ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

আল্লাহতায়ালার মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য

ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী

প্রকাশিত : ১১:৩৫ এএম, ৬ মে ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৯:১৬ পিএম, ৬ মে ২০১৯ সোমবার

বিজ্ঞানীদের কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মডেল অনুযায়ী প্রায় ১৪০০ কোটি (১৩.৭৫ বিলিয়ন) বছর আগে অকল্পনীয় উচ্চতাপমাত্রায় (১০৩২ সেন্টিগ্রেড) মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাবিশ্ব অবিশ্বাস্য গতিতে প্রসারিত হতে শুরু করে ও তাপমাত্রা দ্রুত নামতে থাকে। সাধারণত যে কোনও বিস্ফোরণ অনিয়ন্ত্রিত বিশৃঙ্খল পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়। এর একমাত্র ব্যতিক্রম মহাবিশ্বের সূচনালগ্নে ঘটে যাওয়া মহাবিস্ফোরণ, যা ধ্বংস নয় বরং মহাবিশ্ব সৃষ্টির দিকে অগ্রসর হয়েছে। আল্লাহতায়ালাই বিস্ফোরণের প্রতিটি স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে মহাবিশ্ব সৃষ্টির দিকে ধাবিত করেছেন। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস বলেন, বিগব্যাংগ-এর পর যদি মহাবিশ্ব প্রসারণের হার ১০ হাজার কোটি ভাগের ১ ভাগ কম হতো তাহলে মহাবিশ্ব বর্তমান অবস্থায় না এসে উল্টো সংকুচিত হয়ে গুটিয়ে যেত। আর যদি প্রসারণের হার বেশি হতো তাহলে মহাবিশ্বের কণাগুলো এত ছড়িয়ে যেত যে গ্যালাক্সি, গ্রহ, নক্ষত্র তৈরি হতো না। অন্য কথায় যদি আল্লাহতায়ালা তার কুদরত বা ক্ষমতাবলে মহাবিশ্ব প্রসারণের হারকে গাণিতিক ক্ষুদ্রতর মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ না করতেন তাহলে মহাবিশ্ব ও পৃথিবী তৈরি হতো না।

‘আর আমরা স্বীয় ক্ষমতা ও দক্ষতা বলে আকাশমণ্ডলকে সৃষ্টি করেছি এবং নিশ্চয়ই আমরা একে প্রসারিত করে চলেছি।’ (সূরা যাবিয়াত ৫১/৪৭)

বিগব্যাংগের পরবর্তী এক সেকেন্ডের লক্ষ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ সময়ের মধ্যে উচ্চতাপমাত্রায় (১০২৯ কেলডিন) প্রচুর পরিমাণ অতি পারমাণবিক বস্তুকণা (কোয়ার্ক লেপটন) ও প্রতি বস্তুকণা (এন্টিকোয়ার্ক, এন্টিলেপটন) তৈরি হলো। এ সময় একটি বিশেষ মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা তার বিশেষ ক্ষমতাবলে বস্তুকণাকে প্রতিবস্তুকণার চেয়ে প্রায় ৩ কোটি ভাগের এক ভাগ বেশি করে দিলেন যাতে মহাবিশ্ব বস্তুকণা তৈরির দিকে অগ্রসর হয়। যদি বস্তুকণা প্রতি বস্তুকণার সমান হতো তাহলে পারস্পরিক বিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যেত।

