মনের রোগ : সত্যকে অপছন্দ করা
আবূ আবদুর রহমান আস-সুলামী :
প্রকাশিত : ০৭:২৯ পিএম, ৭ মে ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:২৫ পিএম, ৮ মে ২০১৯ বুধবার
মনের একটা ব্যাধি হলো সে সত্যকে পছন্দ করতে চায় না। আনুগত্য তার স্বভাব-প্রকৃতি বিরুদ্ধ বিষয়। এসবের কারণে অধিকাংশ সময় স্বেচ্ছাচার ও প্রবৃত্তির অনুসরণের জন্ম হয়। যতোক্ষণ না এর গলায় মেহনত-মুজাহাদার ছুরি চালিয়ে একে হত্যা করা হয় ততোক্ষণ সে বশে আসে না।
আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে বলেছেন,
فَتُوبُوا إِلَى بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ
“তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে অনুতপ্ত হও এবং নিজেদের প্রবৃত্তিকে দমন করো।”
এই ব্যাধির প্রতিকার হলো, সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর প্রতি ধাবিত হওয়া। মূলত এই কারণেই আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বন্ধু ইবরাহীম—আলাইহিস সালাম-কে স্বীয় সন্তান যবাই করার হুকুম করেছিলেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ
“যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল”
তখন তাকে বলা হলো,
قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا
“তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে।”
তারপর আল্লাহ তাআলা তাকে যবাই করার জন্য এক মহান জন্তু দান করলেন।
এর থেকে উত্তরণের উপায় হলো, পুরোপুরিভাবে মহান রবের প্রতি মনোনিবেশ স্থাপন করা।
আমি মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ রাযিকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি কাসিম মিসরিকে বাগদাদে বলতে শুনেছি, ইবনু ইয়াযদায়িআর—রাহিমাহুল্লাহ-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোনো বান্দা আল্লাহর রাস্তায় বের হলে, কোন নীতির ভিত্তিতে বের হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ইবনু ইয়াযদায়িআর বলেন : এ নীতির ভিত্তিতে (বের হবে যে,) যে অবস্থা থেকে সে বেরিয়ে গিয়েছে, ওই অবস্থায় সে আর ফিরে আসবে না এবং যেসব বিষয় থেকে সে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছে, সেসব বিষয় নিয়ে সে আর চিন্তাভাবনা করবে না। তাকে বলা হলো, এ নিয়ম তো তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে, যে (আয়েশি অবস্থায় কিছুদিন) থাকার পর বের হয়েছে; কিন্তু যে ব্যক্তি কোনো কালে (আয়েশি অবস্থায়) না থেকেই (আল্লাহর রাস্তায়) বেরিয়েছে, তার ক্ষেত্রে বিধান কী? তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতের কাজে মিষ্টতা অনুভব করলে, ধরে নেওয়া হবে—তার অতীতও কেটেছে তিক্ততায়, বিলাসিতায় নয়।’
অন্যের দোষ তালাশ করা
মানুষের একটি বদ স্বভাব হলো, সে নিজের দোষ দেখে না। কেবল অন্যের দোষই তার নজরে পড়ে। এর প্রতিকারের জন্য নিজের দোষ-ত্রুটির প্রতি লক্ষ করতে হবে। সে সম্পর্কে জানতে হবে। প্রবৃত্তির কুট-কৌশলের ব্যাপারে অবগত হতে হবে। ভ্রমণ এবং পর্যটন করা, নেককার লোকদের সংস্পর্শ গ্রহণ করা ও তাদের আদেশ মাথা পেতে মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিজেকে সংশোধনের জন্য এসব পদ্ধতি অবলম্বন করতে যদি না-ও পারে,অন্তত অন্যের দোষ-ত্রুটি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। দোষী ব্যক্তিকে মাযুর ও অক্ষম মনে করে তার দোষটা ঢেকে রাখতে হবে। আশা করা যায় এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার নিজের দোষ-ত্রুটিগুলো সংশোধন করে দিবেন।
আল্লাহর নবি—সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—বলেছেন,
