ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

এক কোটি টাকাসহ গ্রেফতার হলেন বিজেপি নেতার প্রাক্তন সহায়ক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৩ এএম, ১৪ মে ২০১৯ মঙ্গলবার

আসানসোলে টাকা-সহ ধৃত গৌতম চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং লক্ষ্মীকান্ত সাউ।

আসানসোলে টাকা-সহ ধৃত গৌতম চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং লক্ষ্মীকান্ত সাউ।

এক কোটি টাকা-সহ আসানসোল স্টেশন থেকে গ্রেফতার হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক গৌতম চট্টোপাধ্যায়। একই অভিযোগে দলের আরেক কর্মী লক্ষ্মীকান্ত সাউওকেও গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার দুপুরে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নীলাঞ্জন রায়ের গাড়ি এবং সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় টামটার গাড়ি আটকে তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশ। আপত্তিকর কিছু না মেলায় পরে দু’জনের গাড়িই ছেড়ে দেওয়া হয়।

রেল পুলিশ জানায়, রোববার সন্ধ্যায় স্টেশনে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে গৌতম এবং লক্ষ্মীকান্তকে আটক করা হয়। এত টাকার বৈধ কোনও নথিপত্র দেখাতে না পারায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

রেল পুলিশের দাবি, ধৃতেরা নিজেদের বিজেপি কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছেন। হাওড়া ডিভিশনের রেল পুলিশের সুপার নীলাদ্রি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা দু’জনকে ধরেছি। তাদের কাছে হিসাব বহির্ভূত টাকা মিলেছে। বিশদ জানতে জেরা করা হবে।’’

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, আটক গৌতমের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শাসনে। লক্ষ্মীকান্ত নামে আর এক ধৃত দক্ষিণ দিল্লির বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন।

দিলীপবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘গৌতম আগে আমার আপ্ত সহায়ক ছিল। কিন্তু বেশ কিছু দিন ও আর ওই দায়িত্বে নেই। মাঝখানে ও আমার খড়্গপুরের কাজ দেখত। কিন্তু পরে ব্যবসা করবে বলে কখনও কাশ্মীর, কখনও আন্দামানে ঘুরছিল।

টাকা নিয়ে ধরা পড়েছে, সংবাদমাধ্যম থেকে জানলাম। কীসের টাকা, ওর ব্যবসার টাকা কি না, জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি। দলকে ফাঁসাতে এমন অনেক চক্রান্তই তো চলছে!’’

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এ দিন এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আইনানুগ তদন্ত হোক। পুলিশ ওই টাকা ওদের ব্যাগে রেখেছিল কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হোক।’’ 

রেল পুলিশ জানায়, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ আসানসোল স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দু’জন একটি নীল রঙের ব্যাগ নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলেন। গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় রেল পুলিশের কর্মীরা তাদের ধরেন।

ব্যাগে তল্লাশি চালাতেই দেখা যায়, থরে-থরে সাজানো রয়েছে দু’হাজার ও পাঁচশো টাকার নোট।

রেল পুলিশের দাবি, আটককৃতরা প্রথমে দাবি করেন, তারা ব্যবসার কাজে ওই টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কোনও নথিপত্র দেখাতে পারেননি তারা। তখন আয়কর দফতরে খবর দেওয়া হয়। টাকা গোনার যন্ত্র আনা হয়। টাকা গোনার সময়ে ভিডিওগ্রাফিও করা হয়।

রেল পুলিশের দাবি, জেরায় গৌতম তাদের কাছে বিশেষ মুখ না খুললেও লক্ষ্মীকান্ত জানান, তারা বিজেপি কর্মী। দলের কাজের জন্য ওই টাকা কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছিলেন।

তবে দিল্লি থেকে কোন ট্রেনে দু’জন এসেছিলেন, আসানসোলে কেন নামলেন— ধৃতদের কাছে এ সব প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। সোমবার ধৃতদের আসানসোল আদালতে তোলা হলে চার দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

অন্য দিকে, এ দিন দুপুরে কলুটোলার কাছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থী নীলাঞ্জনের গাড়িতে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তল্লাশি করে বৌবাজার থানার পুলিশ।

তখন অহেতুক হেনস্থার অভিযোগে সহকর্মীদের নিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন নীলাঞ্জন। তার পর বৌবাজার থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে নীলাঞ্জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নীলাঞ্জন বলেন, ‘‘দলের রাজ্য দফতরে গিয়েছিলাম। আমার কেন্দ্রে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর যে সভা করার কথা, তা নিয়ে বৈঠক ছিল। সেখান থেকে বেরোতেই পুলিশ আমার গাড়ি আটকায়। পুলিশ অফিসাররা বলেন, উপরমহলের নির্দেশে এই তল্লাশি।’’

কোনও ‘আইনি কাগজ’ ছা়ড়া তার গাড়িতে তল্লাশি হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাবেন নীলাঞ্জন। এ দিন রাতে পাটুলিতে টামটার গাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার

এমএইচ/