শোকরিয়া কৃতজ্ঞতাকারীর উপকার নিশ্চিত করে
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী :
প্রকাশিত : ০৪:১৫ পিএম, ১৪ মে ২০১৯ মঙ্গলবার
আমাদের অনেকের মনে এমন ধারণা জন্ম নিতে পারে যে, আমরা যেমন কারোর উপকার করলে তার মুখ থেকে ধন্যবাদ না শোনা পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারি না, তেমনি আল্লাহ মনে হয় তার বান্দার প্রশংসা পাবার মুখাপেক্ষী। আসল সত্য হলো, আল্লাহ অভাবমুক্ত ও অমুখাপেক্ষী। মানুষের কৃতজ্ঞতা বা অকৃতজ্ঞতায় তার কোন লাভ-ক্ষতি হয় না। তাই তিনি মানবজাতির কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা পাওয়ার মুখাপেক্ষী নন।
‘স্মরণ করো, তোমাদের প্রতিপালকের ঘোষণা, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই অধিক দেব আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার আযাব হবে কঠোর।’
মুসা (আ.) বলেছিল, তোমরা ও পৃথিবীর সবাই যদি অকৃতজ্ঞ হও তথাপি আল্লাহ অমুখাপেক্ষী এবং যাবতীয় গুণের আধার। (সূরা ইব্রাহিম ১৪/৭-৮)
কৃতজ্ঞতার পথ অবলম্বন করার মধ্য দিয়ে স্রষ্টার নয় বরং যিনি কৃতজ্ঞতার পথে অগ্রসর হবেন তার কল্যাণ সাধিত হয়। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীকে বৈচিত্র্যময় করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি দৈহিক সৌন্দর্য্য, মেধা, দক্ষতা, সৃজনশীলতাকে বিভিন্ন জনের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। এমন অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে আছেন যারা বেটে ও দেখতে কুৎসিত। যদি তারা স্রষ্টা প্রদত্ত মেধার স্বীকৃতি দিয়ে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে লেগে যায়, তাহলে খ্যাতি ও প্রাচুর্য তাদের পেছনে দৌঁড়াবে।
যখনই মানুষ নিজেকে আবিষ্কার ও তার ভেতরে প্রদত্ত সুপ্ত গুণাবলি আবিষ্কার করে, তখন নিজের ভেতরে স্রষ্টা প্রদত্ত প্রতিভার আলোক শিখা দেখতে পায়। একথাই এপিজে আবদুল কালাম তার ‘উইংস অব ফায়ার’ বইয়ে লিখেছেন- ‘এই সুন্দর গ্রহের প্রতিটা প্রাণীকে খোদা সৃষ্টি করেছেন এক একটা নির্দিষ্ট ভূমিকা পালনের জন্য। ... আমরা প্রত্যেকেই ভেতরে ঐশ্বরিক আগুন নিয়ে জন্মাই। আমাদের চেষ্টা করা উচিত এই আগুনে ডানা যুক্ত করা এবং তার মঙ্গলময়তার আভায় জগৎ পূর্ণ করা’।
এভাবে যখন কোন মানুষ স্রষ্টা প্রদত্ত প্রতিভাকে আবিষ্কার করে তখন কৃতজ্ঞতার পথে তার যাত্রা শুরু হয়, যখন একে বিকশিত করার প্রাণান্তকর প্রয়াস চালায়, তখন প্রাকৃতিক নিয়মেই খ্যাতি আর প্রাচুর্যের রাজপথ ধরে অগ্রসর হয়। এই পথে যত বেশি মানুষ কৃতজ্ঞ হয় ততো বেশি স্রষ্টার করুণা ধারা তার ওপর বর্ষিত হতে থাকে, আর সে প্রাকৃতিক আনুকূল্য পেতে শুরু করে। প্রতিটি মানুষের ভেতরের ইতিবাচকতার শক্তিকে যদি জাগ্রত করতে পারে, তখন পৃথিবীর কোন বাধাই তাকে ঠেকাতে পারে না। শুধু তাই নয়, পুরো সৃষ্টিজগৎ অন্তরের ভেতরে জাগ্রত ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে লেগে যায় স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছায়।
আসলেই ইতিবাচকতাই বাস্তবতা আর নেতিবাচকতা বিভ্রম। যে কোন পরিস্থিতিতে ইতিবাচকতায় উজ্জীবিত হতে হবে, যে কোন ঘটনাকে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে, এটাই কৃতজ্ঞতার মূল সুর।
আল্লাহ বলেন : ‘যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে নিজের কল্যাণের জন্য করে, আর যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত।’ (সূরা নামল ২৭/৪১)
‘আমি লুকমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম যে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাক। বস্তুত যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে নিজেরই কল্যাণের জন্য করে। আর যে অকৃতজ্ঞ সে নিজেরই ক্ষতি করে। কেননা আল্লাহ অভাবমুক্ত ও সর্বগুণে গুণান্বিত।’ (সূরা লুকমান ৩১/১২)
(শোকরিয়া, প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের রাজপথ গ্রন্থ)
এএইচ/