ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

যুগোপযোগী সেবার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াবে জনতা ব্যাংক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪৫ পিএম, ৮ মে ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১০:৫৮ পিএম, ৮ মে ২০১৯ বুধবার

যুগোপযোগী ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে ২০১৯ সালের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে জনতা ব্যাংক। আজ বুধবার ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভায় এমন কথা বলেন বক্তরা। রাজধানীর মতিঝিলে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে ১২তম এ বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে সাধারণ সভায় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফজলুল হক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের পরিচালক খন্দকার সাবেরা ইসলাম, মসিহ্ মালিক চৌধুরী এফসিএ, এ কে ফজলুল আহাদ, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, অজিত কুমার পাল এফসিএ, মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, এ কে এম শামছুল আলম, সিইও এ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ, ব্যাংকের ডিএমডি মোঃ ইসমাইল হোসেন, মোঃ ফজলুল হক, মোঃ জিকরুল হক, মোঃ তাজুল ইসলাম, কোম্পানী সচিব হোসেন ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, সিএফও এ কে এম শরীয়ত উল্যাহ এফসিএএসিসিএ  প্রমুখ।

সভাপতি লুনা সামসুদ্দোহা তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০১৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জিডিপি অর্জনকারী পাঁচ দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই হার ৮.১৩ শতাংশ হতে পারে। ২০১৮ সালে মাথাপিছু আয় ১,৭৫১ মার্কিন ডলার ছিল যা চলতি বছরে ১,৯০৯ মার্কিন ডলার অর্জিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়াটা এখন আর শুধু স্বপ্ন নয়, একটি সম্ভাবনা। দেশের এমন অগ্রযাত্রার অন্যতম অংশীদার হিসেবে জনতা ব্যাংককেও দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে।’

ব্যাংকটি কোন প্রকার চার্জ কর্তন না করে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে শুরু করে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেছে যারা আর্থিক মূল্য প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করেন তিনি। এত কাজ করেও ২০১৮ সালে জনতা ব্যাংক ৯৭৯ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের চেতনায় ইতোমধ্যে কোর ব্যাংকিং সলিউশন (সিবিএস) এর আওতায় ব্যাংকের সকল শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং চালু হয়েছে। নিরাপদ ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জনতা ব্যাংকে jbCERT (Janata Bank Computer Emergency Response Team) গঠন করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে যা কম্পিউটারের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি, দূর্বলতা, সাইবার অপরাধ মোকাবেলার পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা, আত্মসাৎমূলক কর্মকান্ড, তথ্যের সঠিকতা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করবে। এছাড়া অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা উন্নীতকরণসহ সমসাময়িক প্রযুক্তি যেমন : (Blockchain), AI (Artificial Intelligence), IoT (Internet of Things)  ইত্যাদি ব্যবহারের কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তিসহ ব্যাংকিং কার্যক্রমের সকল ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃত গাইডলাইন, সার্কুলার ও বিধিবিধান পরিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে Gap Analysis এর উপরও বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।’

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আব্দুছ ছালাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘বৃহৎ দু’টি গ্রুপভূক্ত ঋণ খেলাপি হওয়ায় ২০১৮ সালে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, সরকারের নির্দেশনানুযায়ী ঋণের সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কঠোর অনুশাসনের ফলে জনতা ব্যাংক অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও ব্যবসায়িক সূচকে ইতিবাচক সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ সাফল্যের মূলে রয়েছে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের যথাযথ নীতি নির্ধারণ, সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তদারকি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সকল স্তরের নির্বাহী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দের অব্যাহত প্রচেষ্টা।’ যুগোপযোগী ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে জনত ব্যাংক ২০১৯ সালে ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি তার বক্তব্যে ২০১৮ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর কিছু উল্লেখযোগ্য সূচক উপস্থাপন করেন, ২০১৮ সালে ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৬,৬৬৮ কোটি টাকা, যা বিগত ২০১৭ সাল হতে ৭.৫৩% বা ৬,০৬৯ কোটি টাকা বেশি; ২০১৮ সালে ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ৪.০২% বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭,৫৫৫ কোটি টাকা হয়েছে; ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ১৬.১৩% বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩,৩৭১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ; ২০১৮ সালে ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (AD Ratio)  ৭৯% এ উন্নীত হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৭১%; ২০১৮ সালে আমদানির পরিমাণ ২২,০৪১ কোটি টাকা, রপ্তানির পরিমাণ ১১,৪৬৮ কোটি টাকা এবং ফরেন রেমিট্যান্স এর পরিমাণ ৭,৬০৮ কোটি টাকা; ২০১৮ সালে শ্রেণিকৃত ঋণ হতে ৪৮৪ কোটি টাকা এবং অবলোপনকৃত ঋণ হতে ৩৪ কোটি টাকা নগদ আদায় করা সম্ভব হয়েছে; অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ, মহিলা উদ্যোক্তা বৃদ্ধি ও মহিলাদের সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা প্রতি মাসের ৩য় সপ্তাহে ‘মহিলা গ্রাহক সেবা সপ্তাহ’ পালন করে আসছি; Core Banking Solution (CBS) এর আওতায় ইতোমধ্যে ব্যাংকের সকল শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে; ব্যাংকের ৭১৮টি শাখায় RTGS (Real Time Gross Settlement) চালুর মাধ্যমে আন্তঃব্যাংক ফান্ড ট্রান্সফার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে; ২০১৮ সালে জনতা ব্যাংক কর্তৃক কর্পোরেট আয়কর বাবদ ১৪৮.৮৪ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন উৎসে কর, ভ্যাট ও আবগারী শুল্ক হিসেবে সরকারি কোষাগারে মোট ৮১৪.৩৫ কোটি টাকা জমা প্রদান করা হয়েছে।

বার্ষিক এ সভায় বক্তরা জানান, সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের চেতনায় ইতোমধ্যে ব্যাংকের সকল শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং চালু হয়েছে। নিরাপদ ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জনতা ব্যাংক প্রযুক্তিগত ত্রুটি সমাধানে একটি প্রকৌশল দলকেও তৈরী রাখা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তিসহ ব্যাংকিং কার্যক্রমের সকল ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃত গাইডলাইন, সার্কুলার ও বিধিবিধান পরিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

এমএস//এসি