বীমার আওতায় আসলো সম্প্রচার কেন্দ্রের ১১শ’ সাংবাদিক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৩৮ পিএম, ৯ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:২১ পিএম, ৯ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার
সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের ১ হাজার ১১৪ সদস্যকে বীমার আওতায় আনা হয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে সম্প্রচার কেন্দ্রের একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি ১০ লাখ ৮ হাজার ৭৮৭ টাকা প্রিমিয়াম বাবদ জমা দেয়া হয়েছে বীমা কোম্পানিটিতে। এই বীমার ফলে সংগঠনের সদস্যরা গ্রুপ হসপিটালাইজেশন প্লানের আওতায় দেশের যেকোন হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা নিতে পারবেন।
সদ্য প্রতিষ্ঠিত সম্প্রচার সাংবাদিকদের এ সংগঠনটি দেশে প্রথম এরকম বীমা সুবিধা চালু করেন। মঙ্গলবার বিকালে একুশে টিভি অনলাইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে এরকম আরও কল্যাণমূলক কর্মসূচি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, সকল পেশাতেই মূল পেশার বাহিরে একটা সাপোর্ট অর্গানাইজেশন থাকে যারা সুখে-দুঃখে, ঝুঁকিতে পাশে দাঁড়ায়। সেনাবাহিনীর এরকম সংগঠন আছে, পুলিশের আছে, আইনজীবিদের আছে। কিন্তু সাংবাদিকদের এরকম কোন কার্যকরি সংগঠন নেই। আর থাকলেও সেটা শুধু নামেই আছে, কাজে নেই।
জানা যায়, সংগঠনের সদস্যরা হাসপাতালে ভর্তি হলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পাবেন বীমা কোম্পানি থেকে। এই সুবিধা নেয়া যাবে বছরে ৩ বার। এছাড়াও গ্রুপ লাইফ ইন্স্যুরেন্স প্লানের আওতায় সংগঠনের প্রতিটি সদস্যের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৩ লাখ টাকা, স্বাভাবিক মৃত্যুতে দেড় লাখ টাকা এবং সম্পূর্ণ ও স্থায়ী অক্ষমতায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
শাকিল আহমেদ বলেন, প্রথমেই আমরা দেখলাম যে, স্বাস্থ্য এমন একটা জায়গা, যেটা আমাদের নিশ্চিত হওয়া দরকার। এজন্য আমরা এই বিমার ব্যবস্থা করেছি। এটা গত ৩০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১১শ’ সাংবাদিক এটার আওতায় আছে।
সম্প্রতি চ্যানেল নাইন ও দেশ টিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেলে সাংবাদিকরা চাকরিচ্যুত হচ্ছে, শুধু বীমার আওতায় এনে কতটুকু দায়িত্ব পালন করা যাবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাকিল আহমেদ বলেন, আসলে আমাদের সম্প্রচার কেন্দ্র কোন ইউনিয়ন নয় যে, আমরা সরাসরি কোন আন্দোলনে যেতে পারবো। আমরা ঝুঁকি মোকাবেলার একটি সংগঠন, আর ঝুঁকির প্রথম শর্তটা হচ্ছে তার চাকরি যেন ঠিক থাকে। যখন চাকরি চলে যায়, তখন তো আর তার অন্য কোন ঝুঁকির মোকাবেলা করে লাভ থাকে না। এজন্য আমরা নতুন করে ভাবছি কিভাবে আমরা এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলা করবো। চাকরিচ্যুত হওয়ার পর আমরা তাদের মুখ থেকে শুনেছি, তাদের প্রকৃত অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা করেছি। আমরা আশা করি খুব শিগগিরই মালিক বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসতে চাইবো। এবং চাকরিচ্যুতের মূল কারণটা খুঁজে তার প্রতিকারের জন্য চেষ্টা চালাবো। হয়তো আমরা দ্রুত বড় একটা প্রতিবাদ সভা করতে পারি, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসতে পারি। আমরা দেশের শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে যারা আছেন, যারা দায়িত্বশীল তাদের কাছে যেতে পারি। আমরা জনমত তৈরি করতে পারি। আমরা নিজেরা বসেই এসব বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
সাংবাদিকদের জন্য আগামীতে আর কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের খুব ইচ্ছা যে, সাংবাদিকদের নিজেদের পায়ের নিচে একটা শক্ত মাটি নিশ্চিত হবে। সাংবাদিকরা পেশার উপর নির্ভর থাকলেও নানা রকম ঝুঁকিতে পড়তে হয়, চাকরিচ্যুত হয়, আমি মনে করি যে, এটা আমাদের এক নাম্বার এজেন্ডা হওয়া উচিত। এজন্য আমরা চেষ্টা করছি সাংবাদিকদের জন্য একটা কর্মসূচি হাতে নিতে। সাংবাদিকদের প্রত্যেকেই যেন আর্থিক একটা সাপোর্ট পান সেটার জন্য আমরা কাজ করবো। আর আর্থিক নিশ্চয়তাটা তো দিবে প্রতিষ্ঠান। সেখানেও যেন নিশ্চয়তা থাকে, বেতন কাঠামো ঠিক থাকে, হঠাৎ করে কর্মস্থল থেকে চাকরিচ্যুত না করে সে জন্য আইনীভাবে আমরা সহায়তা দিব। আমরা চাই সকল সাংবাদিকদের একটা প্লাটফর্মে এনে এই কাজটা করতে।
উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুযারি টেলিভিশন ও রেডিওর সাংবাদিকদের এক প্লাটফর্মে আনতে যাত্রা শুরু করে নতুন সংগঠন সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র-বিজেসি। ‘সম্প্রচার শিল্প: একটি সম্ভাবনার সংকট’ প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলানায়তনে এ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বেসরকারি টিভির যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। এখন দেশে ৪৪টি চ্যানেলের অনুমোদন রয়েছে। ৩০টি সম্প্রচারে আছে। এরইমধ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা দিতে সরকার বেশ কিছু আইন ও নীতিমালাও হাতে নিয়েছে। সরকারকে টিভি সংবাদকর্মীদের দ্রুত ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, আলাদা ওয়েজবোর্ড আজও করা যায়নি। এটা হতাশাজনক। আগামি ৫ বছরের জন্য নূন্যতম লাভ করে চ্যানেল টিকিয়ে রাখতে হবে৷ সবাইকে এক হতে হবে। কারণ অনলাইনে বিকল্প প্লাটফর্মে জায়গা শক্ত হচ্ছে
এসময় সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক ও সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ বিভিন্ন দাবী তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, পে চ্যানেল করা, বিজ্ঞাপনের টাকা পরিশোধের সময়সীমা বেধে দেয়া, টিভিকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড, ঝুঁকি মোকাবিলা, পেশাগত ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানো, গবেষণা ও নীতিসহায়তার লক্ষ্য সামনে রেখে সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র কার্যকরভাবে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় নেওয়া হয়।
এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, গাজী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ও বিজেসির সভাপতি রেজোয়ানুল হক রাজা এবং একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা প্রধান ও সংগঠনের সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ বক্তব্য দেন।
টিআই//এসি