যাকাত মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:২১ পিএম, ৫ মে ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৫:২৫ পিএম, ৫ মে ২০১৯ রবিবার
যাকাতের মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বর্তমান পৃথিবীর অশান্তির অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য। পৃথিবীতে কখনও সম্পদের স্বল্পতা ছিল না, এখনও নেই। দারিদ্র্যের মূল কারণ হলো সমাজের কিছু মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জিভূত হওয়া, অবশিষ্ট জনগণের সম্পদশূন্য হওয়া। ১৬ জানুয়ারি সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, পৃথিবীর আট শীর্ষ ধনীর হাতে রয়েছে বিশ্বের মোট সম্পদের অর্ধেক। অর্থাৎ উক্ত আট ব্যক্তির কাছে যে সম্পদ আছে তা বর্তমান পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের সম্পদের সমান।
যাকাত কেন্দ্রীভূত সম্পদের ভাণ্ডারকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। যাকাত ব্যবস্থায় ধনী হতে দরিদ্রের মাঝে, মুষ্টিমেয় ব্যক্তির ভান্ডার হতে বিপুল জনগোষ্ঠীর হাতে সম্পদ আবর্তিত হয়। ফলে বৈষম্য হ্রাস পায়। একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো যে, যাকাত ফরয হওয়ার জন্য খুব বেশি সম্পদের প্রয়োজন নেই। মৌলিক খরচের অতিরিক্ত সম্পদ এক চান্দ্রবছর হাতে থাকলেই যাকাত দিতে হয় (স্বর্ণ বা রৌপ্যের হিসাবে)। আবার যাকাতের পরিমাণও খুব বেশি নয়, মাত্র ২.৫ ভাগ। কারণ ইসলাম চায় না সচ্ছল ব্যক্তি যাকাত দিতে গিয়ে আবার গরিব হয়ে যাকাতের হকদারের শ্রেণিতে নেমে আসুক। এভাবে যাকাতদাতা ও গ্রহীতার মাঝে অর্থনৈতিক ব্যবধান খুব দ্রুত সংকীর্ণ হয়ে আসবে। তাই বলা যায়, বণ্টন বৈষম্য দূর করে যাকাত অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে, ফলে দূরীভূত হয় দারিদ্র্য।
উৎপাদন বৃদ্ধিতে যাকাতের ভূমিকা : সমাজের ক্ষুদ্র একটি অংশের হাতে সম্পদ পুঞ্জিভূত হয়ে থাকলে উৎপাদন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। স্বচ্ছলতার অভাবে সাধারণ ভোক্তারা পণ্য ক্রয় করতে পারে না। ক্রয় ক্ষমতার অভাবে চাহিদা কমে, আর চাহিদার অভাবে উৎপাদন হ্রাস পায়। তদুপরি কেবল ধনিক শ্রেণির হাতে সম্পদ থাকার কারণে বাজারের পণ্য বৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ধনী ভোক্তাদের পণ্য শ্রেণি পৃথক হয়ে থাকে। ফলে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর নির্ভর করে এমন শিল্প তথা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাকাতের মাধ্যমে গরিবের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে, বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা গতিপ্রাপ্ত হয়।
অর্থনীতির সূচকগুলো একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল। উৎপাদনের সঙ্গে কর্মসংস্থানের সম্পর্ক রয়েছে। দরিদ্রদ্রের হাতে পুঁজি না থাকায় তারা কোনো বিনিয়োগ করতে পারে না। তাদেরকে যাকাত দেয়া হলে তারা তা উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে পারে। উৎপাদনে গতি আসার কারণে কর্মসংস্থান বেড়ে যায়। আবার কর্মসংস্থান বেড়ে যাওয়ায় বেকারত্ব দূর হয়। সাধারণত দেখা যায়, সামাজিক অপরাধের অন্যতম প্রধান কারণ বেকারত্ব। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বেকারত্ব হ্রাস করে বলে অপরাধ প্রবণতা হ্রাসের ক্ষেত্রে যাকাতেরও ভূমিকা রয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাত : আল্লাহ তাআ’লা কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় এরশাদ করেন- ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অঢেল সম্পদ দেন, আবার কারো রিযিক সংকীর্ণ করে দেন’। (সূরা আল-বাক্বারাহ, ২:২৪৫) অন্য আয়াতে বলেন- ‘আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা রুজি প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন’। (সুরা আর-রা’দ, ১৩:২৬)
সম্পদ ও দারিদ্র দুটো দিয়েই আল্লাহ তা’আলা মানুষকে পরীক্ষা করেন। তিনি দেখতে চান যে, সম্পদের মালিক হয়ে ধনীরা তাঁর প্রতি শোকরগুজার করে কিনা এবং দরিদ্রদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কিনা। আবার দরিদ্ররা তাদের অসচ্ছল অবস্থা ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তির জন্য সুন্দরভাবে প্রচেষ্টা চালায় কি না। ফরয ইবাদাত হিসেবে যিনি যাকাত আদায় করেন তার মনে কখনো প্রদর্শনেচ্ছা বা নাম কুঁড়ানোর আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে না।
ধনী ব্যক্তি যাকাত আদায়ের মাধ্যমে গরিবের হক আদায় করেন। তাই মনে অহঙ্কার বা দানশীলতার গর্ব সৃষ্টি হওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা মানুষের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। তাই গরিবরা যাকাত প্রদানকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। এভাবে পারস্পরিক ভালোবাসা, সহানুভূতি, সম্মান প্রদর্শন ও কৃতজ্ঞার পরিবেশ গড়ে ওঠে।
বর্তমানে যাকাত বিতরণে যে দূরবস্থা তাতে যাকাতের সুফল অর্জন সম্ভব নয়। সমন্বিত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় যাকাতের অর্থ বন্টন করা হলে ব্যক্তির সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে।
তথ্যসূত্র : সেন্টার পর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম)
এএইচ/