مَنْ سَتَرَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ، سَتَرَ اللَّـهُ عَوْرَتَهُ
“যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের দোষত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ তাআলা তার দোষ-ত্রুটি আড়াল করে রাখবেন।”
আল্লাহর রাসূল—সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—আরও বলেছেন,
مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيهِ تَتَبَّعَ اللَّـهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ تَتَبَّع اللَّـهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي جَوْفِ بَيْتِهِ
“যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ খুঁজেখুঁজে বের করে, আল্লাহ তাআলা-ও তার দোষ খুঁজেখুঁজে বের করবেন এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে তাকে অপদস্থ করবেন। যদিও সে আপন ঘরের মধ্যস্থলে অবস্থান করে।”
আমি মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ বিন সাযানকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি ইবনু ইয়াযদান মাদাঈনিকে বলতে শুনেছি, ‘আমি এমন অনেক মানুষকে দেখেছি, যাদের বহু দোষ-ত্রুটি ও মন্দ স্বভাব ছিলো। কিন্তু তারা অন্যদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখার ফলে আল্লাহও তাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রেখেছেন। অবশেষে এক সময়ে তাদের সেসব দোষ-ত্রুটি ও মন্দ স্বভাব বিদূরিত হয়ে যায়। আবার এমন লোকদেরকেও দেখেছি, যাদের তেমন দোষ-ত্রুটি ও মন্দ স্বভাব ছিলো না। কিন্তু তারা অন্যদের দোষচর্চায় লিপ্ত হবার দরুন নিজেরাও সেসবে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।’
অলসতা ও ঢিলেমিতে আক্রান্ত হওয়া
মানুষের মন্দ স্বভাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অলসতায় আক্রান্ত হওয়া, ঢিলেমি করা, সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত হওয়া, টালবাহানার পথ বেছে নেওয়া, দীর্ঘ-আশা পোষণ করা ও মৃত্যুকে সুদূরপরাহত ভাবা।
এসবের প্রতিকার বিষয়ে আমি হুসাইন বিন ইয়াহয়াকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি জাফর খলদিকে বলতে শুনেছি যে, জুনাইদ বাগদাদি—রাহিমাহুল্লাহ-কে প্রশ্ন করা হলো, ‘আল্লাহর কাছে একান্তে পৌঁছার উপায় কী?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘এমনভাবে তাওবা করা, যা গুনাহের পুনরাবৃত্তিকে বিনাশ করে দেয়। আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করা, যা টালবাহানা করার মানসিকতাকে খতম করে দেয়। এমনভাবে আমল করায় মনোযোগী হওয়া, যা দীর্ঘ-আশা পোষণ করাকে স্বল্পতায় নামিয়ে দেয়। সময়ে সময়ে আল্লাহর যিকির করা ও তার কথা স্মরণ করা। দীর্ঘ-আশা থেকে নিজেকে দূরে রাখা ও মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছার (কথা স্মরণ করিয়ে) স্বীয় খাহেশাতকে অবদমিত করে রাখা।’
পুনরায় তাকে প্রশ্ন করা হলো, ‘কীভাবে একজন মানুষ নিজেকে এসব গুণাবলিতে উন্নীত করতে পারবে?’ তিনি বললেন, ‘একাগ্রচিত্ত ও একনিষ্ঠ হৃদয়ের সহায়তায়।’
অতিকথনে লিপ্ত হওয়া
১.অতিকথনে লিপ্ত হওয়া মানুষের মন্দ স্বভাবগুলোর একটি। দুইটি বিষয় থেকে এর উৎপত্তি হয়ে থাকে।
নেতৃত্বের অভিলাষ। সে চায় মানুষ দেখুক সে কতো বেশি ইলমের অধিকারী এবং বিশুদ্ধ-কথনে পারদর্শী।
২.সে সামান্য ইলমের অধিকারী। ফলে তাকে অতিকথনের আশ্রয় নিয়ে তা ঢাকতে হয়। এর প্রতিষেধক হলো, এই অনুভূতি জাগ্রত করা যে, প্রতিটি কথার জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। তার অতিকথনের সবটুকু লিখে রাখা হচ্ছে। এসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন,
