ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বিশ্ব সেরা ৫ স্কলারশিপ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৯ পিএম, ৮ মে ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৫:০০ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার

উচ্চশিক্ষায় বিদেশ পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। একটা সময় ছিল যখন শহরগুলোতে হাতেগোনা কয়েকজন পাওয়া যেত যারা বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। আর এখন প্রতি মহল্লাতেই কয়েকজন পাওয়া যাবে যারা বিদেশে পড়াশোনা করে এসেছেন। দেশ ছেড়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার আগ্রহের কারণ হিসাবে দেশে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ কম থাকা ও সর্বাধুনিক শিক্ষা ও বৈশ্বিক সুবিধা লাভের জন্য শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমন করতে চান। কিন্তু এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিদেশ গমন সম্ভব হয় না। এরকম মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। তাদের মধ্যে বিশ্ব সেরা ৫টি স্কলারশিপ হলো-

১. ফুলব্রাইট স্কলারশিপ:

বিশ্বায়নের যুগে দেশের অনেক শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করা। আর পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাই থাকে সর্বাধিক। বিশ্বের প্রথম সারির ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় সত্তরটিই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা অথবা বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রেই এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ সুখ্যাতি ধরে রেখেছে।

প্রতি বছরই বিশ্বের ১৫৫টি দেশ থেকে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভের সুযোগ দিয়ে থাকে ‘ফুলব্রাইট স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম’। এ কার্যক্রম প্রথম যাত্রা শুরু করে ১৯৪৬ সালের ১ আগস্ট। এ প্রোগ্রাম কোর্স সময়কালীন টিউশন, বিমান যাতায়াত ভাড়া, বসবাসের জন্য মাসিক ভাতাসহ স্বাস্থ্য বীমা বহন করে।

২. শেভেনিং স্কলারশিপ ও কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ:

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য এখনো যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই প্রথম প্রছন্দ। মেধাবী ছাত্রদের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের একটি গ্লোবাল স্কলারশিপ প্রোগ্রাম হলো- ‘শেভেনিং স্কলারশিপ’। ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস বা এফসিও এর অর্থায়নে ১৯৮৩ সালে এই বৃত্তি কার্যক্রম প্রথম শুরু হয়। প্রতি বছর বিশ্বের ১৪৪টি দেশ থেকে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিগ্রি লাভের সুযোগ পান। এ প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার্থীরা মাসিক ভাতা, বিমান ভাড়া ও নানা ধরনের সুযোগ সুবিধাসহ সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ দিচ্ছে। ইউকে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) এর অর্থায়নে প্রতিভাবান ও উদ্যমী শিক্ষার্থীদের বিনা টিউশন ফি-তে পড়ার সুযোগসহ আবাসন, বিমান যাতায়াত খরচ ও আনুষঙ্গিক খরচ বহন করে এ স্কলারশিপ।

৩. ইরাসমুস মুন্ডুস:

উচ্চশিক্ষার জন্য উন্নত দেশসমূহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ ইউরোপ। ‘ইরাসমুস মুন্ডুস’ স্কলারশিপের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের দেশগুলোতে সম্পূর্ণ বিনা খরচে যাওয়া সম্ভব। উচ্চতর শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো এবং শিক্ষাগত সহযোগিতার মাধ্যমে জনগণ ও সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগ এবং বোঝাপড়া বৃদ্ধি করাই এই স্কলারশিপের মূল উদ্দেশ্য। এই স্কলারশিপ টিউশন ফি, লাইব্রেরি ফি, পরীক্ষা ফি, গবেষণা সংক্রান্ত ফি, বিমান খরচসহ জীবনযাত্রার অর্ধেক খরচ বহন করে।

এছাড়াও একাধিক দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি থাকায় এই স্কলারশিপের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সের শিক্ষার্থীরা কোর্স চলাকালে নূন্যতম দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পাবেন।

৪. যৌথ জাপান বিশ্ব ব্যাংক গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ:

উচ্চশিক্ষার জন্য যেসকল শিক্ষার্থীরা জাপানে যেতে চান, তারা ‘যৌথ জাপান বিশ্ব ব্যাংক গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ’ এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এ শিক্ষাবৃত্তির অধীনে টিউশন ফি, মাসিক ভাতা, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য বীমা খরচ বহন করে থাকে।

৫. এন্ডেভার পোস্ট পোস্টগ্রাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস:

অস্ট্রেলিয়ায় বিনামূল্যে মাস্টার্স বা পিএইচডি কোর্স করার সুযোগ দিচ্ছে ‘এন্ডেভার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস’ শিক্ষাবৃত্তি। এ স্কলারশিপের আওতায় বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ ছাড়াও ভ্রমণ ভাতা, মাসিক ভাতা এবং স্বাস্থ্য বীমাসহ পূর্ণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ১৩৯। একবছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়েছে ৮২ শতাংশ। বিদেশ যাওয়া শিক্ষার্থীদের হার বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালে এ সংখ্যা এক লাখ ছাড়াতে পারে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে শুধু মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে ৩৪ হাজার ১৫৫ জন। এছাড়া কানাডায় ২ হাজার ২৮ জন, ভারতে ১ হাজার ৯৯ জন, জাপানে ৮১০ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪৫৫ জন গেছেন। থাকার খরচ, আবহাওয়া, খাবারের অভ্যাস ও সামাজিক রীতিনীতি অনেকটা বাংলাদেশের মতো হওয়ায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

টিআই/