ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

রমজানে ভিড় বেড়ে যায় ওমরা পালনে

সৌদি আরব থেকে মো. ফিরোজ

প্রকাশিত : ০৬:১৯ পিএম, ১১ মে ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৯:০৫ পিএম, ১১ মে ২০১৯ শনিবার

পবিত্র নগরী মদিনা মুনাওয়ারা সব সময়ই আশেকে রাসুলের পদচারণায় থাকে মুখরিত। হজ সময় এ ভিড় বেড়ে যায় প্রায় ৩০-৪০ গুণ বেশি। কিন্তু রমজানেও ওমরা পালনে ভিড় বেড়ে যায়। সারা বিশ্ব থেকে হজ উপলক্ষ্যে মুসলিম উম্মাহ আসে পবিত্র নগরী মক্কায়। আর যারা প্রথম দিকে হজে আসেন তাদের গন্তব্যস্থল হলো মদিনা মুনাওয়ারা।

তাদের অনেকেই মদিনার মসজিদে নববিতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। অর্থাৎ তারা সেখানে ন্যূনতম ৮ দিন অবস্থান করেন। জিয়ারতকারীদের মদিনায় যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা। রওজা শরিফের পাশে দাঁড়িয়ে সালাত ও সালাম প্রদান করা। হৃদয়ে লালিত প্রিয় নবীর প্রতি ভালোবাসার স্বাদ গ্রহণ করা।

রওজার পাশে দাঁড়িয়ে সালাম প্রদানে প্রিয়নবী সারাসরি সালাম প্রদানকারীর সালামের উত্তর দেন। খাঁটি মুমিন বান্দা ও আশেকে রাসুল তাদের অন্তর দিয়ে সালাম আদান-প্রদানের বিষয়টি উপলব্ধি করেন।

হাদিস ও ফিকাহের গ্রন্থগুলোতে এ বিষয়ে প্রচুর নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামী স্কলারদের মতে, মদিনায় আসা ইবাদতের অংশ বিশেষ।

হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আমার রওজা জিয়ারত করলো, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে গেলো। -সহিহ মুসলিম
 
নবী করিম (সা.) আরও বলেন, যে হজ করলো কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করলো না; সে আমার প্রতি জুলুম করলো। -তিরমিজি

ইসলামী স্কলারদের মতে, হাজির জন্য মদিনা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। অনেকে ওয়াজিবও বলে থাকেন।
 
এ কারণে হজপালনের আগে কিংবা পরে হাজিরা মদিনা শরিফ আসেন। মদিনায় অবস্থানকালে হাজিদের প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, মসজিদে নববিতে হাজিরা দেওয়া এবং সেখানে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। মসজিদে নববিতে এক রাকাত নামাজের সওয়াব পঞ্চাশ হাজার রাকাত নামাজের সমান। এছাড়া মসজিদে নববীতে বিরতিহীনভাবে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ  জামাতের সঙ্গে আদায়ের আলাদা ফজিলত রয়েছে।
 
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হয়রত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে আর কোনো নামাজ কাজা করেনি, সে নিফাক (মোনাফিকি) আর দোজখের আজাব থেকে নাজাত পাবে।

মদিনা শরীফের রয়ওজা জিয়ারত মহিলাদের জন্য আলাদা দরজা ও গেইট নাম্বার ও দেওয়া হয়েছে। মহিলারা মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন এবং জিয়ারত করতে পারবেন।  
 
মসজিদে নববির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূণ স্থান হলো- নবী করিম (সা.)-এর রওজা মোবারক। উম্মুল মুমিনিন হয়রত আয়েশা (রা.)-এর হুজরার মধ্যে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর পবিত্র রওজা মোবারক অবস্থিত। রাসূলের রওজার পাশে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) ও ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.)-এর কবর। পাশে আরেকটি কবরের জায়গা খালি। এখানে হযরত ঈসা (আ.)-এর কবর হবে।
 
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারতের ফজিলত প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর তার রওজা মোবারক জিয়ারতে করলো, সে যেন রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জীবদ্দশায় দশন করলো।
 
মসজিদে নববিতে প্রবেশের অনেকগুলো দরজা রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম পাশে রাসূলের রওজা জিয়ারতের জন্য যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়, ওই দরজাকে ‘বাবুস সালাম’ বলা হয়। বাবুস সালাম দিয়ে প্রবেশ করে রাসূলের রওজায় সালাম শেষে ‘বাবুল বাকি’ দিয়ে বের হতে হয়।
 
মদিনায় জিয়ারতে হাজীদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। কারণ মদিনায় এসে দুনিয়ায় জীবিত থাকতে জান্নাতে ভ্রমণের সুযোগ মেলে। কারণ নবী করিম (সা.)-এর রওজা শরিফ এবং এর থেকে পশ্চিম দিকে রাসূলে করিম (সা.)-এর মিম্বর পযন্ত স্বল্প পরিসরের স্থানটুকুকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগিচা বলা হয়। এটি দুনিয়াতে একমাত্র জান্নাতের অংশ। এই স্থানে স্বতন্ত্র রঙয়ের কার্পেট বিছানো থাকে।
 
এই স্থানটুকু সম্পর্কে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার রওজা ও মিম্বরের মধ্যবতী স্থানে বেহেশতের একটি বাগিচা বিদ্যমান। এখানে প্রবেশ করা মানে জান্নাতে প্রবেশ করা।
 
বস্তুত দুনিয়ার সব কবরের মধ্যে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে বেশি জিয়ারতের উপযুক্ত স্থান হলো- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক। তাই এর উদ্দেশে সফর করা উত্তম। এ কথার ওপর পূর্বাপর সব উলামায়ে কেরামের ঐকমত্য রয়েছে।
 
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমলে মসজিদে নববীর আয়তন ছিলো ২৫০০ বর্গ মিটারের মতো। কিন্তু যুগের পরিক্রমায় প্রয়োজনের তাগিদে মসজিদে নববীর অনেক সংস্কার ও সম্প্রসারণ হয়েছে। এখন এর আয়তন প্রায় ২,৩৫,০০০ বর্গমিটার। একসঙ্গে প্রায় সাড়ে চার লাখ মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদে নববীতে মহিলাদের জন্য স্থান একবারেই আলাদা।


এসএইচ/