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِين كِرَامًا كَاتِبِينَ
“নিশ্চয়ই তোমাদের উপর হিসাবরক্ষণকারী নিয়োজিত আছেন। (তারা হলেন) সম্মানীত লেখকবৃন্দ।”
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
“সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।”
রাসূল—সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—বলেছেন,
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّـهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে যেন ভালো কথা বলে নয়তো চুপ থাকে।”
রাসূল—সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—আরও বলেছেন,
إنّ البَلَاءَ مُوَكَّلٌ بِاِلْمَنْطِقِ
“নিশ্চয়ই বিপদাপদ কথনের সাথে সম্পৃক্ত।”
রাসূল—সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—অন্য আরেক হাদীসে বলেছেন,
وَهَلْ يُكِبُّ النَّاسَ عَلَى وُجُوهِهِمْ فِي النَّارِ، إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ
“মানুষকে উল্টোমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে কেবল তাদের জিহ্বার কামাই।”
রাসূল—সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—(অতিকথন প্রসঙ্গে আরও) বলেছেন,
كَلَامُ ابْنِ آدَمَ عَلَيْهِ لَا لَهُ، إِلَّا الْأَمْرَ بِالْمَعْرُوفِ، وَالنَّهْيَ عَنِ الْمُنْكَرِ، وَذِكْرَ اللَّـهِ عَزَّ وَجَلَّ
“আদম সন্তানের সকল কথাই তার পক্ষে নয়, বিপক্ষে যাবে। তবে ব্যতিক্রম হলো: সৎকাজের প্রতি আদেশ, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ, আল্লাহর যিকির।”
এই হাদীসের কথাগুলো গ্রহণ করা হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াত থেকে,
لَا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّـهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
“তাদের অধিকাংশ সলা-পরামর্শ ভাল নয়; কিন্তু যে সলা-পরামর্শ দান খয়রাত করতে কিংবা সৎকাজ করতে কিংবা মানুষের মধ্যে সন্ধিস্থাপন কল্পে করতো, তা স্বতন্ত্র। যে এক কাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে, আমি তাকে বিরাট সওয়াব দান করবো।”
আল্লাহর সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হওয়া
মানুষ কাজকর্মে নামার আগে ইস্তিখারা করে নেয়। তারপর একটা কিছু বেছে নেওয়ার পর (তৎক্ষনাৎ উপকার না দেখতে পেলে) রাগান্বিত হয়ে পড়ে। এর প্রতিষেধক হলো, অন্তরে এই বিশ্বাসকে পোক্ত করা যে, মানুষের জ্ঞান কেবল বস্তু-বিষয়ের বাহ্যিক অবস্থার উপরই আবদ্ধ। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা প্রতিটি জিনিসের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সকল অবস্থা সম্পর্কে অবগত। সুতরাং আল্লাহর নির্বাচন তার নিজের নির্বাচন থেকে অবশ্যই শ্রেয় হবে।
বান্দা নিজ বুদ্ধিতে যা নির্বাচন করে তা শঙ্কামুক্ত থাকে না। কারণ সে নিজেই অন্যের দ্বারা (অর্থাৎ আল্লাহর দ্বারা) পরিচালিত হয়। কাউকে পরিচালনা করে না। এবং যা কিছু ঘটার সিদ্ধান্ত হয়ে আছে তার ক্রোধ সেটা পরিবর্তন করতে পারবে না। তাই তার কর্তব্য হচ্ছে নিজের জন্য আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সর্বদা সন্তুষ্ট থাকাকে আবশ্যক করে নেওয়া। এতেই সে সুখী হবে।
অতিমাত্রায় আকাঙ্ক্ষা করা
