বিশ দলে কয় দল?
আজাদুল ইসলাম আদনান
প্রকাশিত : ০৪:৪২ পিএম, ১০ মে ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৬:০৫ পিএম, ১০ মে ২০১৯ শুক্রবার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন, ২০ দলের সঙ্গে আলোচনা না করে বিএনপির সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়া, ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়া ও সাংগঠনিক দুর্বলতায় ভাঙনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এখন ২০ দলীয় জোট।
জোটের শরিকদের অভিযোগ, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পর্কে না জড়ালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও ২০ দলকে আজকের অবস্থায় পড়তে হতো না। নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য ঐক্যফ্রন্টমুখীকেই দায়ী করছেন তারা।
এমনকি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জোটের চেয়ে ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। সবমিলে নানা কারণেই খোদ বিএনপিতেই চলছে টানাপোড়ন।
গেল সোমবার (৭ মে) বিএনপির রাজনৈতিক মাঠের দীর্ঘ দিনের বন্ধু আন্দালিব রহমান পার্থ’র দল (বিজেপি) ২০ দল থেকে বেরিয়ে গেছেন। বিভিন্ন আলোচনা এবং টকশোতে পার্থ তার অভিমানের কথা প্রকাশ্যে বললেও এমন পরিস্থিতিতে একেবারেই নিরব দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি।
জোটের শরিক জামায়াত ছাড়া এখানে তেমন কোন শক্তিশালী দল নেই। প্রায় সবাই নামমাত্র ও বিএনপির উপর নির্ভরশীল। ফলে, বিএনপির এমন কর্মকাণ্ডে হতাশ ও ক্ষুব্ধ জোটের শরিক দলগুলো।
এদিকে, পার্থ বেরিয়ে যাওয়ায় বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। অন্যান্য ছোট দলগুলোও বেরিয়ে যেতে পারে যেকোন সময়। ফলে, সংকটের নতুন রুপ দেখতে যাচ্ছে বিএনপি।
শুধু জোট নয়, এককভাবে বিএনপিও এখন চরম সংকটে। যার প্রধান কারণ হিসেবে দলের চেয়ারপারসনকে কারামুক্ত করতে না পারা এবং সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দেখছে সবাই। যা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকে আরও প্রকোট আকার ধারণ করেছে।
ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনসুর ও মোকাব্বির শপথ নিলে প্রথম ভাঙনের ডামাডোল বাজে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। অপরদিকে, অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিএনপির একক সিদ্ধান্তে নির্বাচিতরা শপথ নিলে ভাঙনের চুড়ান্ত রুপ লাভ করে।
এদিকে, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ঐক্যফ্রন্টের দ্বিমুখী আচরণে চটেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। আগামি ৩০ দিনের মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট নিজেকে সংশোধন না করলে, রেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন তিনি। নির্বাচনের আগে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এর সভাপতি আ স ম আব্দুর রব সরব থাকলেও, চলমান সংকটে নিরব তারা।
মূলত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল বিএনপির জন্য ট্রাম্প কার্ড। আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যায়নি। বিএনপির জন্য যা ছিল কালের খরা।
প্রথমদিকে নেত্রীকে ছাড়া নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও, বাস্তব পরিস্থিতি চিন্তা করে তাদের নির্বাচনে আসতে হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বেগম জিয়ার মুক্তির দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়, নেতৃত্বের নতুন সংকটে পড়ে দলটি। এমন মূহুর্তে এখন পর্যন্ত বিএনপিকে সেরকম কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
বিএনপির সাংসদ জাহিদ শপথ নিলে বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। পরে, দলীয় সিদ্ধান্তে বাকিদের শপথ নিতে বলা হয়, যাতে শেষ মানটুকু রক্ষা হয়।
এতে দল ও শরিকদের মাঝে প্রকাশ্যে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। প্রশ্নের মুখে পড়ে জোটের নীতি ও শৃঙ্খলা। সমালোচিত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কেননা, তিনি শপথ নেননি।
বিএনপি ও শরিকদের মাঝে যে সাংগঠনিক দুর্বলতা তা সবার জানা। ফলে, এমন অবস্থায় নতুন করে কেউ চলে গেলে সেই দলটিকে ফেরানোর কোন উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না তা সন্দেহ থেকেই যায়।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, পুরো বিরোধী শিবিরে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে কিছুটা সময় লাগবে।
এমন অবস্থায় ড. কামাল ও তার ঐক্যফ্রন্টও কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে, চলমান সংকট মোকাবেলায় বিএনপির দুর্দশা আরো বেশি প্রকট হচ্ছে।
সবমিলে বিরোধী শিবিরে চলছে এখন ভাঙনের হিড়িক। দেখার বিষয়, বিশ দল শেষ পর্যন্ত কয়দলে বিভক্ত হয়।
আই/এসএ