কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের রোজা
অধ্যাপক ডা. এসএমএ এরফান
প্রকাশিত : ১০:২০ এএম, ১৪ মে ২০১৯ মঙ্গলবার
সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান আমাদের মাঝে আগমন ঘটেছে। অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন রোগের কারণে অনেকেই রোজা রাখা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। রমজানে অন্যতম একটি সমস্যা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এ থেকে একটু সতর্ক ও সচেতন হলে শরীর সুস্থ রেখে রোজা রাখা সম্ভব।
সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারির সময় থেকে সাহরির সময় পর্যন্ত আমরা সাধারণত ‘রিচ ফুড’ অর্থাৎ উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাই।
আর সারা দিন পানিও খাওয়া হয় না, ফলে প্রায় সব রোজাদারেরই রমজানে একটু একটু কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
ফলে রমজানে পায়ুপথের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে পাইলস ও এনাল ফিসার নামক দুটি রোগের প্রাদুর্ভাব এ সময়ে সবচেয়ে বেশি হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য এবং তৎজনিত প্রেসার দিয়ে মলত্যাগের কারণে মলদ্বারের রক্তনালিসমূহ ফুলে গিয়ে ছিড়ে যেতে পারে, এতে প্রচুর রক্তপাত হতে পারে। এটিই পাইলস। এছাড়া কঠিন মলের কারণে মলদ্বারও ছিড়ে যেতে পারে। এতে অল্প রক্তপাত ও তীব্র ব্যথা শুরু হয়। ব্যথার জন্য রোগী কোনো কাজই করতে পারেন না।
গবেষণায় দেখা গেছে, রমজানে পাইলস ও এনাল ফিসারের সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী সৃষ্টি হয়। অপরদিকে পুরনো রোগী যারা আছেন তাদেরও পাইলস ও ফিসারের প্রকোপ এই সময়ে অনেক বেশি বেড়ে যায়। মলত্যাগের সময় রক্তপাত হলে রোজা ভেঙে যায়, আর তীব্র ব্যথা হলে রোগীকেই অনেক সময় রোজা ভেঙে ফেলতে হয় বা এরপর আর রোজা রাখতে পারেন না। ফলে অনেকেই রমজানের নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হন।
এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? প্রথম কথা হচ্ছে রমজানে যথাসম্ভব ফলমূল ও শাক-সবজি খান। ভাজা জিনিস যথাসম্ভব কম খান, আর যাদের পূর্বে থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য আছে মল নরম করার বিভিন্ন ওষুধ খান যেমন: মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া বা লেকটুলুজ। সবচাইতে ভালো হয় যদি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খাদ্যতালিকা তৈরি করা হয়।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যাদের পূর্ব থেকেই পায়ুপথের বিভিন্ন রোগ আছে যেমন রক্তপাত, ব্যাথা, ফোলা ইত্যাদি তাদের রমজানের পূর্বেই এর চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া। তাহলে সুন্দরভাবে তিনি রমজান মাসের সিয়াম সাধনা পালন করতে পারবেন।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যদি রমজান মাসে কোনো সম্মানিত রোজাদারের এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই একজন কোলোরেকটাল সার্জনের মাধ্যমে এর চিকিৎসা নেওয়া। তাহলে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগের চিকিৎসা হবে এবং তিনি বাকি রোজাগুলো যথাযথভাবে পালন করতে পারবেন। প্রত্যেকে ভালোভাবে পবিত্র রমজান উদযাপন করতে পারুক, এই প্রত্যাশা রইল।
লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বিআইএইচএস
চেম্বার: জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল