ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

রোগীদের ইফতার এবং সেহরি

ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ

প্রকাশিত : ০১:২২ পিএম, ৭ মে ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৪৬ পিএম, ৭ মে ২০১৯ মঙ্গলবার

রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। প্রত্যেক মুসলমানের রোজা রাখা ফরজ। তবে অনেকেই আছেন বিভিন্ন রোগের কারণে রোজা রাখতে পারেন না। এর মধ্যে অনত্যম হলো ডায়াবেটিস। এর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোজা রাখা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। শুধু রোগী না অনেক সময় অনেক ডাক্তারও বিভ্রান্তিতে ভোগেন।

ডায়াবেটিস রোগীদের সংসবাদ দিয়েছে অধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা, ইফতার এবং সেহরিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ডা. এবি এম আব্দুল্লাহ।

অনেকে রোজার সময় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করেন, অনেকে আবার খুবই অল্প খাবার খান। মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিক রোগীর জন্য দুটিই ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে নিচের পরামর্শসমূহ মেনে চলা যেতে পারে- (১) সেহরির খাবার সেহরির শেষ সময়ে খাওয়া, (২) ইফতারের সময় বেশি বেশি চর্বিযুক্ত বা মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়া, (৩) ভাজাপোড়া খাবার অল্প পরিমাণে খাওয়া, (৪) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও অন্যান্য তরল গ্রহণ করা, (৫) খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রাখা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, (৬) ইফতারে অতিভোজন এবং সেহরিতে অল্প আহার পরিহার করা। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুখে ওষুধ খাবার প্রয়োজন হয়।

এর মধ্যে যারা মেটফরমিন, গ্লিটাজোন অথবা ইনক্রিটিন জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। তবে সালফোনাইলইউরিয়া জাতীয় ওষুধ অথবা ইনসুলিন রক্তের সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে দিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া করতে পারে। তাই এসব ওষুধ গ্রহণকারী রোগীর উচিত রমজানের পূর্বেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রাখা।

রোজায় ডায়াবেটিক রোগীর ওষুধের কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত যেসব পরিবর্তন করা হয়, তা হলো যারা তিনবার ওষুধ খান তাদের বেলায় বেশি মাত্রা ইফতারের সময় খাবেন এবং কম মাত্রাটুকু সেহরির সময় খাবেন। যদি দিনে দুইবার খেতে হয় তবে সকালের মাত্রাটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের মাত্রাটি অর্ধেক পরিমাণে সেহরির সময় খাবেন।

যারা ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তারা রোজায় দীর্ঘমেয়াদি ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারেন, এতে হাইপোগ্লাইসিমিয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। এই ইনসুলিন ইফতারের সময় নিতে হবে এবং প্রয়োজনে শেষ রাতে অল্প মাত্রায় নিতে হবে। ইনসুলিন গ্রহণকারী রোগীদের অবশ্যই রমজানের পূর্বেই ইনসুলিনের ধরন ও মাত্রা ঠিক করে নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমদের মতামত অনুযায়ী রোজা রাখা অবস্থায় দিনের বেলায় রক্ত পরীক্ষা করা এমনকি প্রয়োজনে ইনসুলিন ইনজেকশন নেয়া যাবে, এতে রোজা নষ্ট হবে না।

সম্ভাব্য জটিলতা এড়ানোর জন্য ডায়াবেটিক রোগীর উচিত সেহরির ২ ঘণ্টা পর এবং ইফতারের ১ ঘণ্টা আগে রক্তের সুগার পরীক্ষা করা। এছাড়া দিনের বেলায় অধিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকা উচিত। ইফতার বা রাতের খাবারের ১ ঘণ্টা পর ব্যায়াম করা যেতে পারে।

ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রাখা যাবে কি যাবে না, তা নিয়ে বহু বিতর্ক ছিল এবং আছে। যেহেতু রোজা আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত বিধানে একটি অপরিহার্য ফরজ এবং আল্লাহ তায়ালা নিজেই এর প্রতিদান দেবেন, তাই অজুহাত বা আলস্য করে রোজা পালন থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। কারণ একমাস রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মানুষের দেহ, মন এবং আত্মার পরিশুদ্ধির সুবর্ণ সময়। ডায়াবেটিস এমনকি অন্য কোনো রোগ হলেও চিকিৎসকগণ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে, রোজা রাখা বা না রাখার ব্যাপারে অবশ্যই সুন্দরভাবে সহায়তা প্রদান করবেন।

লেখক: অধ্যাপক ও সাবেক ডিন মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।