গণপরিবহনে নারীর জন্য ৫টি বিপদ সংকেত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৫১ এএম, ১১ মে ২০১৯ শনিবার
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের একটি বাসে একজন নার্সকে ধর্ষণের পর তাকে হত্যার ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত ওই নার্স গত সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জে নিজ গ্রামে ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হন। পরে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাপরিচালক মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, তাদের এক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৮ সালে গণপরিবহনে ২১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এ ধরনের ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা এর চাইতেও অনেক বেশি বলে জানান মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তাই এ রকম পরিস্থিতিতে গণপরিবহনে নারীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোন পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন?
রাতে খালি বাসে না চড়া
গণপরিবহনে চলাচল করা নারীদের অধিকাংশই জানান যে রাতে গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে সবসময়ই তারা অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করে থাকেন।
ঢাকার বাসিন্দা মার্জিয়া প্রভা জানান, রাতে বাসে চলাচলের সময় অপেক্ষাকৃত খালি বাসে কখনোই ওঠেন না তিনি।
‘রাতে অনেক সময় দেরি হয়ে গেলেও খালি বাসে উঠি না। অনেক সময় যেই বাসে অল্প কয়েকজন পুরুষ যাত্রী থাকেন, যেখানে আমিই একমাত্র নারী যাত্রী, সে সব বাসেও উঠি না।’
এছাড়াও রাতে চলাচলের সময় কোন প্রতিষ্ঠানের বাস, সেটি কোন রাস্তা দিয়ে যাবে এ সব বিষয়ও বিবেচনায় রাখেন বলে জানান গণপরিবহনে চলাচল করা নারী যাত্রীরা।
কোন পথ দিয়ে যাচ্ছে
নারীদের অধিকাংশই জানান যে গণপরিবহনটি কোন রাস্তা দিয়ে যাবে সে বিষয়টিও তারা আগে থেকে চিন্তা করে থাকেন।
বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন এ রকম একজন শাহনাজ পারভীনকে প্রায়ই গণপরিবহনে চলাচল করতে হয়। তার বাসা অপেক্ষাকৃত নির্জন একটি এলাকায়।
ভাড়ায়-চালিত মাইক্রোবাসে চলাচল করতে গিয়ে একবার বিরুপ অভিজ্ঞতার শিকার হন তিনি। এরপর থেকে সন্ধ্যার পর সে সব এলাকায় সাধারণত একা গণপরিবহণ ব্যবহার করেন না তিনি।
নির্জন এলাকা দিয়ে চলাচল করার বিষয়ে মার্জিয়া প্রভা বলেন, সন্ধ্যার পর বাস কোন রাস্তা দিয়ে যাবে, নারী হিসেবে সে বিষয়টি সবসময় মাথায় রাখতে হয়। অনেক সময় অসুবিধা হলেও বিশেষ কিছু এলাকা পার হওয়ার আগেই বাস থেকে নেমে পড়ি।
পরিবহন শ্রমিকদের আচরণ
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাপরিচালক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গণপরিবহনে চলাচলের সময় পরিবহন শ্রমিকদের আচরণের দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন নারীদের।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় সব বাসেই ড্রাইভারের পাশে বা পিছনে নারীদের সিট রাখা থাকে। তাই ড্রাইভার যদি নারীদের দিকে বারবার তাকান বা লুকিং গ্লাস দিয়ে বারবার দেখেন তাহলে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
শাহনাজ পারভীন বলেন, নির্জন এলাকা দিয়ে চলার সময় বা একা নারী হিসেবে কোনও গণপরিবহনে চলাচল করার সময় চালক, সুপারভাইজার বা হেলপারের আচরণের দিকে সবসময় খেয়াল রাখলে নারীরা পরিবর্তনটা বুঝতে পারবেন।
নিজের একটি অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে মাশহুদা হক ইফা জানান, একবার বাসে একটি ঘটনার প্রতিবাদ করায় ওই বাসের চালক ও সহকারীর বিরুপ আচরণের শিকার হন তিনি। সে সময় তার সহযাত্রীরাও ওই ঘটনার কোনও প্রতিবাদ করেননি বলে জানান তিনি।
যাত্রী হিসেবে যখন একা
গণপরিবহনে চলাচল করেন এমন কয়েকজন নারী জানান, নির্জন এলাকা দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে বা রাতে তারা কখনোই একা চড়েন না।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাপরিচালক মোজাম্মেল হক চৌধুরীও বলেন, গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে বাসে কখনোই একা ওঠা উচিত নয় একজন নারীর।
নারীদের অধিকাংশই মনে করেন যখন কোনও বাসে তারা একা থাকেন তখন সামনের দিকে দরজার কাছের সিটে বসলে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বোধ করেন তারা।
বিশেষ গণপরিবহন এড়িয়ে চলা
প্রায়ই রাতে বাসে যাতায়াত করেন এমন একজন সুরাইয়া জাহান জানান যে তিনি পরিচিত প্রতিষ্ঠানের বাস ছাড়া ওঠেন না।
‘বেশ কয়েকবার দেখেছি চেনা রুটে অল্প যাত্রী নিয়ে অচেনা বাস চলাচল করছে। সে সব বাসে কখনোই উঠি না’, বলেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি
একে//