তারপর যখন মহাবিশ্বের তাপমাত্রা দ্রুত নেমে একশ’ কোটি সেন্টিগ্রেডে নেমে আসে, তখন একটি প্রোটন ও একটি নিউট্রন মিলে হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস, দুটি প্রোটন ও দুটি নিউট্রন মিলে হিলিয়ামের নিউক্লিয়াস তৈরি করে। এর পর লক্ষ লক্ষ বছর আলো, এক্সরে, বেতার তরঙ্গ, অতিবেগুনি রশ্মি, মহাজাগতিক রশ্মির অবাধ বিচরণ স্থল ছিল এই মহাবিশ্ব। প্রায় তিন লক্ষ বছর পর পৃথিবীর তাপমাত্রা যখন ৩ হাজার ডিগ্রি সে.-এ নেমে এলো তখনই প্রোটন মুক্ত ইলেকট্রনকে বন্দি করতে সক্ষম হলো। হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম অণুর সৃষ্টি হলো। এভাবে ধোঁয়ার মতো বিকিরণ সমৃদ্ধ মহাবিশ্ব ইলেকট্রনের বন্দিত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে বস্তুজগৎ গঠনের দিকে অগ্রসর হলো ও মহাকর্ষ বলের কাছে আত্মসমর্পণ করল। আল্লাহতায়ালা ইলেকট্রনকে নিউক্লিয়াসের নিগড়ে বন্দি করে বস্তুজগতের সূচনা করলেন ও আলোক তরঙ্গকে বস্তুজগৎ থেকে আলাদা করলেন।

‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং অন্ধকার ও আলোর উদ্ভব করেছেন। তথাপি কাফেররা তাদের প্রতিপালকের সমতুল্য দাঁড় করায়’। (সূরা আনআম ৬/১০)

‘এক পর্যায়ে তিনি মহাকাশের প্রতি মনোনিবেশ করেন, যখন তা ছিল ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ (বিকিরণ সমৃদ্ধ অদৃশ্য জগৎ)। অনন্তর তিনি মহাবিশ্ব ও পৃথিবীকে আদেশ করেন ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় তোমরা (দৃশ্যমান বস্তুজগতের অস্তিত্ব) ধারণ করো। ওরা বললেন, আমরা অনুগত অবস্থায় অস্তিত্ব ধারণ করছি’। (সূরা হামীম সেজদা ৪১:১১)

‘অতি উচ্চ মর্যাদাময় তিনিই সেই মহান আল্লাহ যিনি মহাকাশে সংস্থাপন করিয়াছেন বুরুজ বা গ্যালাক্সিসমূহ, সূর্য এবং জ্যোতির্ময় চন্দ্র’ । (সূরা ফুরকান ২৫/৬১)

কল্পনা করুন এই পৃথিবীতে আপনি যে মাটির উপর দাঁড়িয়ে আছেন তার যাত্রা ১৪০০ কোটি বছর আগে হয়েছিল। আল্লাহতায়ালাই বস্তুকণাকে প্রতিবস্তু কণার উপর প্রভাবশালী করে দিলেন ও তাপমাত্রা কমালেন যাতে প্রোটন ও নিউট্রন কণা তৈরি হয় এবং এ দুটো কণা মিলে হাইড্রেজেন ও হিলিয়াম নিউক্লিয়াস তৈরি হয়। তাপমাত্রা আরও কমালেন ও মহাবিশ্বকে এমনভাবে প্রসারিত করলেন যাতে বিকিরণ সমৃদ্ধ জগতের মধ্য থেকে বস্তুজগৎ আলাদাভাবে অস্তিত্ব লাভ করতে পারে। ইলেকট্রনকে নিউক্লিয়াসের চার পাশে ঘুরতে বাধ্য করলেন, যাতে বস্তুজগৎ তৈরির পথ সুগম হয়। অভিকর্ষ বলের মাধ্যমে গ্যালাক্সি, তারকা তৈরি করলেন; তারকার কেন্দ্রে বস্তুকে পুড়িয়ে তাপ ও আলোক শক্তির বিকিরণ ঘটালেন। তারকাপুঞ্জ ছায়াপথের লেজে অবস্থিত সূর্য নামক নক্ষত্র থেকে পৃথিবী নামক গ্রহকে বের করে নিয়ে এলেন। পৃথিবী ঠাণ্ডা, নরম ও সমতল করলেন যাতে আপনি এই মাটির উপর নিশ্চিন্তে দাঁড়াতে পারেন।

ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী

( শোকরিয়া : প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের রাজপথ গ্রন্থ থেকে নেয়া)

এএইচ/