পুড়িয়ে কীভাবে পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাস উৎপাদন করে। সেই প্রতিবেদন দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে পলিথিন দিয়ে পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাস উৎপাদন করা যায় কি-না, তা ভাবতে থাকি। এক পর্যায়ে নিজস্ব বুদ্ধিতে একটি ছোট ড্রামে বিশেষ ব্যবস্থায় অল্প কিছু পলিথিন গলিয়ে তা থেকে পেট্রোল বের করার প্রাথমিক সফলতা পাই। পরে টেলিভিশনের সেই প্রতিবেদনের মতো করে অনেক চেষ্টায় একটি ড্রামের মধ্যে পলিথিন গলিয়ে সেই ধোঁয়া ও বাষ্প থেকে পেট্রোল, ডিজেলের মতো দাহ্য পদার্থ বের করে আগুন ধরিয়ে বুঝতে পারি আরেকটু চেষ্টা করলে হয়তো ভালো কিছু হতে পারে। প্রায় দুই বছর চেষ্টার পর একটি ম্যানুয়েল পল্গ্যান্ট স্থাপন করে সেখান থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করতে পারছি। গত দুই বছরে বেশ কয়েকবারের চেষ্টা বিফলে গেলেও হাল ছাড়িনি। ভেবেছি জাপানিরা পারলে আমরা কেন পারব না।
হেলাল বলেন, প্রথম প্রথম নিজের বাড়ির এবং আশপাশের লোকজন আমাকে `পাগলামি` বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেও আমি ওসবে কান দেইনি। তিনি বলেন, প্রথমে ঈশ্বরদীর আলহাজ মোড়ের পরিচিত এক মোটরসাইকেল মেকানিকের কাছে বোতলে করে নিজের উৎপাদন করা পেট্রোল নিয়ে যাই। তিনি দেখলেন এ দিয়ে ভালোই মোটরসাইকেল চলছে। সেখানকার অন্য মেকানিকরাও বলেছেন, বাজারের সাধারণ পেট্রোলের চেয়ে তার পেট্রোল অপেক্ষাকৃত ভালো। এ থেকে সবাই আমাকে উৎসাহ দেন। এখন ঈশ্বরদীর অনেকেই এই পেট্রোল দিয়ে নিয়মিত মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন।
হেলালের এই পল্গ্যান্টে প্রতিদিন ১০-১৫ কেজি পলিথিন পুড়িয়ে ৬ লিটার পেট্রোল, ২ লিটার ডিজেল ও ২ লিটার এলপি গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। এ ছাড়া পলিথিনের পোড়া বর্জ্য দিয়ে ফটোকপি মেশিনের কালি তৈরি হচ্ছে ২০০ গ্রাম। প্রথমে শখের বশে এসব করলেও এখন হেলাল প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লিটার পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাস উৎপাদন করতে পারছেন। তবে ড্রাম, কুলিং মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি যদি উন্নতমানের করা যায়, এই উৎপাদন আরও বাড়বে বলে জানান হেলাল। এর জন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।