ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বল্টু_সমাচার ৫

আবদুল জাববার খান

প্রকাশিত : ১২:৫৯ পিএম, ১১ মে ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০১:২৩ পিএম, ১১ মে ২০১৯ শনিবার

(আবদুল জাববার খান)

(আবদুল জাববার খান)

প্রায় তিন ঘন্টা ধরে টেইলরের দোকানে মন খারাপ করে বসে আছে বল্টু। নতুন বানানো প্যান্ট নিয়ে বিরাট ঝামেলা হয়ে গেছে।
ট্রায়াল রুমে গিয়ে পরতেই মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। প্যান্টের ডান পা ছোট হয়ে গেছে। দর্জিকে চার্জ করতেই এক গাল হেসে বলে,
: চেইতেন না! আপনের হাইটে ঘাপলা আছে।
পঁচিশ বছর ধইরা এইগুলো কইরাই খাই।
শুনে বল্টু কঠিন স্বরে বললো,
: হাইটে ঘাপলা থাকলে, এক পা ছোট হবে কেন? দুই পা`ই ছোট হবে। ফাজলামি করো!
তোমাদের মতো মানুষের জন্য দরকার, কথার আগে চড়!
দর্জি ব্যাটার ধৈর্য্য অসীম। মোলায়েম একটা হাসি দিয়ে বললো,
: ভাইজানের বোধহয় আজকে মাথাডা একটু বেশি গরম। হইবোইতো! যেই গরম পড়ছে!
বলতে বলতে নিজের গালটা সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো,
: দেন! কইষা দুইডা চড় দেন! তবুও মাথা ঠান্ডা করেন!
বল্টু কনফার্ম হয়ে গেল যে পৃথিবীর সবচাইতে ঠান্ডা মাথার লোক হলো এই দর্জি ব্যাটারা। হয়তো ব্যতিক্রম থাকতে পারে। তবে এখনও চোখে পড়েনি।
তবে চড় দেবার মতো ভুল করতে বল্টু রাজি না। দর্জি ব্যাটা তার চাইতে কমপক্ষে এক ফুট লম্বা। কখন আবার কি হয়...!

টেইলর মাস্টার খুবই শান্ত গলায় পরামর্শ দিলো,
: ভাইজান একটু কষ্ট কইরা বসেন! সামান্য হাতের কাজ। কারিগরের কাছে পাঠামু। দশ মিনিটের মধ্যে চইলা আসবো! আপনে বইসা বইসা এক কাপ চা খান!
সেই দশ মিনিট তিন ঘণ্টা হয়ে এলো।

জরিনাকে নিয়ে সিনেমা দেখবে। প্রোগ্রাম সেট করা। বাসা থেকে নতুন একটা শার্ট আর রাতের পাজামা পরে সরাসরি দর্জি দোকানে চলে এসেছে। প্যান্ট টা অনেক আগেই ডেলিভারি নেবার কথা। তাই কোন কনফিউশন ছিলো না। এখন পড়েছে মহা ফাঁপরে! পাজামার বদলে অন্য কোন প্যান্ট পরে আসলেই হতো। অবশ্য সিনেমা শুরু হতে এখনও দেরি আছে। বাসায় গিয়ে অন্য প্যান্ট পরে আসলেও হতো। কিন্তু নতুন প্যান্টের আশায় আশায়....
: ভাইজান, নেন আপনের প্যান্ট!
দর্জির বাজখাঁই গলার চিৎকারে বল্টুর তন্দ্রা ভাবটা কেটে গেল। হাত বাড়িয়ে প্যান্টটা নিয়ে সোজা ট্রায়াল রুমে।

সিএনজির ভাড়া চুকিয়ে সিনেমা হলের পাশে একটা কফি শপে ঢুকে গেল। জরিনা একটা টেবিল নিয়ে বসে আছে। বেবি পিংক কালারের শাড়ি পরা জরিনাকে রাজকন্যার মতো দেখাচ্ছে। মুখোমুখি একটা চেয়ার টেনে বসলো বল্টু। হাসি হাসি মুখে বললো,
: খুবই খুশি হয়েছি। আমার আগেই তুমি চলে এসেছো, এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না।
জরিনাও একটা কমপ্লিমেন্টারি হাসি দিলো।
বললো,
: ভাইয়া, আপনার পছন্দের রংয়ের শাড়ি পরে এসেছি। ম্যাচিং করার মতো কিছু ছিলো না। শুধু আপনার ভালো লাগবে ভেবে পরেছি। সিনেমা দেখার পর কিন্তু এটার ম্যাচিং এক্সেসরিজ কিনবো আপনাকে নিয়ে!
বিরাট খরচের ব্যাপার!
প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে
বল্টু্ জবাব দিলো,
: কোন সমস্যা নেই!
এখন কি আমি আমার গভীর কিছু চিন্তা ভাবনা তোমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারি?
জরিনা গাল বেঁকিয়ে বললো,
: এটা আপনার গভীর কথা বলার সময়!
সিনেমা শুরু হওয়ার পথে। চলুন! ওঠা যাক!
মুখে চলে আসা ভালোবাসার কথা মুখেই থেকে গেল। বল্টু উঠে দাঁড়ালো।
কি আর করা!
অন্ততঃ সিনেমা টা একসাথে দেখা যাক!

জরিনাদের অবহেলায় এভাবেই বল্টুভাইদের কতো কথা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে, কে জানে! আহা...!

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বসুধা বিল্ডার্স লি.।