ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

চাকুরিজীবী আমার মা

বৈশাখী চক্রবর্তী

প্রকাশিত : ০২:৫২ পিএম, ১২ মে ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৩:২৯ পিএম, ১২ মে ২০১৯ রবিবার

বৈশাখী চক্রবর্তী।

বৈশাখী চক্রবর্তী।

মাকে নিয়ে লিখবো ভেবে ভেবেও লেখা হয়ে ওঠে না। যখন থেকে বুঝতে শুরু করেছি তখন থেকেই মাকে পাশে পেয়েছি। আমার মা একজন নার্স ছিলেন, এখন রিটায়ার্ড করেছেন।

কর্মজীবনে মা খুব সুনাম পেয়েছেন। স্বর্ন পদক পাওয়া আমার মা সহজে সবার সাথে মিশতে পারতেন। তাই মাকে সবাই ভালো জেনেছে।

ডাক্তার থেকে শুরু করে রোগী, আয়া, সুইপার সবাই মাকে পছন্দ করতো। আমরা তখন ভোলার দৌলতখান উপজেলায় থাকতাম, বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে হাসপাতালের সব স্টাফ আমাদের বাসায় আসতো।

মা ফ্লাক্স ভর্তি করে চা করে রাখতো সবার জন্য। আমি তখন খুব ছোটো ছিলাম, তবে আমার মনে আছে একবার সবাই খাটে বসে আনন্দ করার সময় খাট ভেঙে ফেলে।

যে কোনো বিপদে, সমস্যায় সবাই আমার মার কাছে আসতো। আমার বাবা চাকুরির সুবাদে দূরে থাকতেন। ৩ থেকে ৪ মাস পর পর আসতেন। তাই আমাদের যতো প্রয়োজন সব মিটাতো মা।

পরিবারের সবার ছোটো হবার জন্যই বোধহয় আমার চাহিদা বা আবদার একটু বেশীই থাকতো! কিন্তু আমার মা সেই আবদার রাখতেন!

একবার পূজায় দোকানে গিয়েছি জুতা কিনতে। আমার একসাথে দুজোড়া জুতা পছন্দ হলো। কোনটা নেবো ঠিক করতে পারছি না! মা কে বললাম মা দুটাই ভালো লাগছে। অনেকক্ষন পর মা কি মনে করে দুটাই কিনে দিলেন।

তখনতো বুঝতাম না কিন্তু এখন ভাবি কি করে অল্প টাকার বেতনে মা সব দিক সামলাতেন!!! ৩য় শ্রেণিতে যখন পড়ি মাথায় ঢুকলো গান শিখবো।

মা বরিশাল থেকে হারমনিয়াম বানিয়ে নিয়ে, বাসায় গানের টিচার দিয়ে গানের শিক্ষা শুরু করে দিলেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাদের (আমি ও আমার বোন) নিয়ে যেতে মা দ্বিতীয়বার ভাবতেন না। মার একটা দারুন অভ্যাস ছিলো। বই পড়ার অভ্যাস।

আমাদের পাঠ্যপুস্তক হোক বা পুরস্কার হোক নতুন বই পেলে মা আগেই সেটা পড়তো। আমি ছোটো থোকেই যেটা ভালো লেগেছে সেটাই করেছি যেমন গান,নাচ, অভিনয়, জারি, স্কাউট, গার্লস গাইড এমন কি লাক্স ফটোজেনিকেও নাম দিয়ে ছিলাম!!!

আর আমার মা আমায় এসব বিষয়ে দুর্দান্ত সাপোর্ট দিয়েছেন। কিন্তু এই মা এর সাথেই আমি প্রায় ১বছর কথা বলিনি! যে সময়টা সব থেকে বেশী মা এর সাপোর্ট দরকার ছিলো। সেই সময় মা আমার পাশে থাকেনি বা থাকতে পারেনি!

আমাদের সমাজের কিছু বাঁধাধরা নিয়মের বলি হয়েছিলাম আমি আর আমার মা! একজন মেয়ের যেমন অধিকার নেই তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করার। তেমনি কেন মেয়েটা এমন করলো তার সমস্ত দায়ভার নিতে হয় একজন মাকেই!

আমার মাকেও তাই অসহনীয় অপমান করা হয়েছে তার মেয়ের সিদ্ধান্তের জন্য!!! কিন্তু আমিওতো ভেবে ছিলাম, যে মা আমার সব চাওয়াকে পাওয়ায় রূপ দিয়েছে পৃথিবীর কেউ পাশে না থাকলেও সে থাকবে!

তাইতো অভিমানটা এতো গাঢ় হয়ে গিয়েছিলো! যাইহোক,সে দুঃখগুলো মনের কোণে জমাই পরে থাক! আমার মা চাকুরীজীবি ছিলেন বলেই আমরা পড়ালেখাটা শেষ করতে পেরেছি আর এখন চাকুরি করছি, না চাইতেই অনেক পেয়েছি।

শুধু আমরা না, মা চাকুরি করতেন বলেই বাবা তার ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখায় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

মা চাকরি করতেন বলেই বাবা তার ভাইয়ের মেয়েদের বিয়েতে সাহায্য করতে পেরেছিলেন। মাও সবাইকে বিভিন্ন সময় আর্থিক সাহায্য করেছেন।

মা চাকরি না করলে কিন্তু এগুলো কিছুই সম্ভব হতো না। আমি আমার জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েই সব সময় বলি মেয়েদের কিছু না কিছু করা উচিত।

আর্থিক ভাবে শক্ত কোনো মেয়েই সহজে ভেঙে পরে না। আমাদের সমাজের জন্য,দেশের জন্য কর্মজীবী মেয়েদের,মায়েদের খুব প্রয়োজন। সকল মায়েদের প্রতি ভালোবাসা। সন্তান মাকে ছাড়া কেউকে বেশী ভালোবাসতে পারে না। সকল মা সুখে থাকুক শান্তিতে থাকুক।

লেখক:প্রভাষক-অমৃত লাল দে কলেজ, বরিশাল। 

এমএইচ/