ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

নিম্নমানের ইফতারি-সেহরিতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

তবিবুর রহমান :

প্রকাশিত : ০৫:৫৩ পিএম, ১২ মে ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৯:২১ এএম, ১৩ মে ২০১৯ সোমবার

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা দিয়ে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের আগমণ ঘটেছে। সব মুসলিম নর-নারীর ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। রোজার সঙ্গে ইফতার ও সেহরির ফযিলত অনেক। তাই দিনভর রোজা রাখার পর সবাই চান পছন্দের খাবার। কিন্তু এসব খাবারে মান না থাকায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

রোজাদারদের পছন্দের কথা মাথায় রেখেই নগরের ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো সাজিয়ে রাখে ইফতার-সেহরির পসরা।

আজ রোববার রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায় পথের পাশে, খোলা আকাশের নিচে ইফতারের পসরা সাজিয়েছে অনেকে। যেখানে সাধারণ ছোলা, বেগুনি, পিঁয়াজু, হালিম থেকে শুরু করে মাংসের রকমারি খাবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। একদিকে অতি তৈলাক্ত সব খাবার, অন্যদিকে খোলা থাকায় ধুলা-ময়লায় অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে এসব ইফতারি ও সেহরির খাবার। শুধু তাই নয়, নগরীতে মধ্যেরাতে রেস্টুরেন্টগুলোতে যে সেহরির ব্যবস্থা রাখা হয় যা কোনভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কিন্তু ক্রেতাদের এগুলো খেতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যায় হলেও বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, পথের পাশে তৈরি করা ইফতার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই বিপজ্জনক। একই সঙ্গে এমন ইফতার না গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয় এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সংক্রামক্ রোগ। জীবাণুযুক্ত খাবার থেকে যেমন সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে, ঝুঁকি রয়েছে অসংক্রামক জটিল রোগেরও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পথ খাবারের স্বাস্থ্যসম্মত মান নিয়ে ক্রেতাদের মনে কোনো সংশয় কিংবা উদ্বেগ থাকে না। গত কয়েক বছরে এর চাহিদা বেড়েছে অনেক গুণ। ফুচকা-চটপটি থেকে শুরু করে বর্তমানে কাবাব-কলিজার হরেক রকম আইটেমও মেলে পথের পাশের খোলা দোকানে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে শমরিতা হাসপাতালের ডায়েটেশিয়ান সুমাইয়া সিরাজী একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রমজান মাসে পথের তৈরি অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিত্যাগ করে ঘরে তৈরি করা খাবার দিয়ে ইফতার করলে ভাল হবে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ইসবগুলের শরবত ও তোকমার শরবত খাওয়া যেতে পরে। এর সঙ্গে ছোলাও রাখতে পারেন। ফলেরে মধ্যে খেজুর, আম, কমলা, আপেল এবং কলা রাখতে পারেন।’

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রোজা মানুষকে সংযমী ও শুদ্ধ করে এবং অশ্লীল, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। রোজা বহুরোগের ওষুধ, যে কারণে আমদের রোজা রাখতে হবে নিয়ম মেনে। ইফতার করতে হবে নিয়ম অনুযায়ী। ইফতার ও সাহারীতে অস্বাস্থ্যকর পথ খাবার পরিত্যাগ করতে হবে। কেননা এখাবার খেলে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের সংক্রমক দেখা দিতে পারে। ইফতারের সময় বেশি বেশি চর্বিযুক্ত বা মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। ভাজাপোড়া খাবার অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। ইফতারে অতিভোজন এবং সেহরিতে অল্প আহার পরিহার করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘পথের তৈরি এমন খাবারে ডায়রিয়ার জীবাণুর ঝুঁকি বেশি থাকে। বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ দেখা দিতে পারে। হেপাটাইটিসের ঝুঁকি তো আছেই। আর অতিতৈলাক্ত খাবার থেকে আরো মারাত্মক সব ক্ষতিকর উপাদান মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। তাই খোলা জায়গার যেকোনো ধরনের খাবার গ্রহণ থেকে রিবত থাকা সবার জন্য জরুরী।’

নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মাহফুজুল হক বলেন, ‘মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। আগামীতে পথখাবারের স্বাস্থ্যসম্মত মান নিয়েও কাজ করাবো।’

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, ‘আমাদের আগে থেকেই নির্দেশ দেওয়া আছে, ফুটপাত বন্ধ করে কোনো দোকান বা বেচাকেনার পসরা বসানো যাবে না। এগুলো আমরা কঠোরভাবে মনিটরিংয়ে রাখছি। আমরা মূল দোকানের বাইরে কোনো ইফতারির পসরা দেখতে চাই না। দোকানের ভেতরে ইফতারসামগ্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি ও বিক্রি হয় কি না তা-ও মনিটর করা হবে।’

টিআর/এসএ/