অতিমাত্রায় আকাঙ্ক্ষা করাও একটি মন্দ স্বভাব। আকাঙ্ক্ষার আধিক্যতা মানে হলো, আল্লাহর নির্ধারিত সিদ্ধান্তে ও বিচারে আপত্তি তোলা। এর প্রতিকারের পদ্ধতি হলো, মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা যে, অতি আকাঙ্ক্ষার পরিণতি ফল ভালো হবে না মন্দ, পছন্দনীয় হবে না অপছন্দনীয় সেটা তার জানা নেই। তো অতি আকাঙ্ক্ষার পরিণতি ফল তার অজানা—এ কথা বোঝার পর এমনিতেই সে একে পরিহার করবে এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তা মেনে নেওয়ার প্রতি ধাবিত হবে। দেখা যাবে এর কারণে সে একসময় আত্মিক প্রশান্তি লাভ করবে।
এই কারণেই আল্লাহর নবি—সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—বলেছেন,
إِذَا تَمَنَّى أَحَدُكُمْ، فَلْيَنْظُرْ مَا يَتَمَنَّى، فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي مَا يُكْتَبُ لَهُ مِنْ أُمْنِيَّتِهِ
“যখন তোমাদের কেউ কোনো আকাঙ্ক্ষা করবে, সে যেন ভালো করে দেখে নেয় যে কীসের আকাঙ্ক্ষা করছে। কারণ তোমাদের কেউ জানে না তার কোন আশাটি ভাগ্যে লেখা আছে।”
অন্য আরেক হাদীসে তিনি ইরশাদ করেছেন,
لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ لِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ، فَإِنْ كَانَ لَا بُدَّ مُتَمَنِّيًا فَلْيَقُلْ: اللهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي
“ক্ষতিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তোমাদের কেউ যাতে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা না করে। যদি তাকে আকাঙ্ক্ষা করতেই হয় তবে যেন বলে—হে আল্লাহ, আমাকে ততোদিন বাঁচিয়ে রাখো যতোদিন বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর। এবং আমাকে তখন মৃত্যু দাও যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর।”
লোভ-লালসার শিকার হওয়া
লোভ-লালসা হলো মানুষের অন্যতম আত্মিক রোগ। এটি দূর করার তরিকা হলো এই বিষয়ে সচেতন হওয়া যে, লোভ তাকে দুনিয়ার ভেতর প্রবিষ্ট করে দিবে এবং ইবাদাতের মজা ভুলিয়ে দিবে। সেই সাথে তাকে মানুষের গোলামও বানিয়ে দিবে। অথচ আল্লাহ তাআলা তাকে তাদের গোলামি থেকে মুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহর রাসূল—সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—লোভ থেকে পানাহ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন,
اسْتَعِيذُوا بِاللَّـهِ مِنْ طَمَعٍ يَهْدِي إِلَى طَبْعٍ، وَمِنْ طَمَعٍ فِي غَيْرِ مَطْمَعٍ
(হে আল্লাহ,) আমি তোমার কাছে পানাহ চাই এমন লোভ থেকে, যা হৃদয়কে মোহাবিষ্ট করার দিকে নিয়ে যায়। এবং এমন লালসা থেকেও তোমার আশ্রয় চাই, যেখানে লালসা করার মতো কিছু নেই।
এটি এমন লোভ, যা মানুষের অন্তরে গেঁথে গিয়ে তাকে দুনিয়ার প্রতি প্রলুব্ধ করে এবং আখিরাত থেকে বিমুখ করে। একজন সালাফ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, ‘লোভ হলো উপস্থিত দরিদ্রতা। লোভগ্রস্থ ধনী ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র। আর লোভমুক্ত দরিদ্র ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ধনী।’
আল্লাহ তাআলা (হাদীসে কুদসিতে) বলেছেন, ‘আমি কোনো সৃষ্টিজীবকে অন্য সৃষ্টিজীবের দায়িত্বে ঠিক ততোটুকুই অর্পণ করি যতোটুকু সে অন্যের থেকে আশা করে। যদি সে আমি ছাড়া অন্য কারও কাছে কিছু প্রত্যাশা না করতো তবে আমি এক সৃষ্টিজীবকে অন্য সৃষ্টিজীবের দায়িত্বে কখনো অর্পণ করতাম না।’
কবি বলেছেন,
أتطمع فِي ليلى وتعلم إِنَّمَا ... تقطع أَعْنَاق الرِّجَال المطامع
লায়লাকে পাবার লোভ করছো তুমি
অথচ লোভ-লালসা কাটে গলা
সেই কথা জানো তুমি।
আরেক কবি বলেছেন,
أطعت مطامعي فاستعبدتني ... ولوأني قتعت لكنت حرا
লোভের পিছে ছুটে আমি
হলাম অন্যের অধীন,
নয়তো এখন হতাম আমি
পুরোপুরি স্বাধীন।
লেখক-আবূ আবদুর রহমান আস-সুলামী এর আত্মশুদ্ধি বই থেকে নেওয়া।