শরীরে কেরোসিন ঢেলে গৃহবধূর আত্মহত্যা চেষ্টা: একদিন পর মৃত্যু
সাভার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯:২৭ পিএম, ৩ মে ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:৩১ পিএম, ৩ মে ২০১৯ শুক্রবার
সাভারে পারিবারিক কলহের জের ধরে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এক গৃহবধূ। এসময় স্থানীয়দের সহায়তায় স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় একদিন পর শুক্রবার ভোরে মারা যান অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূর হাসিনা আক্তার।
এঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নিহত গৃহবধুর বাবা আব্দুল আজিজ।
এঘটনায় নিহতের স্বামী নুরে আলমকে গ্রেফতার করেছেন সাভার মডেল থানা পুলিশ। নিহত গৃহবধূ হাসিনা আক্তার (৩৫) মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার পুটাইল গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে। সে স্বামী নুরে আলমের সঙ্গে সাভারের কর্ণপাড়া এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে থাকতো। দশ বছরের সিফাত নামে ওই দম্পতির একটি ছেলে রয়েছে।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ডা. রিজাউল হক বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসিনা আক্তার নামে এক নারী শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ ঘন্টা না হতেই শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল তিন টার দিকে পৌর এলাকার কর্ণপাড়া মহল্লার নুরে আলমের বাড়ির দোতলায় তার স্ত্রী হাসিনা আক্তার শরীরে আগুন নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছিলো। এসময় তার চিৎকারে স্বামী নুরে আলম ও পরিবারের লোকজনসহ প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। কিন্তু ততোক্ষনে হাসিনার পুরো শরীর আগুনে জলসে যায়। পরে মুমুর্ষ অবস্থায় স্বামী নুরে আলম ও প্রতিবেশীরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আইসিউতে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে মারা যান হাসিনা আক্তার।
নিহতের স্বামী নূরে আলম জানান, সে দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইজড হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। ঘটনার আগে সে বাড়ির নীচ তলায় মায়ের কক্ষে ছিলেন। পরে স্ত্রীর চিৎকার শুনে দোতালায় গিয়ে দেখেন হাসিনার শরীরে আগুন জ্বলছে। এসময় প্রতিবেশীদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি।
অগ্নিদগ্ধ হাসিনার মা রাফেজা বেগম জানান, প্রায় ১৩ বছর আগে পারিবারিকভাবেই নুরে আলমের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর তারা জানতে পারে নুরে আলম নেশাগ্রস্ত। বিয়ের পর তার মেয়ে নুরে আলমকে নেশা করতে বাঁধা দিলে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। নেশা করার প্রতিবাদ করায় হাসিনা ও তার শ্বাশুরির মধ্যে বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটতো। এ নিয়ে স্বামী এবং শ্বাশুরী মিলে আমার মেয়েকে মারধরসহ নানাভাবে নির্যাতন করতো। তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ২০১৭ সালে হাসিনা স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। এরপর মানিকগঞ্জের সদর থানায় নুরে আলমের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করলে ওই মামলায় নুরে আলম এক মাস জেলে থাকেন। পরে উভয় পরিবারের মধ্যে আপোষের মাধ্যমে নির্যাতন না করার শর্তে পুনরায় স্বামীর সংসারে ফিরে যায় হাসিনা। কিন্তু এরপরও হাসিনার উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চলতেই থাকে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নুরে আলম ও তার পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, নিহত গৃহবধুর মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এঘটনায় তার স্বামী নুরে আলম, তার মা এবং বোনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় নিহতের স্বামীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার অন্যান্য আসামীদেরও গ্রেফতরে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কেআই/