ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

স্রষ্টার প্রতি যান্ত্রিক বনাম স্বতঃস্ফূর্ত কৃতজ্ঞতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৫ এএম, ৫ মে ২০১৯ রবিবার

আমরা যখনই কারো সঙ্গে দেখা করি তখন আস্‌সালামু আলাইকুম বলে সালাম দেই। শুধু যন্ত্রের মতো দেওয়া সালাম আর অন্তর থেকে অন্যের কল্যাণ কামনায় একান্তভাবে উচ্চারিত সালামের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। আমি যখন জাপানে ছিলাম তখন অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি যে, জাপানের ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোর চলন্ত সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে থেকে একজন সুন্দরী সুকেমী সদাহাস্য তরুণী তোতাপাখির মতো একটানা কননিচিওয়া বা সুস্বাগতম বলছে। এ সম্ভাষণ যে শুধু দুটি পয়সা উপার্জনের আশায়, মন থেকে নয় বরং ঠোঁট থেকে উচ্চারিত, তা একটি শিশুও বুঝতে পারে।

আমরা প্রত্যেকেই হরহামেশা স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকি কখনো জিহ্বা থেকে, কখনো ঠোঁট থেকে, কখনো আনুষ্ঠানিকতার বাধ্যবাধকতা থেকে, কখনো অভ্যাসবশত আবার কখনো বা সওয়াবের আশায়। স্রষ্টার প্রতি উচ্চারিত বা অনুভূত কৃতজ্ঞতা তখনই রস সিঞ্চন করে ঝরণার মতো গতিময় ছন্দে প্রবাহিত হবে যখন আমরা মহাপ্রভুর প্রতি কেন কৃতজ্ঞ হব তা মগজ দিয়ে জানতে, বুঝতে ও হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে সক্ষম হব।

জ্ঞানের চক্ষু দিয়ে স্রষ্টার কারুকাজকে জানার মাত্রা যত বাড়বে অন্তরের চক্ষু ততো বেশি খুলে যাবে। কথায় বলে, যে অভাগা হীরক আর কাঁচের টুকরার মধ্যে পার্থক্য বুঝে না সে কীভাবে হীরকের যত্ন নেবে? যে মুক্তোকে চিনে না সে কীভাবে পাথরের ভিড় থেকে মুক্তোকে খুঁজে বের করবে? তাই আগে স্রষ্টার করুণাকে জানতে হবে, তারপর স্রষ্টার প্রতি কেন কৃতজ্ঞ হব সেই প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে এবং করুণাময়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্তর থেকে উৎসারিত হবে। নেপথ্যে ক্রিয়াশীল স্রষ্টার করুণাকে অবলোকন করার মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের প্রতিটি বিন্দুতে স্রষ্টার জ্ঞান, ক্ষমতা, করুণার যে প্রমাণ রয়েছে তাকে বিজ্ঞানমনস্ক মন দিয়ে খুঁজে বের করার মধ্য দিয়ে স্রষ্টাকে চেনা যাবে, জানা যাবে, অনুভব করা যাবে।

এভাবে এই মহাবিশ্ব ও পৃথিবীকে জানার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে আল্লাহতায়ালা খামখেয়ালিবশত মানবজাতিকে পৃথিবীতে পাঠাননি। তিনি অকল্পনীয় দক্ষতায় মহাবিশ্বে সৃষ্টির সূচনা করেছেন, সূর্য ও চন্দ্রকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন, পৃথিবীকে মানুষের আবাসযোগ্য করেছেন, সমস্ত সৃষ্ট জীবকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। সবকিছু সৃষ্টিকর্তা এজন্যে করেছেন যাতে মানবজাতি তার করুণাকে অনুভব করতে পারে, তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয় এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী চলে, তারই সন্তুষ্টি অর্জনের পথে অগ্রসর হয়। সৃষ্টির পরতে পরতে মানবজাতির জন্য স্রষ্টার করুণাকে অবলোকন করার মধ্য দিয়েই উৎসারিত হবে প্রতিপালকের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত কৃতজ্ঞতা।

 

ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী

(শোকরিয়া : প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের রাজপথ গ্রন্থ থেকে নেয়া)

 

এএইচ/টিআর